শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়কিশোররা জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে

কিশোররা জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে

ডেস্ক রিপোর্ট (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

কেস স্টাডি-১ : ২০১২ সালের ২৭ অক্টোবর নগরীর পলিটেকনিক প্রাইমারি স্কুল এলাকার পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে পাঁচ বন্ধুর হাতে ধর্ষণের শিকার হন ছাত্রী রিমা (ছদ্মনাম)। বন্ধু পিয়াস চাকমা (১৬) রিমাকে দাওয়াত খেতে নিয়ে গিয়ে ফেরার পথে বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। ওই পাহাড়ে পৌঁছার পর পিয়াসের বন্ধু খালেদ সামছু (১৭), আহমেদ ফজলে হাসান শাওন (১৬), সালমান জামান জয় (১৬) এবং ফাহাদ উদ্দিন পিউলের (১৬) হাতে ধর্ষণের শিকার হয় মেয়েটি।
কেস স্টাডি-২ : ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন খতিবের হাট এলাকায় প্রবাসীর স্ত্রী ডলি বেগম (৩০), তার শিশুপুত্র আলভি (১০) ও শিশুকন্যা পায়েলকে (৫) খুন করে গৃহশিক্ষক তারেক (১৮)। ঘটনার সময় তারেক কুলগাঁও সিটি কর্পোরেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
কেস স্টাডি-৩ : গত বছর নগরীর দেব পাহাড়ের একটি ফ্ল্যাটে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, হাতঘড়ি, ল্যাপটপসহ মোট ২৩ লাখ টাকা চুরির ঘটনা ঘটে। পুলিশ এই চুরির ঘটনায় বিভিন্ন স্কুলের ছয় শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে।
কেস স্টাডি-৪
চলতি বছরের মার্চ মাসে শুক্কুর নামের ১৬ বছরের এক কিশোরকে অস্ত্র আইনের মামলায় গ্রেফতার হয়। একই কিশোরকে গত বছর ৪ ফেব্রুয়ারি খুলশী থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। অন্যদিকে, গত বছর ১০ মে বায়েজিদ থানা এলাকা থেকে পুলিশ ছিনতাই মামলায় মোখলেস (১৬) এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় ডবলমুরিং থানা এলাকা থেকে ইউসুফ (১৬) নামের কিশোরকে গ্রেফতার করে।
কেস স্টাডি-৫ : চলতি বছরের ২৪ জুন সিআরবি এলাকায় রেলওয়ের টেন্ডার নিয়ে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষে দুই জন নিহতের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত গ্রেফতারকৃত ৫৩ জনের মধ্যে আট জনই কিশোর আসামি। এই আটজন কিশোর আসামির গ্রেফতার নিয়ে আসামিপক্ষের মধ্যে রয়েছে দ্বিপক্ষীয় বক্তব্য। কেউ কেউ গ্রেফতারকৃত কিশোরকে নির্দোষ বলে দাবি করছে। আবার গ্রেফতারকৃতদের কেউ কেউ ঘটনা পরবর্তী নেতাদের ডাকে মিছিলে অংশগ্রহণ করেছে-এমনটি বলেছেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, কিশোররা ধর্ষণ, হত্যা, চুরি-ছিনতাই, মাদকদ্রব্য, অস্ত্র বিক্রি ও বহনসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। স্বাভাবিকভাবে কিশোররা আইনি দৃষ্টির বাইরে থাকার কারণে এবং কিশোর অপরাধীদের ক্ষেত্রে আইনি নমনীয়তার সুযোগকে ব্যবহার করে মূল অপরাধচক্র কিশোরদেরকে ব্যবহার করছে। মনোবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীরা কিশোর অপরাধের জন্য দায়ী করছেন সামাজিক অবক্ষয় এবং বিদ্যমান সমাজ কাঠামোকে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. গাজী সালেহ উদ্দিন সুপ্রভাত বাংলাদেশকে বলেন, কিশোর অপরাধের পেছনে প্রথমত পরিবার দায়ী। অনেক পরিবারে মা-বাবা দুজনই চাকরিজীবী। এতে করে এসব পরিবারের সন্তানরা অভিভাবকহীন অবস্থায় বেড়ে উঠে। ফলে এই শিশু-কিশোররা সহজেই অপরাধ সংঘটন করে থাকে। দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশের দুর্নীতি কিশোর অপরাধের আরেকটি কারণ। দুর্নীতি দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। এতে করে কোমলমতি কিশোররাও দুর্নীতিকে সহজভাবে নিচ্ছে। বর্তমান সমাজ কাঠামোই মানুষকে অস্বাভাবিক আচরণ করতে বাধ্য করছে। তৃতীয়ত, আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষা ব্যবস্থার কারণেও শিশু-কিশোররা নানা অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম সুপ্রভাত বাংলাদেশকে বলেন, সামাজিক অবক্ষয়, পারিবারিক নানা অসংগতির কারণে কিশোররা নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাছাড়া কিশোরদের ক্ষেত্রে আইনি নমনীয়তার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণীর অপরাধচক্র শিশু-কিশোরদেরকে নানা অপরাধে ব্যবহার করছে। অপরাধী যেই হোক না কেন, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। তবে কিশোর অপরাধ দমনের জন্য সামাজিক সচেতনতা দরকার।’
জানা গেছে, সন্ত্রাসীরা টাকার প্রলোভন দেখিয়ে তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে বিত্তশালী পর্যায়ের কিশোরদেরকেও দলে ভিড়িয়ে নেয়। আবার বখাটে বন্ধুর পাল্লায় পড়েও অনেক কিশোর অপরাধ জগতে ঢুকে পড়ছে। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় অস্ত্র, মাদক পৌঁছে দেয়া, বিক্রি এবং নির্দেশ মতো অস্ত্রের ব্যবহারেও আস্তে আস্তে এসব কিশোর সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠছে। আবার চুরি, ছিনতাই চক্রও কিশোরদেরকে ব্যবহার করছে।
আইনি নমনীয়তার সুযোগকে কাজে লাগিয়েও মূল অপরাধীরা কিশোরদের ব্যবহার করছে। শিশু আইনে বিচারের আগে ও পরে শিশু-কিশোরদের কারাগারে রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪৯৭ (১) অনুযায়ী, ‘১৬ বছরের নিচে যে কোন ছেলে বা মেয়েকে আদালতে জামিন দিতে পারেন। এমনকি সে যদি জামিন অযোগ্য অপরাধের অপরাধীও হয়।’ একই আইনের ৪৮ ধারায় বলা হয়েছে, যে ক্ষেত্রে ১৬ বছরের কম বয়সী কেউ কোনো জামিন অযোগ্য অপরাধের কারণে গ্রেফতার হয়েছে এবং যদি সে মুহূর্তেই শিশু বা কিশোরটিকে আদালতে পাঠানো সম্ভব না হয়, তবে সে ক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা তাকে জামিন দিতে পারেন।’
সরকারি হিসাব অনুসারেই দেশে ভাসমান পথশিশুর সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ৪ লাখ। বাকিরা অন্যান্য জেলা শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তবে বিএডিসি’র পরিসংখ্যান মতে সারাদেশে ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৮ জন পথশিশু রয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকায় রয়েছে প্রায় ৩ লাখ। পরিসংখ্যানে আরো বলা হয়, ২০১৪ সাল নাগাদ পথশিশুর এ সংখ্যা ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৫৪ জনে পৌঁছতে পারে।

বৈধতার জন্য আবেদন ৬০টি!নিজস্ব প্রতিবেদক গ্ধ
শুরু হয়ে গেছে গ্যাসের বর্ধিত সংযোগ দেয়ার কাজ এবং আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে শুরু হতে পারে গ্যাসের নতুন সংযোগের কাজও। ইতিমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কয়েকটি ভবনে বার্নার সংযোগ লাইন বর্ধিতকরণের কাজ শুরু হয়ে গেছে বলে কর্ণফুলী গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড (কেজিডিসিএল) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এদিকে গত বৃহস্পতিবারের মধ্যে অবৈধ সংযোগকারীদের বৈধ হওয়ার আবেদনের সুযোগ দেয়া হলেও চট্টগ্রাম অঞ্চলের মাত্র ৬০ অবৈধ সংযোগকারী বৈধ হওয়ার আবেদন করেছে।
ইতিমধ্যে গ্যাসের বর্ধিত সংযোগ দেয়ার কাজ শুরু হয়ে গেছে জানিয়ে কেজিডিসিএল’র মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) প্রকৌশলী ফিরোজ আলম সুপ্রভাত বাংলাদেশকে বলেন, ‘বার্নার বৃদ্ধির আবেদনের প্রেক্ষিতে সংযোগ দেয়া শুরু হয়েছে।‘
কী পরিমাণ সংযোগ দেয়া হয়েছে এ প্রশ্নের জবাবে ফিরোজ আলম বলেন, ‘প্রায় অর্ধশত বার্নার সংযোগ দেয়া হয়ে গেছে সম্ভবত। সংযোগের অপেক্ষায় বিভিন্ন ধাপে রয়েছে আরও প্রায় পাঁচ শতাধিক আবেদন।’
এদিকে ১৮ হাজারের বেশি আবেদনকারী ২০০৭ সালে টাকা জমা দিয়ে রাখলেও এখনও গ্যাসের সংযোগ পায়নি। এখন নতুন করে আবেদন করেছে আরও প্রায় পাঁচ হাজার গ্রাহক। নতুন এসব গ্রাহকদের কবে সংযোগ দেয়া হবে এ প্রশ্নের জবাবে ফিরোজ আলম বলেন, ‘ইতিমধ্যে রাইজার উত্তোলনের জন্য ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত হয়ে আছে। আগামী মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া শুরু হতে পারে।’
অপরদিকে অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীদের মধ্যে মাত্র ৬০ জন আবেদন করায় বাকিদের বিরুদ্ধে কবে নাগাদ ব্যবস্থা নেয়া হবে তা নিয়ে কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ জানায়, শিগগিরই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য স্থায়ী গ্যাস সংযোগের দাবি জানিয়ে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ গ্রাহক সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নেছার আহমেদ বলেন, ‘চট্টগ্রামে স্বাভাবিক গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। নগরের কোথাও গ্যাস থাকবে কোথাও থাকবে না তা হতে পারে না।’
কেজিডিসিএল সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে প্রতিদিন ২২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও চট্টগ্রামের সাঙ্গু, খাগড়াছড়ির সেমুতাংয়ে মাত্র ১২ থেকে ১৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হয়, বাকি ২০৭ থেকে ২০৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রতিদিন জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ করা হয়। এখন নতুন করে ১৮ হাজার গ্রাহককে গ্যাস সংযোগ দেয়া হলে নগরীতে গ্যাসের চাহিদা আরো বাড়বে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২১ জুলাই শিল্প ও বাণিজ্যিক এবং ২০১০ সালের ১৩ জুলাই থেকে আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস-সংযোগ দেয়া বন্ধ করা হয় । গত ৭মে প্রধানমন্ত্রীর আবাসিক গ্যাস সংযোগ দেয়ার ঘোষণার পর চাহিদার তুলনায় ঘাটতি থাকার পরও সংযোগ দিতে যাচ্ছে গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা পেট্রোবাংলা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ