ডেস্ক রিপোর্ট (বিডি সময় ২৪ ডটকম)
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসি-তে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য এ অভিযোগে করেছে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভলেপমেন্ট ফর বাংলাদেশ এবং গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি বাংলাদেশী আমেরিকানরা।
সংগঠন দু’টির পক্ষে মারটিন এফ ম্যাকমহন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস গতকাল (বৃহস্পতিবার) অভিযোগ দায়ের করে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর জন্য গতকাল বিকেলে ওয়াশিংটন ডিসি ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবে অ্যাটর্নি মারটিন এফ ম্যাকমহন সাংবাদ সম্মেলন করেন। তাকে সহযোগিতা করেন ওলিভার টডিল ও মুয়াজ রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে মারটিন এফ ম্যাকমহন মানবাধিকার লংঘনে সম্পৃক্ততার অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করেন। মামলায় মোট ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদসহ নয় জনকে আসামি করা হয়েছে। ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ হিসেবে বাকি আসামিরা হলেন- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার, র্যাবের মহাপরিচালক মোকলেসুর রহমান ও বিজিবি’র মহাপরিচালক আজিজ আহমেদ।
বাকিরা হলেন ঢাকা মেট্রো পলিটন পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমেদ, চট্রগ্রামের পাঁচলাইশ থানার ওসি প্রদ্বীপ কুমার, ডিএমপি মতিঝিল জোনের এসি মেহেদী হাসান, ডিএমপি লালবাগ বিভাগের ডিসি হারুন অর রশিদ, মিরপুর মডেল থানার ওসি সালাউদ্দিন, গোয়েন্দা বিভাগের এডিসি মশিউর রহমান, দারুস সলাম থানার ওসি খলিলুর রহমান, কাফরুল থানার ওসি আব্দুল লতিফ, কাফরুল থানার সাব ইনেসপেক্টর আশিক, যাত্রা বাড়ী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদাজ্জামান নূর, শহিদুল ইসলাম, এম এম মোস্তাফিজুর রহমান ও হারুন রশিদ, পাবলিক প্রসিকিউটর সাজ্জাদুল হক শিহাব ও আসলাম।
সাংবাদ সম্মেলনে মারটিন উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আসছে। বাংলাদেশে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ বাংলাদেশী মিডিয়াসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, বিভিন্ন মানবাধিকার এবং এনজিও সংস্থার রিপোর্টে রয়েছে।”
অ্যাটর্নি মারটিন বলেন, “অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে রাষ্ট্রের চাপে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র হুমকির মুখে আছে। গত কয়েক মাস যাবত রাষ্ট্রীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত বেসামরিক মানুষ হত্যা, হয়রানি এবং গ্রেফতার ও অত্যাচার করা হচ্ছে।”
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ৫-৬ মে’র হত্যাকাণ্ডসহ দৈনিক আমার দেশ’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে নির্যাতন, হেফাজতে ইসলামের নেতা আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ও ছাত্রনেতা দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার ও নির্যাতন, বিরোধীদলীয় নেতা ইলিয়াস আলী গুম, শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যা, ছাত্রনেতা মোহাম্মদ ফিরোজ খান ও আনোয়ারুল ইসলাম মাসুম পুলিশ কর্তৃক নির্যাতনের শিকার এবং আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী নিখোঁজ ও কলকাতায় আটক থাকার ঘটনা তুলে ধরেন।
মারটিন দাবি করেন, বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে বাংলাদেশ পুলিশসহ র্যাব, বিজিবি এবং ডিজিএফআইসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আসছে।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়েছে- বাংলাদেশে ২০০৯ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যা ১৫৪ জন, ’১০ সালের ১২৭ জন, ’১১ সালে ৮৪ জন ও ’১২ সালে ৭০ জন। ২০০৯ সালে বন্দি অবস্থায় মৃত্যু ৫০ জন, ’১০ সালে ৬০ জন, ’১১ সালে ১০৫ জন, ’১২ সালে ৬৩ জন। ২০০৯ সালে গুম হয়েছেন ৩ জন, ’১০ সালে ১৮ জন, ’১১ সালে ৩০ জন এবং ’১২ সালে ২৪ জন।
২০০৯ সালে নির্যাতনে আহত ও নিহত হয়েছেন ৮৯ জন, ’১০ সালে ৬৭, ’১১ সালে ৪৬, ’১২ সালে ৭২ জন। সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার ২০০৯ সালে ২২১ জন, ’১০ সালে ২৩১ জন, ’১১ সালে ২৫৯ জন, ’১২ সালে ২৮৯ জন।
রাজনৈতিক হত্যার শিকার ২০০৯ সালে ২৫১ জন, ’১০ সালে ২২০ জন, ’১১ সালে ১৩৫ জন ও ’১২ সালে ১৬৯ জন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি মারটিন বলেন, “আন্তর্জাতিক আদালতে আমরা অভিযোগটি দাখিল করেছি। আমরা আশা করছি আসিসি অভিযোগগুলো তদন্ত করে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্তভাবে মামলাটি গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দ্রুত প্রদক্ষেপ নেবে।”