জান থাকতে গ্রামীণ ব্যাংক কেড়ে নিতে দেওয়া হবে না বলে কঠোরভাবে হুঁশিয়ারি করে দিয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের নির্বাচিত পরিচালক পর্ষদের সদস্যরা।
তাদের হুঁশিয়ারি- তাদের সম্পদ কেড়ে নেয়ার দুষ্ট বুদ্ধি থেকে সরে আসতে হবে সরকারকে। টুকরো করে একে ভেঙে ফেলার চেষ্টা সফল হতে দেবেন না ব্যাংকের সদস্যরা। প্রয়োজনে গ্রামীণ ব্যাংকের ৮৪ লাখ সদস্য ঢাকায় এসে সমেবত হবেন।
সোমবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সরকারকে এ সতর্ক বার্তা দেন গ্রামীণ ব্যাংকের নির্বাচিত পরিচালকবৃন্দ।
গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালকরা বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক আমাদের ব্যাংক। গ্রামীণ ব্যাংক কেড়ে নিতে দেবো না। আমাদের ব্যাংক আমাদের মতো চলবে, ব্যাংকের বর্তমান যে আইন আছে সে আইনে চলবে। এর পরিবর্তন আমরা করতে দেবো না। আইন পরিবর্তনের নামে আমাদের ব্যাংক সরকারের নামে লিখে নেয়ার চেষ্টা সফল হতে দেবো না। টুকরো টুকরো করে একে ভেঙে ফেলার চেষ্টাও আমরা সফল হতে দেবো না।
গ্রামীণ ব্যাংকের ভাবিষ্যৎ কাঠামো নিয়ে সরকার গঠিত গ্রামীণ ব্যাংক কমিশনের সুপারিশ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে নির্বাচিত বোর্ড সদস্যদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পর্ষদের অন্যতম সদস্য তাহসিনা খাতুন।
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা আপনাদের ভুল থেকে সরে আসুন। দেশের মানুষ, দুনিয়ার মানুষ আমাদের পক্ষে আছে। ন্যায় বিচার আমাদের পক্ষে আছে। আপনারা শান্তিতে থাকুন, আমাদেরও শান্তিতে থাকতে দিন। আমাদের ঘাটাবেন না।
আমরা ৮৪ লাখ নারী, সঙ্গে আছে আমাদের পরিবার। আমাদের শক্তিকে ছোট করে দেখবেন না। আপনাদেরকে সতর্ক করে দেবার জন্য এবার আপনাদের সামনে এসেছি। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়ে দেবেন না। যদি দেন, আমাদের সামনে আর কোনো পথ থাকবে না। আমাদের প্রাণপ্রিয় প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেবেন এটা আমরা কিছুতেই হতে দেবো না।
তিনি বলেন, সরকারের কেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতি এতো লোভ? সরকার গ্রামীণ ব্যাংকের মতো নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারে না কেন? সেটিকে দিয়ে নোবেল পুরস্কারের চেষ্টা করুক। তাদের সোনালী, জনতা, অগ্রণী ব্যাংক রয়েছে সেগুলোর কি দুরবস্থা। সেগুলো তারা না চালাতে পারলে আমাদের হাতে দিয়ে দিক। আমারা সেগুলো চালিয়ে নেব। আমরা দুর্নীতি করিনা, চিন্তাও করি না।
কলমের খোঁচায় দেশের ৮৪ লাখ নারীর সম্পদ গ্রামীণ ব্যাংক কেড়ে নেয়ার অপচেষ্টা রোধে ঢাকায় সবাই সমবেত হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তাহসিনা খাতুন। প্রয়োজনে স্বামী-সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে আসবেন এবং দেশের অন্যান্য নারীদের তাদের সঙ্গে যোগ দেয়ার আহ্বান জানাবেন বলে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন তিনি।
গ্রামীণ ব্যাংকের এ নারী পরিচালক আশাবাদী যে গ্রামীণ ব্যাংক রক্ষার আন্দোলনে সারা বিশ্বের নারী সমাজকেও পাশে পাবেন তারা। গ্রামীণ ব্যাংক তদন্ত কমিশন গ্রামীণ ব্যাংকের আইন কাঠামো পরিবর্তনের যে সুপারিশ করেছে তাতে পরিচালক পর্ষদ অবাক ও প্রচণ্ডভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি অভিযোগ করেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই তদন্ত কমিশন গ্রামীণ ব্যাংক ভাগ-বাটোয়ারা করে দিচ্ছে।
গ্রামীণ ব্যাংক ভাঙার পেছনে সরকারি মতলব নিজেদের কাছে অস্পষ্ট উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংকের টাকা আমাদের সঞ্চয়ের টাকা। আমাদের সঞ্চয়ের টাকা সরকারের লোকজন এসে লুটপাট করে নিয়ে যাক এটা আমরা জান থাকতে হতে দেবো না। আমরা তিল তিল করে টাকা জমিয়ে এ ব্যাংক বানিয়েছি। বছরের পর বছর প্রতি সপ্তাহে মিটিং করে কষ্ট করে টাকা জমিয়ে এ ব্যাংক তৈরি করেছি। আপনারা কলমের এক খোঁচায় আমদের ব্যাংক সরকারের লুটেরাদের হাতে তুলে দেবেন এটি আমরা মেনে নেবো মনে করেছেন?
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আপনারা মনে হয় জানেন না গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের গরীব মহিলাদের জাগিয়ে দিয়েছে। আমরা গরীব নারীরা এখন জেগে উঠেছি। বাংলাদেশের জেগে ওঠা নারীদের ক্ষমতা আপনারা এখনো দেখেননি। আমাদের সম্পদ যদি ছিনিয়ে নিতে আসেন তখন আমাদের ক্ষমতা আপনারা ভালভাবে দেখবেন।
কমিশন গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারি শেয়ার ৫১ শতাংশ করার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয় বলেও তাহসিনা খাতুন তার লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণ পরিচালক পর্ষদের নির্বাচিত অন্যান্য সদস্যরা ও প্রাক্তন পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।