রবিবার, মে ১৯, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়নিজামীর মৃত্যুদণ্ড

নিজামীর মৃত্যুদণ্ড

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তিনি একাত্তরের কুখ্যাত গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ আজ বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফায় এই মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। রায় ঘোষণা উপলক্ষে নিজামীকে আজ সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ জন্য গতকাল সন্ধ্যায় তাঁকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়।

ট্রাইব্যুনালে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলোর মধ্যে এ পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলেছে নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার বিচার কার্যক্রম। এর রায়ও অপেক্ষমাণ ছিল সবচেয়ে দীর্ঘ সময়।  গত বছরের ১৩ নভেম্বর প্রথম দফায় এ মামলার কার্যক্রম শেষে যেকোনো দিন রায় ঘোষণা করা হবে বলে জানান ট্রাইব্যুনাল। সেই থেকে এই রায়ের জন্য অপেক্ষার শুরু। রায় ঘোষণার আগেই ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যান ট্রাইব্যুনাল-১-এর তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর। এর ৫৩ দিন পর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে এই ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনাল দ্বিতীয় দফায় মামলার সমাপনী যুক্তি শোনেন। ২৪ মার্চ মামলাটি দ্বিতীয় দফায় রায়ের অপেক্ষায় (সিএভি-কেস অ্যায়োটিং ভারডিক্ট) রাখা হয়। এর তিন মাস পর ২৪ জুন রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়।

কিন্তু রায় ঘোষণার দিন সকালে কারাগারে আটক নিজামী হঠাৎ ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েন। কারা কর্তৃপক্ষ ট্রাইব্যুনালকে জানায়, তাঁকে হাজির করা সম্ভব নয়। ট্রাইব্যুনাল বলেন, আসামির অনুপস্থিতিতে রায় ঘোষণা যুক্তিসংগত নয়। এ জন্য মামলাটি আবারও রায়ের অপেক্ষায় রাখা হয়। ট্রাইব্যুনাল বলেছিলেন, আসামি সুস্থ হয়ে উঠলে যত দ্রুত সম্ভব রায় ঘোষণা করা হবে।
৩ জুলাই নিজামীর সুস্থতার প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে পাঠায় কারা কর্তৃপক্ষ। এর প্রায় চার মাস পর গতকাল দ্বিতীয় দফায় এই রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়। আজ রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হলো।

২০১২ সালের ২৮ মে ১৬টি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই মামলায় নিজামীর বিচার শুরু হয়। প্রায় দেড় বছর ধরে সাক্ষ্য গ্রহণ চলে। এই মামলার দীর্ঘসূত্রতার অন্যতম কারণ, একই সময়ে চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলারও বিচার চলছিল। এ জন্য ওই মামলার অন্যতম আসামি নিজামীকে সপ্তাহে দুই দিন চট্টগ্রামে নেওয়ায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার কার্যক্রম ব্যাহত হয়। গত ৩০ জানুয়ারি ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায়ে নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের দাবি: মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে নিজামীর সর্বোচ্চ সাজা আশা করে রাষ্ট্রপক্ষ। নিজামীর বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ প্রভৃতি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করার দাবি করেন তাঁরা। একই সঙ্গে এসব অপরাধ সংঘটনে নিজামীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃত্বের দায়ও প্রমাণিত হয়েছে বলে দাবি করে রাষ্ট্রপক্ষ। পক্ষান্তরে আসামিপক্ষ দাবি করে, মিথ্যা তথ্য ও ভুয়া সাক্ষীর সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা এসব অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারেনি। এ জন্য নিজামীকে খালাস দেওয়া উচিত।

  • বিষয়:
  • top
আরও পড়ুন

সর্বশেষ