শনিবার, মে ১৮, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়সিএনজি’র দাম অকটেন-ডিজেলের পর্যায়ে নেওয়ার সুপারিশ

সিএনজি’র দাম অকটেন-ডিজেলের পর্যায়ে নেওয়ার সুপারিশ

সিএনজি’র (কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস) দাম বৃদ্ধি করে অকটেন-ডিজেলের পর্যায়ে নেওয়ার সুপারিশ করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। একই সঙ্গে আবাসিক খাতে এলপিজি (তরলায়িত প্রাকৃতিক গ্যাস) ব্যবহার বাড়াতে ভর্তুকি দেওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছে কমিটি। সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকের কার্যপত্রে প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলা হয়, ২০০৪ সালে যানবাহনে সিএনজি গ্যাসের ব্যবহার করতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। ওই সিদ্ধান্তের ফলে রাজধানীর বায়ু দূষণ রোধ হলেও বেড়েছে গাড়ির ব্যবহার। যে কারণে সড়কগুলোর ওপর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত সময়ে মহাজোট সরকার দু’দফায় সিএনজি গ্যাসের দাম বাড়ালেও বিকল্প জ্বালানির (পেট্রোল-অকটেন) পর্যায়ে তা পৌঁছেনি। যে কারণে সিএনজি গ্যাস চালিত গাড়ির মালিকরা জ্বালানি সাশ্রয়ে আগ্রহী হচ্ছে না। এতে মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ অপচয় বাড়ছে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে সিএনজি গ্যাসের দাম ডিজেল ও অকটেনের সমতুল্য করা প্রয়োজন বলে সুপারিশ করে কমিটি।

আবাসিকেও গ্যাসের অপচয় হচ্ছে বলে বৈঠকে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, দেশে একশ’ ১১ উপজেলায় ২৮ লাখ তিন হাজার একশ’ ৮৪টি সংযোগ রয়েছে। যাতে মোট উৎপাদিত গ্যাসের ১১ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে। আবাসিক খাতে গ্যাসের অপচয় রোধে জনগণ এগিয়ে আসছে না। অনেক ক্ষেত্রেই কাপড় শুকানোর জন্য চুলা ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি ম্যাচের কাঠি বাঁচাতে সারাদিন গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখা হচ্ছে। এতে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের অপচয় হচ্ছে। প্রতিবেশি দেশের উদাহরণ টেনে বৈঠকে বলা হয়, সেখানে পাইপ লাইনে গ্যাসের পরিবর্তে সিলিন্ডারে এলপিজির ব্যবহার অনেক বেশি। বাংলাদেশেও এলপিজির ব্যবহার বাড়ানো উচিত।

এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটি গ্যাসের দাম বাড়িয়ে এলপিজির সমান করার পক্ষে একমত হয়েছে। একই সঙ্গে এলপিজির ব্যবহার বাড়াতে দাম কমানোর জন্য ভর্তুকি দেওয়ার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

অপরদিকে সারাদেশে পাঁচ হাজার ৮৩০টি শিল্পে গ্যাস সংযোগ রয়েছে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ১৭ শতাংশ গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে। এক্ষেত্রেও অদক্ষ যন্ত্রপাতি অর্থাৎ বয়লার ব্যবহারের ফলে গ্যাসের অপচয় বাড়ছে। বিশেষ করে রি-রোলিং মিল, বোতল ও সিরামিক শিল্পে গ্যাসের ব্যবহার ও অপচয় বেশি হচ্ছে বলে বৈঠকে আলোচনা হয়।

বৈঠকে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জরিপ রিপোর্ট তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, কোম্পানিটি ২০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপ করেছে। তাতে দেখা যায়, প্যাকেজ বয়লারের তাপীয় দক্ষতা ৮২-৮৭ শতাংশ থাকার কথা। কিন্তু রয়েছে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ। রি-রোলিং মিলে ব্যবহৃত ফার্নেসের তাপীয় দক্ষতা রয়েছে ৭-১৫ শতাংশ। উন্নত প্রযুক্তির ফার্নেস ব্যবহার করে তাপীয় দক্ষতা ৬৫ শতাংশে উন্নীত করা গেলে গ্যাসের অপচয় কমবে।

ওই সর্ভের পর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে এ বিষয়ে সুপারিশসহ প্রেরণ করা হয়। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে সাশ্রয়ী বয়লার ব্যবহারের জন্য আদেশ জারি করা হয়। কিছু গ্রাহক সুপারিশ বাস্তবায়ন করলেও সামগ্রিকভাবে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি।  এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে সংসদীয় কমিটি ৭ দফায় করণীয় নির্ধারণ করেছে। এতে জ্বালানি সাশ্রয় নীতিমালা ও আইন প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া জ্বালানি সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহারকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানকে কর অবকাশ, আর্থিক প্রনোদনা ও সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের পক্ষে মত দিয়েছে। অন্যদিকে জ্বালানি অপচয়কারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কার্বন ট্যাক্স আরোপ করার কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংসদীয় কমিটির একাধিক সদস্য। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর  বলেন, গ্যাস অপচয় হওয়ার বিষয়টি একাধিক জরিপে উঠে এসেছে।

তিনি বলেন, কম দামে কিছু পেলে তার গুরুত্ব থাকে না। তেমনি কম দামে গ্যাস পাওয়ায় অনেকে তা অপচয় করছেন। উল্টো দিকে অনেক বেশি দামে এলপিজি কিনতে হচ্ছে জনগণকে। যে কারণে অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন না। এলপিজি ও পাইপ লাইনের গ্যাসের দাম সমন্বয়ের বিষয়ে অনেক আগে থেকেই আলোচনা হচ্ছে।

  • বিষয়:
  • top
আরও পড়ুন

সর্বশেষ