জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে সরকারের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি সুস্থ জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত—সব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের ৩২তম সভা এবং আঞ্চলিক কমিটির ৬৭তম বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার জন্যই দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, জেন্ডার সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং পরিকল্পিত পরিবার নিশ্চিত করতে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি।’ একটি সুস্থ জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার সার্বিক কাজ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হলে সন্তানও স্বাস্থ্যবান হয়। এভাবেই সুস্থ জাতি গঠনের পথ প্রশস্ত হয়। তাই নারী ও শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য এবং জীবনমান সহায়ক নানামুখী সেবা ও সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে সরকার।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার বিষয়ে সরকারের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা নিম্ন আয়ের জনগণের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। ফলে দারিদ্র্যের হার ২০০৫ সালের ৪০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে নেমে এসেছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের অর্জন গ্রামাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় বর্তমানে ১৩ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। এসব ক্লিনিকে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়েছে। রোগীদের বিনা মূল্যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। এগুলো সরকারের অর্জন।
বাংলাদেশে পোলিও ও কুষ্ঠরোগ নির্মূল হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, অ্যানথ্রাক্স, নিপাহ, ডেঙ্গু ইত্যাদি সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে কাজ চলছে। দেশজুড়ে একটি ব্যাপক-ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। ই-হেলথ ও টেলিমেডিসিন সেবা চালুর কথাও বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর্মী, প্রাইমারি, সেকেন্ডারি, টারসিয়ারি ও বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং উভয়মুখী রেফারেল পদ্ধতি প্রবর্তন করেছি, যা বিশ্বে অনন্য। এ জন্য বাংলাদেশ ২০১১ সালে সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর স্বাস্থ্য ও সামাজিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নেওয়ার বিষয়ও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি গতিশীল ওষুধশিল্প গড়ে উঠেছে। দেশে ওষুধের মোট চাহিদার ৯৭ শতাংশই দেশীয় উত্পাদন থেকে মেটানো হচ্ছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ৮৭টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে ওই মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এম নিয়াজউদ্দিন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক মার্গারেট চ্যান, ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক প্রতিনিধি পুনম ক্ষেত্রপাল সিং বক্তব্য দেন।