শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪
প্রচ্ছদআরো খবর......ফাঁসি তো দেবেনই, পরোয়া করি না : সালাউদ্দিন কাদের

ফাঁসি তো দেবেনই, পরোয়া করি না : সালাউদ্দিন কাদের

sakaমানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ কে উদ্দেশ করে বলেছেন, “আমাকে ফাঁসিতো আপনারা দেবেনই, কিন্তু আমি পরোয়া করি না।”
সোমবার নিজের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। তিনি আরও বলেন, “আমার বিচার হচ্ছে উত্তরাধিকার সূত্রে। তাই আমার চাচা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আমার বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরীর সম্পর্কও আমি আমার সাক্ষ্যে আনতে চাই। কে বঙ্গবন্ধু আর কে ফজলুল কাদের চৌধুরী- সেটাও আনতে চাই।” বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হকের দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর উপস্থিত ছিলেন না। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ রিমন আর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে ছিলেন তার দুই আইনজীবী অ্যাডভোকেট এএইচএম আহসানুল হক হেনা ও ব্যা রিস্টার ফখরুল ইসলাম।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে তিনি নিজেসহ ৫ জন সাক্ষী সাফাই সাক্ষ্য দেবেন বলে নির্ধারণ করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। সোমবার প্রথম সাফাই সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেছেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। সাক্ষ্যগ্রহণ অসমাপ্ত অবস্থায় মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতবি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। সাক্ষ্য দেওয়ার আগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে তার দুই আইনজীবী অ্যাডভোকেট এএইচএম আহসানুল হক হেনা ও ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামকে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় এক ঘণ্টা সাক্ষাতের অনুমতিও দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
ইংরেজিতে দেওয়া প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টার সাক্ষ্যের মধ্যে সোয়া এক ঘণ্টাই নিজের বংশ পরিচয় তুলে ধরেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। সাক্ষ্য শুরুর আগে নিয়ম অনুসারে আদালতে শপথ নিতেও অস্বীকৃতি জানান তিনি। এ সময় তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন, “আমি একজন সংসদ সদস্য। আমি কেন এখানে শপথ নেবো?।” পরে শপথ ছাড়াই সাক্ষ্য দিতে শুরু করেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার সাক্ষ্যে বলেন, স্বাধীনতার পরে মাত্র তিন মাসের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু ভারতীয় সৈন্যদের ফেরত পাঠিয়েছেন। এ সময় তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে জার্মানির উদাহরণ দেন।
বার বার ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের জন্য দ্বিজাতি তত্ত্বের কথা উল্লেখ করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাক্ষ্যের এক পর্যায়ে ট্রাইবুনালকে উদ্দেশ করে বলেন, “আপনারা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন। দ্বিজাতি তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করেই যদি বাংলাদেশের জন্ম হয়, তবে এদেশের সংবিধান রক্ষা করাও আপনাদের কর্তব্য। আপনারা সংবিধান রক্ষা করেই বিচার করবেন।”
এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলের সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে বলেন, “আমরা আপনাকে সুযোগ দেওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি। অনেক বেশি কথা বলার অভ্যাস আপনার রয়েছে। কারণ, আপনি অনেক বেশি জানেন। দয়া করে উত্তেজিত হবেন না।”
এ সময় উত্তেজনার জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমাও চান সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
তবে অভিযোগের সঙ্গে সম্পর্কহীন ও অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে দীর্ঘ সাক্ষ্য দানের জন্য বার বার আপত্তি জানান প্রসিকিউশন। প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ রিমন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর ৫১ ধারা তুলে ধরে বলেন, “চার্জ (অভিযোগ) গঠনের সময় তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেসব অভিযোগের বাইরে অপ্রাসঙ্গিক কোনো সাক্ষ্য দিতে পারেন না তিনি। অভিযোগের বাইরে কোনো বিষয়ে তিনি সাক্ষ্য দিতে পারেন কিনা বা এ সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন কিনা তা ট্রাইব্যুনালের ভেবে দেখা উচিত।”
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে গত বছরের ১৪ মে থেকে গত ১৩ জুন পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম ঘটনা ও জব্দ তালিকার সাক্ষী মিলিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের ৪১ জন সাক্ষী। আর ৪ জন সাক্ষীর তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া জবানবন্দিকেই সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ