বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে প্রতিবেদন ছেপেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক জনপ্রিয় পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান। মঙ্গলবার ‘ভাইয়লান্স অ্যান্ড প্রটেস্ট কুড ডিরেইল বাংলাদেশ ইলেকশনস শিরোনামের প্রতিবেদনটি বলা হয়েছে, ‘সহিংসতা আর প্রতিবাদে বছরের শেষে নির্বাচন বিঘ্নিত হতে পারে বলে বাংলাদেশে আশঙ্কা বিরাজ করছে। যদিও নির্বাচন হওয়ার ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দৃঢ় প্রত্যয়ী এবং নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে তারা আশা প্রকাশ করেন’।
পত্রিকাটি জানিয়েছে, গত মাসে বাংলাদেশে সহিংসতা আর সামনের মাসে বিরোধীদের প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে অনেকে শঙ্কিত যে দেশটি নির্বাচনী সহিংসতার মধ্যে পড়বে।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এখনও সমঝোতা না হওয়ায় এ আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।
পত্রিকাটি উল্লেখ করে, ছয় বছর আগে সহিংসতা আর প্রতিবাদের কারণে নির্বাচন স্থগিত ও অবশেষে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। ক্ষমতায় আসে সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাধায়ক সরকার।
পত্রিকাটি জানায়, যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত বলে অভিযোগ রয়েছে। রায়কে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে ৭০ জনের বেশি নিহত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেছেন, তারা আসন্ন নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। যুদ্ধাপরাধের ব্যাপারে তিনি বলেন, “ট্রাইবুনালে রায় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করেছে।” যথাসময়ে সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান রিজভী। তবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি ব্যাপারটি অমীমাংসিতই রয়ে গেছে।
রিজভী তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে জানান, মেয়াদ শেষ হলে সরকারের সব নির্বাহী কর্তৃত্ব নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে এবং স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে জন্য যা করতে হয় তা করবে নির্বাচন কমিশন।
বিএনপির এক নেতা গার্ডিয়ানকে জানান, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের চালাকি বুঝে ফেলেছে বিএনপি। ‘এক দলীয় নির্বাচনে’র মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকতে নির্বাচনে যেন বিএনপি অংশ না নেন সে চেষ্টা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনরা বরাবরই পরাজিত হয়। সরকার জানে তারা (নির্বাচনে) হারবে এবং ক্ষমতায় থাকার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।”
বাংলাদেশে ইসলামি দলগুলোর ভূমিকা, চলমান যুদ্ধপরাধের বিচার এবং তরুণ ভোটারদের দলীয় রাজনীতির প্রতি উদাসীনতা – এই তিনটি বিষয় পরস্পরের সঙ্গে একসূত্রে গাঁথা বলে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
গার্ডিয়ান জানিয়েছে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার শেষে ও রমজানের আগে মাঠে নামার কথা রয়েছে বিএনপির। ওই সময় বিএনপি নিজের শক্তি প্রদর্শন করবে। শরতে সরকার পতনের প্রকৃত আন্দোলনে নামবে দলটি।
এছাড়া হেফাজতের ইসলামের আন্দোলন এবং শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের প্রসঙ্গও উঠে আসে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে।