বুধবার, মে ১৫, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়মহাভাবনায় মহাজোট

মহাভাবনায় মহাজোট

চার সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফল নিয়ে কৌশলী প্রতিক্রিয়া জানালেও কার্যত মহাভাবনায় পড়েছে মহাজোট। নির্বাচনের ফলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, ১৪ দল ও সরকারের শরিক জাতীয়   
পার্টিতে। নির্বাচনের ৬ মাস আগে চারটি সিটি করপোরেশনে সরকার-সমর্থিত প্রার্থীদের শোচনীয় পরাজয়ে আগামী নির্বাচনের ভোটের হিসাব নিয়ে নতুন অঙ্ক কষছেন মহাজোটের শরিকরা। হতাশা ভর করেছে সংসদ সদস্য ও দলীয় নেতাদের মাঝে। হতাশ তৃণমূলের কর্মীরা। সিটি নির্বাচনের ফলে আগামী নির্বাচনের জন্য দৃশ্যত একটি বার্তা দিয়েছে বলেও মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা। নির্বাচনের ফলকে দল এবং সরকারের জন্য সতর্কবার্তা বলে মনে করছেন অনেক নেতা। যদিও গতকাল জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চার সিটিতে জনগণ ও গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের বিগত সাড়ে চার বছরের কর্মকাণ্ড, দল ও সরকারের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে সাধারণ জনগণের মধ্যে পুঞ্জীভূত যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে নির্বাচনে। এছাড়া হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের বিরুদ্ধে সরকারের একটি অংশের অতিউৎসাহে দমনমূলক ব্যবস্থা নেয়ায় বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে নির্বাচনে। যদিও সরকারি দলের নেতাদের মূল্যায়ন সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন করে প্রমাণ করেছে নির্বাচিত সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব। চার সিটিতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে তা প্রমাণ হয়েছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একথা বলেছেন। তবে সরকারি দলের নেতারা নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নিজেদের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। এ নির্বাচনের ফল জাতীয় নির্বাচনের ফলের একটি আভাস বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নির্বাচনের রাতেই ফেসবুকে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান। গতকাল সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সিটি নির্বাচনের ফল সরকারের জন্য সতর্ক সঙ্কেত। চার সিটি করপোরেশনে নবনির্বাচিত বিরোধী দল-সমর্থিত মেয়রদের অভিনন্দন জানিয়ে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা পরাজিত হয়েছেন তাদের জন্য এটা ‘ওয়েক-আপ কল’। আগামী নির্বাচনে এর রেশ থাকবে এবং সতর্কবার্তা হবে। এ ফলাফল থেকে শিক্ষা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলকে ভুল সংশোধনের পথ খুঁজতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ নির্বাচন সরকারের জনপ্রিয়তা হারানোর প্রমাণ বলে মনে করেন কিনা- জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমেরিকার নির্বাচনের চার মাস আগে ওবামার জনপ্রিয়তা কম ছিল, আমাদের এখনও পাঁচ মাস সময় রয়েছে। তবে তিনি বলেন, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নজির স্থাপিত হয়েছে। বিরোধী দল চায়, নির্বাচন নিরপেক্ষ হোক। নির্বাচন কমিশন যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, স্বাধীন ও কৃতিত্বপূর্ণ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন হবে, এতে আপত্তি থাকার কথা নয়।
গতকাল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিত-ও তার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, সিটি নির্বাচনের ফল সরকারের জন্য অশনি সঙ্কেত। আগামী নির্বাচনের জন্যও এটি অশনি সঙ্কেত। তিনি বলেন, সরকার সিটি করপোরেশনগুলোতে যে উন্নয়ন করেছে সিটি নির্বাচনে এর কোন প্রভাব পড়েনি। তাই এসব সমস্যা নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। সূত্র জানায়, সিটি নির্বাচনের ফল নিয়ে আত্মবিশ্লেষণ করছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা। পরাজয়ের পেছনে তারা দলীয় কোন্দল, নেতাদের সঙ্গে কর্মীদের দূরত্ব এবং মন্ত্রী-এমপিদের অজনপ্রিয়তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ দাবি করেন, সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন প্রভাব ফেলবে না। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ১৪ দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে জনগণের দূরত্বই সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ। তাই নির্বাচনের রায় থেকে শিক্ষা নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের উচিত আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে সাবধানী হওয়া।
১৪ দলের নেতারা মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে কিছুটা হলেও সিটি নির্বাচনের ফলের প্রভাব পড়বে জাতীয় নির্বাচনে। তাই সিটি নির্বাচনের ফলাফল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভুল সংশোধন করা উচিত। এ কারণে শরিক দলগুলো নিজেদের পরবতী করণীয় নিয়ে আলোচনা করছে। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননও মনে করেন চার সিটি  করপোরেশন নির্বাচনে মহাজোট সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয় সরকারের জন্য সতর্কবাণী। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনে মহাজোট সরকারের পরাজয়কে আমি সরকারের প্রতি জনগণের অনাস্থা বলবো না, তবে এটা সরকারের জন্য সতর্কবাণী। সরকারকে এর পরে অবশ্যই আরও সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারকে অবশ্যই সাধারণ মানুষের মতামতের ভিত্তিতে চলতে হবে। মেনন বলেন, সিটি নির্বাচনগুলো স্থানীয় নির্বাচন হলেও এখানে এলাকার উন্নয়ন শুধু নয়, জাতীয় রাজনীতিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার পালন করেছে।
এদিকে সিটি নির্বাচনে সরকার সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের পরাজয়কে মহাজোটের জন্য একটি বিপর্যয় হিসেবে দেখছে জাতীয় পার্টি। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, এ ফল মহাজোটের জন্য একটি কঠিন বার্তা দিয়েছে, যা বাস্তবতা বুঝতে না পারার অক্ষমতা। তবে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন করায় সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তারা। জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার জানিয়েছেন, এটি স্থানীয় নির্বাচন হলেও এর ফল জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। এই নির্বাচনের ফল মহাজোটের জন্য একটি কঠিন সতর্কবাণী। স্থানীয় নির্বাচন হলেও একে ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই। কারণ, শহরগুলো হলো গ্রামের প্রাণকেন্দ্র। এখানে সাধারণত সচেতন লোকজন বাস করেন। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলু জানিয়েছেন, এ নির্বাচন রাজনীতির নতুন দিক উন্মোচন করেছে। মহাজোট বাস্তব রাজনৈতিক অবস্থা বুঝতে পারেনি। এ কারণে এ বিপর্যয়। নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে সংশোধন হওয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ