বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। দেশের প্রধান দুই দলের দুই প্রধান নেতার একই সময়ে সিঙ্গাপুর সফর নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে নানা কানাঘুষা। চার সিটি নির্বাচনে বিএনপি তথা ১৮ দল সমর্থিত প্রার্থীর বিজয়ের পর বিরোধী দলীয় নেতার সিঙ্গাপুর সফর ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সফর হলেও এটিকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না রাজনীতিবিদরা। সোমবার দিনে বা রাতে এ বৈঠক হতে পারে।
চিকিৎসার জন্য রোববার রাতে সিঙ্গাপুর যান বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে বিরোধী দলীয় নেতা চিকিৎসা নেবেন বলে তার গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। চিকিৎসা শেষে আগামী ২৪ জুন তিনি দেশে ফিরার কথা রয়েছে।
গত ১০ জুন মেডিকেল চেকআপের জন্যে ৯ দিনের সফরে সিঙ্গাপুরে যান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সাবেক রাষ্ট্রপতির সফর সঙ্গী হিসেবে রয়েছেন- পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম রওশন এরশাদ এমপি, পুত্র রাহাগির আলমাহী এরশাদ (সাদ) এবং একান্ত সচিব মেজর খালেদ আখতার (অব.)। আগামীকাল মঙ্গলবার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকও কিডনির চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন।
এদিকে সিঙ্গাপুরে অবস্থানকালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও মহাজোটের শরীক এরশাদের বৈঠক নিয়ে গুজব শোনা যাচ্ছে। কয়েকদিন ধরে এ বিষয়টি দলীয় কর্মীদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। তবে এ নিয়ে দুদলের কেউই মুখ খুলতে রাজি হননি।
সূত্র জানায়, সিঙ্গাপুরে এরশাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক হতে পারে। চার সিটিতে বিএনপির বিজয়ের পর ‘বাতাস’ বুঝে এরশাদ আগামীতে ১৮ দলীয় জোটে যোগ দিতে পারেন বলেও অনেকে ধারণা করছেন।
দুই দলের এই দুই শীর্ষ নেতার সিঙ্গাপুর ‘কানেকশন’ খুঁজে পেতে চেষ্টা চালাছে সরকার সমর্থিত জাপার একটি অংশ। এমনিতেই পার্টির শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে পার্টির দুই ভাগে বিভক্তির খবর কারো কাছে অজানা নয়। একটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমদ। অন্যদিকে রয়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন বাবলু আর এরশাদের ছোট ভাই বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদেরসহ কয়েকজন। আর পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার ঝোপ বোঝে কোপ মারার পক্ষে।
এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক মিত্র জামায়াত এখন যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে কোনঠাসা। বিএনপির অনেক নেতাকর্মীই জামায়াতকে ইদানিং রাজনৈতিক বোঝা বলে মনে করে। জামায়াতের যদি ছাড়তেই হয় তাহলে বিএনপির দরকার নতুন রাজনৈতিক মিত্র। সেক্ষেত্রে সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে কোলাকুলি হতেই পারে। দুটি দলের আদর্শ-নীতিতেও যথেষ্ট মিল রয়েছে।
এছাড়া জাপা চেয়ারম্যানের পাশে আবারও এসে দাঁড়িয়েছেন স্ত্রী রওশন এরশাদ। সাত বছর পর এরশাদ ও রওশন এরশাদের এই আকস্মিক সিঙ্গাপুর সফরকে তাই অনেকেই সন্দেহেন চোখে দেখছেন। কাজেই ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রশ্নে দুটি দল সমঝোতায় পৌঁছলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এ বিষয়ে নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বরের পর থেকে জাপার ওপর দিয়ে শুধু ঝড় নয়, টর্নেডো-টাইফুন বয়ে গেছে। তবু জাতীয় পার্টি টিকে আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তো এখনও মহাজোটে আছি। মহাজোট থেকে বেরিয়ে আসার ব্যাপারে পার্টির চেয়ারম্যানই সিদ্ধান্ত নেবেন। এরআগে একাধিকবার এরশাদ বলেছেন সময় হলেই মহাজোট ছেড়ে এককভাবে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে জাপা।’
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘মহাজোটে গিয়ে এরশাদের কোনো লাভ হয়নি। তিনি অনেকদিন পর হলেও সেটা বুঝতে পেরেছেন। তবে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সিঙ্গাপুরে কোনো বৈঠক হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। তাদের মধ্যে বৈঠক হলে তো দেশেই হতে পারে এর জন্য সিঙ্গাপুরে যাবার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ তারা দুজনই নিজ নিজ দলের প্রধান।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পার্টির প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টির জোট হওয়ার বিষয়টি আলোচনা চলছে। আলোচনার মাধ্যমেই জোটবদ্ধ হবে জাতীয় পার্টি-বিএনপি।’
জাপার একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্যের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, স্ত্রী রওশনকে নিয়ে এরশাদ এবার সিঙ্গাপুরে চেকআপ করাতে গেছেন রাজনৈতিক কারণে। খালেদা জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ রওশন এরশাদের মধ্যস্থতায় সিঙ্গাপুরে বৈঠক হতে পারে। এর আগে এ নিয়ে খালেদা-রওশনের রিহার্সাল বৈঠক হয়েছে বলেও জানা গেছে।
ওই বৈঠকে তৃতীয় কোনো জোট না করে বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার ব্যাপারে একটি ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। এ খবর প্রচার হওয়ার পরে বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, নাসিম ওসমান, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, মুজিবুল হক চুন্নু এমপিসহ কয়েক প্রেসিডিয়াম সদস্য মহাজোট থেকে বের না হতে এরশাদকে চাপে রেখেছেন। তারা এরশাদকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, বিএনপির সঙ্গে তারা যাবেন না।