চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, ‘আধুনিক যান্ত্রিকযুগে মানুষ এখন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। সময়ের অভাবে পরিবারের কর্তা বা অভিভাবকরা সন্তান-সন্ততিদের সময় দিতে পারছেন না। তারা সন্তানদের আচরণ-মনোভাবও পর্যবেক্ষণ করার সময় পাচ্ছেন না। এ কারণে তাদের সন্তান-সন্ততিরা কৈশোর বয়সের মানসিক-শারীরিক পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে একান্ত আপনজনের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাচ্ছে না। আর সঠিক তথ্য না পাওয়ায় কৈশোরকালের স্বাভাবিক পরিবর্তনগুলোকে ঘিরে ছেলেরা বিকৃত চিন্তা-চেতনার ভেতরে ঢুকে পড়ছে আর মেয়েরা এক ধরনের শংকার মধ্যে থেকে মানসিক অস্থিরতায় ভুগছে অর্থাৎ আমাদের সন্তানরা কৈশোর বয়সে নানা ধরনের জটিলতায় পড়ছে।’
তিনি গতকাল ১৫ জুন শনিবার আমরা করবো জয় (ডব্লিউএসও) এবং গণসাক্ষরতা অভিযান (ক্যাম্প)-এর যৌথ উদ্যোগে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় মিলনায়তনে আয়োজিত কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার ও চ্যালেঞ্জসমূহ নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে ‘১১-১৯ : বেড়ে ওঠা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী আরও বলেন, ‘বয়ঃসন্ধিকালীন প্রজনন স্বাস্থ্যের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রজনন শিক্ষার অর্থ হল প্রাকৃতিকভাবে শিশু-কিশোরদের শারীরিক-মানসিক যেসব পরিবর্তন আসে তা সঠিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ অর্থাৎ এ নিয়ে কোনো ভুল না করা কিন্তু আমাদের দেশে কিশোর-কিশোরীরা সঠিক তথ্যের অভাবে নানা ধরনের বিভ্রান্তির মধ্যে থাকে। কৌতুহল থেকে এক সময় কেউ বা বিকৃত মাধ্যম থেকে তথ্য পাওয়ার চেষ্টা চালায়। এ কারণে দেশের জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরী বিপথগামী হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু তারাই তো দেশের ভবিষ্যৎ। সুতরাং অভিভাবকদের এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া জরুরি।’
আমরা করবো জয়-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী শওকত বাঙালির সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. আবু তৈয়ব। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গণসাক্ষরতা অভিযান-এর উপ-পরিচালক তাসনীম আতহার। বয়ঃসন্ধিকালীন প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে বিস্তারিত ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বিশেষজ্ঞ ডা. জুলিয়া আহমেদ। আলোচনায় অংশ নেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মহসীন চৌধুরী, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন(সিইউজে) সাবেক সভাপতি ও সুপ্রভাত বাংলাদেশ-এর নগর সম্পাদক এম নাসিরুল হক, সিইউজে সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজিমুদ্দিন শ্যামল, সিএসডিএফ চেয়ারপার্সন এস এম নাজের হোসাইন, শিক্ষক প্রশিক্ষক অধ্যাপক আবু সালেহ শামসুদ্দিন শিশির ও সিএসও মেডিকেল অফিসার ডা. মোরশেদুল করিম চৌধুরী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিভিল সার্জন ডা. আবু তৈয়ব বলেন, ‘দেশের ২৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরী আগামীর নাগরিক হিসেবে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় আবার একই সাথে ঝুঁকিপূর্ণও বলতে হবে। কারণ বয়ঃসন্ধিকালীন প্রজনন স্বাস্থ্যের দিকটি যথাযথভাবে গুরুত্ব দেয়া না হলে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যায়। আর তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হওয়া মানে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার হওয়া। এ ক্ষেত্রে পেশাজীবীদের মধ্যে একে অপরকে দোষারোপ না করে দেশে যেসব নীতি প্রণীত হয়েছে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া এবং কারিকুলাম অনুযায়ী পাঠ্যপুস্তকে যতটুকু ধারণা দেয়া হয়েছে তা শিক্ষার্থীদের কাছে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে হবে। তাদের সঠিক তথ্য জানাতে হবে, সঠিক নির্দেশনা দিতে হবে। তবেই আমরা নিরাপদ প্রজনন স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারব।’
গণসাক্ষরতা অভিযান-এর উপ-পরিচালক তাসনীম আতহার স্বাগত বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানের নানা কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, ‘মানসম্মত শিক্ষা বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, গবেষণা, দক্ষতাবৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনা করছে গণসাক্ষরতা অভিযান। চট্টগ্রামের এ ধরনের কাজের সাথে যুক্ত হয়েছে আমরা করবো জয়। ’
প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক মহসীন চৌধুরী বলেন, ‘অভিভাবক হিসেবে সন্তানদের সময় দিতে না পারাটাই মূল সমস্যা। বয়ঃসন্ধিকালে মা-বাবা সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দিতে পারলে সমস্যা অনেকখানি কাটিয়ে উঠা সম্ভব। সুতরাং আমাদের আগে ভাবতে হবে সন্তানদের কিভাবে সময় দেয়া যায়।’
সাংবাদিক এম নাসিরুল হক বলেন, ‘স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সঠিক তথ্যগুলো আমাদের সাংবাদিকদেরকেই প্রথমে সঠিকভাবে জানতে হবে। কেননা, তাদের লেখনি থেকেই একজন অভিভাবক তথ্য পেয়ে থাকেন। তারা ভুল লিখলে জাতি ভুল জানবে। তাই ডাক্তারদের কাছ থেকে জানা তথ্যগুলো সঠিক ও সহজভাষায় পত্রিকায় উঠিয়ে আনা দরকার।’