বুধবার, নভেম্বর ৬, ২০২৪
প্রচ্ছদলাইফস্টাইলস্বেচ্ছায় রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করতে হবে

স্বেচ্ছায় রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করতে হবে

দেশে বর্তমানে বছরে প্রায় ৬ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। সংগৃহীত রক্তের ৭০ ভাগ পাওয়া যায় আত্মীয়স্বজনদের বাকি ৩০ ভাগ পাওয়া যায় স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের কাছ থেকে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে পৃথিবীর ৮০টি দেশে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নিরাপদ রক্ত সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশ তার অন্যতম। আমাদের দেশে স্বেচ্ছায় রক্তদানে সাধারণ মানুষের আগ্রহ অত্যন্ত কম। জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারি- বেসরকারি প্রচারণাও যথার্থ পর্যাপ্ত নয়। তাই রক্তদানে মানুষের মনে এক প্রকার ভীতি কাজ করে।
চাহিদার তুলনায় যেহেতু সরবরাহ কম সেহেতু রক্ত নিয়ে একপ্রকার বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। সেই বাণিজ্যের সাথে অতি মুনাফার লোভ রক্ত বাণিজ্যকে মৃত্যুঝুঁকিময় করে তুলেছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বৃহত্তর চট্টগ্রামের লক্ষ লক্ষ মানুষের চিকিৎসার অন্যতম বৃহৎ আশ্রয়স্থল।
বিত্তহীন, নিম্নবিত্ত এবং জটিল রোগের চিকিৎসার জন্যে মধ্যবিত্তরা এই চিকিৎসাকেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীল। এই হাসপাতালের একমাত্র রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একশ্রেণীর দালালচক্র। যারা রক্ত ব্যবসার সাথে সাথে বাড়িয়ে তুলছে নিরীহ রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি। এইসব দালালদের মাধ্যমে ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে একশ্রেণীর পেশাদার রক্তদাতা, যাদের মধ্যে অধিকাংশই কোন না কোন প্রকার নেশায় আসক্ত। এদের অধিকাংশই শুধুমাত্র নেশার টাকা যোগাড় করতেই রক্ত বিক্রি করে থাকে। অন্যদিকে পেশাদার ও নেশাগ্রস্ত এইসব রক্তদাতাদের রক্ত কোনরূপ পরীক্ষা-নিরীক্ষা অর্থাৎ স্ক্রিনিং ও ক্রস ম্যাচিং ছাড়াই রোগীর দেহে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে করে অন্যান্য রোগ ছাড়াও মারাত্মক কিছু রোগ যেমন, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস-সি, এইচআইভি বা এইডস, ম্যালেরিয়া ও সিফিলিসের মতো রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।
রক্ত বেচাকেনায় এই ধরনের দালালচক্র একদিনে গড়ে ওঠেনি। এবং এই ব্যবসা খুব একটা গোপনেও চলছে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসন সবার গোচরেই এই অবৈধ ও বিপজ্জনক ব্যবসা চললেও তা বন্ধ করতে কোন উদ্যোগ আজও চোখে পড়েনি। বরং এদেরই কেউ কেউ এই রক্ত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসিক বখরা আদায় করেন বলে অভিযোগ আছে। ঝুঁকিপূর্ণ রক্ত বাণিজ্য বন্ধ করার এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগ ও ব্লাড ব্যাংক থেকে দালালদের তাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সে সাথে সরকারি-বেসরকারি ও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক-সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করে স্বেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে আনতে হবে। নতুবা দেশের জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ