সিলেট, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন শনিবার। ভোটগ্রহণ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এ উপলক্ষে চার সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, এবার চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নিরাপত্তা রক্ষায় ১১৮টি মোবাইল টিম ও ৪০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া চার সিটিতে ২১ প্লাটুন বিজিবি ও খুলনা এবং বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনে পাঁচ প্লাটুন কোস্টগার্ড নিয়োজিত করা হয়েছে।
নির্বাচনী এলাকায় মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে ৯১ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচন চলাকালে সংঘটিত অপরাধের তাৎক্ষণিক বিচারের জন্য প্রতিটি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পাঁচজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে।
এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ, এপিবিএন, র্যাব, কোস্টগার্ড ব্যাটালিয়ন, আনসার ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতি ওয়ার্ডের জন্য একটি মোবাইল ফোর্স ও তিনটি ওয়ার্ডের জন্য একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত থাকবে।
প্রত্যেক ভোটার যাতে নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন চার সিটি কর্পোরেশনের ভোটারদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটদানের জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিরপেক্ষ ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এ ছাড়া চার সিটি কর্পোরেশনের প্রত্যেকটিতে একটি করে ওয়ার্ডে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। ভোটগ্রহণের জন্য যাবতীয় সামগ্রী নির্বাচনী এলাকায় পাঠানো হয়েছে।
এ জন্য এক লাখ বিশ হাজার ৮০ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে নিবিড় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন ছয়শ ৫৩ জন প্রিজাইডিং অফিসার, তিন হাজার আটশ নয় জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং সাত হাজার ছয়শ ১৮ জন পোলিং অফিসার। ভোটাররা যাতে করে মোবাইল ফোনে এসএমএস-এর মাধ্যমে তাদের ভোটার নম্বর ও কেন্দ্রের নাম জানতে পারেন, সে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, ভোটকেন্দ্রে এবং নির্বাচনী এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, র্যাব ও আনসার-ভিডিপি মোতায়েন করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রগুলোকে ঝুঁকি বিবেচনা করে ‘সাধারণ’ ও ‘গুরুত্বপূর্ণ’ এই দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ২২ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে ২৪ জন করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন থাকবে। ভোটগ্রহণের পরবর্তী দুইদিন, ভোটগ্রহণের দিন এবং ভোটগ্রহণের পরবর্তী দুই দিনসহ মোট চার দিন ভোটকেন্দ্র ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন থাকবে।
নির্বাচনী এলাকায় যানবাহন চলাচলের ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে রিটার্নিং অফিসারের নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভিজিল্যান্স ও অবজারভেশন টিম গঠন করা হয়েছে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যাপক সংখ্যক দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব পর্যবেক্ষকও নিয়োগ করা হয়েছে। ব্যাপক সংখ্যক সাংবাদিক নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহের জন্য নির্বাচনী এলাকায় নিয়োজিত থাকবেন।
চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র, সংরক্ষিত আসনে কমিশনার এবং সাধারণ আসনে কমিশনার পদে মোট সাতশ ৫০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক):
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে (রাসিক) মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা সংরক্ষিত ১০ এবং সাধারণ ৩০। মোট ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ছিয়াশি হাজার নয়শ ১৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ তেতাল্লিশ হাজার তিনশ ৯৫ জন এবং নারী ভোটার এক লাশ তেতালিশ হাজার পাঁচশ ২২ জন।
প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থীরা হলেন- এ. এইচ. এম. খায়রুজ্জামান লিটন, যার নির্বাচনী প্রতীক ‘তালা’, মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন, যার নির্বাচনী প্রতীক ‘আনারস’, মো. হাবিবুর রহমান, যার নির্বাচনী প্রতীক ‘চশমা’।
সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর সংখ্যা ৬৬ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর সংখ্যা একশ ৫৫ জন।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন (খুসিক)
খুলনা সিটি কর্পোরেশনে (খুসিক) মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা সংরক্ষিত ১০ এবং সাধারণ ৩১টি। মোট ভোটার সংখ্যা চার লাশ ৪০ হাজার পাঁচশ ৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাশ ২৪ হাজার পাঁচশ চার জন এবং নারী ভোটার দুই লাখ ষোল হাজার বাষট্টি জন।
প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থীরা হলেন- তালুকদার আব্দুল খালেক, যার নির্বাচনী প্রতীক ‘তালা’, মো. মনিরুজ্জামান, যার নির্বাচনী প্রতীক ‘আনারস’, মো. শফিকুল ইসলাম মধু, যার নির্বাচনী প্রতীক ‘দোয়াত-কলম’। সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর সংখ্যা ৪৫ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর সংখ্যা ১৩৭।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বসিক):
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে (বসিক) ওয়ার্ডের সংখ্যা সংরক্ষিত ১০ এবং সাধারণ ৩০টি। মোট ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ১১ হাজার দুইশ ৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ সাত হাজার ছয়শ ২৫ জন ও নারী ভোটার এক লাখ তিন হাজার ছয়শ ৩২ জন।
প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থীরা হলেন- মাহমুদুল হক খান মামুন, যার নির্বাচনী প্রতীক ‘দোয়াত-কলম’, মো. আহসান হাবিব কামাল, যার নির্বাচনী প্রতীক ‘আনারস’, মো. শওকত হোসেন, যার নির্বাচনী প্রতীক ‘টেলিভিশন’।
সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর সংখ্যা ৪৫ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর সংখ্যা একশ ১৬ জন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক):
সিলেট সিটি কর্পোরেশনে (সিসিক) মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা ৩৬টি (সংরক্ষিত ৯ এবং সাধারণ ২৭)। মোট ভোটার সংখ্যা দুই লাখ একানব্বই হাজার ৪৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫৭ হাজার একশ ৮১ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ তেত্রিশ হাজার আটশ ৬৫ জন।
প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থীরা হলেন- আরিফুল হক চৌধুরী, যার নির্বাচনী প্রতীক ‘টেলিভিশন’, বদর উদ্দীন আহম্মদ (কামরান), যার নির্বাচনী প্রতীক ‘আনারস’, মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন, যার নির্বাচনী প্রতীক ‘তালা’।
সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর সংখ্যা ৩৫ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর সংখ্যা একশ ৩৯ জন।
ভোটগ্রহণ:
শনিবার (১৫ জুন-২০১৩) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে। ভোটগ্রহণের দিন নির্বাচনী এলাকায় সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে, নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ বলেন, “শনিবারের চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়, তার সব ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। তবে বরিশালের ঘটনা অনাঙ্ক্ষিত।”
ভোটকেন্দ্রে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি সম্পর্কে তিনি বলেন, “সেনাবাহিনীই হোক আর র্যাব, বিজিবি, পুলিশই হোক, সবার কাজই হচ্ছে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।”