মঙ্গলবার, অক্টোবর ১৫, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিন‘নির্বাচনী’ সমাবেশে পরিণত হল ১৪ দলের গণসমাবেশ

‘নির্বাচনী’ সমাবেশে পরিণত হল ১৪ দলের গণসমাবেশ

badol  mpআসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় শনিবার বিকেলে ‘নির্বাচনী’ সমাবেশ করেছে ১৪ দল। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা নিয়ে ব্যান্ড বাজিয়ে, নান‍া ধরনের নির্বাচনী শ্লোগান দিয়ে সমাবেশে হাজির হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ, জাসদসহ ১৪ দলের নেতাকর্মীরা।

সমাবেশ মঞ্চের সামনেও ছিল বড় একটি নৌকা। বক্তব্যের মধ্যেও নেতারা বারবার ভোট চেয়েছেন।

বোয়ালখালী উপজেলা এবং নগরীর চান্দগাঁও-পাঁচলাইশ মিলিয়ে চট্টগ্রাম-৭ আসন থেকে গত নির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হন জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সভাপতি মঈনউদ্দিন খান বাদল। সমাবেশ থেকে বাদলকে আবারও প্রার্থী করা হবে বলে ইঙ্গিত দেন নেতারা। এছাড়া সমাবেশস্থলের পথে পথে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও সাংসদ বাদলের ছবিসম্বলিত তোরণও বানানো হয়।

সমাবেশে আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তথমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরে সরকারের মেয়াদ শেষ হবে। সংবিধান অনুযায়ী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। প্রশ্ন উঠেছে, ছয় মাস পর দেশ কোনদিকে যাবে ? বাংলাদেশ কি পাকিস্তান-আফগানিস্তানের মত রক্তাক্ত দেশ হবে নাকি উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও শান্তির ধারায় চলবে ?’

১৪ দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনেও ১৪ দল থাকবে। ১৪ দল একসঙ্গে নির্বাচন করবে। কারণ আমরা মনে করি, এখনও দেশ, দেশের সংবিধান নিরাপদ নয়। লড়াই এখনও শেষ হয়নি। জনগণকে আগামী নির্বাচনে হুঁশ করে ভোট দিতে হবে। কারণ আগামী নির্বাচনে ভোট হবে গণতন্ত্র, আইনের শাসন আর বাংলাদেশকে রক্ষার ভোট, যুদ্ধাপরাধীদের ধ্বংস করার ভোট।’

মঈনউদ্দিন খান বাদলের প্রসঙ্গ টেনে ইনু বলেন, ‘বাদল সাহেব এখানে ১৪ দলের প্রতিনিধি। তিনি কি করেছেন আপনারা দেখেছেন। তিনি সবকিছু করতে পেরেছেন সেটি আমি বলবনা। তবে আমরা আপনাদের জন্য করার চেষ্টা করেছি। আশা করব, আপনারা তাকে আবারও নির্বাচিত করবেন।’

বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার সরকার এবং মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনের আধা সামরিক সরকার দেশের মানুষকে অন্ধকার উপহার দিয়েছিল। আমরা এসে আপনাদের বিদ্যুৎ দিয়েছি। এখন আর ১২ ঘণ্টা, ১৪ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়না। বিদ্যুৎ দেয়ার জন্য তো হাসিনা আপনাদের কাছে একটি ভোট চাইতে পারেন।’

সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত সাংসদ বাদলের প্রশংসা করে বলেন, ‘দল ক্ষমতায় থাকলে নেতা, মন্ত্রী, এমপি, রাষ্টপতি, স্পিকার অনেক কিছুই হওয়া যায়। কিন্তু একজন পার্লামেন্টারিয়ান হওয়া যায়না। কিন্তু বাদল প্রথমবার নির্বাচিত হলেও তিনি একজন আপাদমস্তক পার্লামেন্টারিয়ান। সংসদে তিনি সংসদীয় ভাষায় কথা বলেন, পুরো হাউস নিস্তব্ধ হয়ে তার কথা শুনেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত বাদল যখন বক্তৃতা করেন, তখন মনযোগ দিয়ে শুনেন। এমন একজন মানুষকে পার্লামেন্টে বারবার দরকার।’

বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত আরেকবার শেখ হাসিনাকে ভোট দেবেন কিনা জানতে চাইলে উপস্থিত জনতা হাত তুলে হ্যাঁ-সূচক উত্তর দেন।

বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদ চত্বরে সমাবেশ শুরু হওয়ার প্রায় ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই আওয়ামী লীগ ও জাসদসহ ১৪ দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে মিছিল সহকারে সমাবেশে যোগ দিতে শুরু করেন। এদের অনেকের হাতেই ছিল প্রতীকী নৌকা। অনেকে সাংসদ বাদলের নাম উল্লেখ করে আবার অনেকেই নৌকা, নৌকা বলে শ্লোগান দেন।

মঞ্চের সামনে কাগজ ও কাঠের তৈরি একটি বড় নৌকা রাখা হয়। এক পর্যায়ে সাংসদ বাদল সেটি হাতে তুলে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার জন্য নেতাদের অনুরোধ জানালেও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নিষেধ করেন। তবে নেতারা হাত উঁচিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা প্রকাশ করেন।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এস এম আবুল কালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সাংসদ মঈনউদ্দিন খান বাদল, আনোয়ারা থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী।

সাংসদ বাদল বলেন, ‘যতই আলোচনা, সংলাপের কথা বলা হোক, সব সংশয় কাটিয়ে এদেশে নির্বাচন হবেই। আর সেই নির্বাচনে সবার আগে আসবে বিএনপি। আর সেই নির্বাচনে বিএনপিকে মোকাবেলা করেই ক্ষমতায় যাবে আওয়ামী লীগ। আমি অন্য দল করি, কিন্তু অন্তর থেকে বলছি, শেখ হাসিনা ছাড়া এদেশের গতি নেই।’

তিনি উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফিরিস্তি দিয়ে বলেন, ‘আমার আগেও এমপি জনগণ দেখেছে। তারা কি করেছে সেটিও জনগণ দেখেছে। আমি সাড়ে চার বছরে সব করে ফেলেছি সেটি বলবনা। তবে সেটি বলবনা। আমি যেন আগামী সময়েও আপনাদের হয়ে সংসদে কথা বলতে পারি, আপনাদের কাছে সেই দোয়া চাই।’

সাংসদ সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, ‘বাদল সাহেব এমন একজন রাজনীতিবিদ যিনি নিজের বাবার গোলার ধান বিক্রি করে রাজনীতি করতেন। তিনি আজীবন মানুষের পাশে ছিলেন। সারা জীবন তিনি মানুষের জন্য রাজনীতি করছেন।’

উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ্য করে জাবেদ বলেন, ‘শেষ জীবনে এসে আপনারা বাদল সাহেবকে মূল্যায়ন করেছেন। উনার নেতৃত্বে বোয়ালখালীতে, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আপনারা আবারও বাদল সাহেবকে সুযোগ দেবেন, মহাজোটকে নির্বাচিত করবেন। শেখ হাসিনা এ বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে দেবেন।’

অনুষ্ঠানে এস এম আবুল কালাম এবং রেজাউল করিম চৌধুরী উভয়ই সাংসদ বাদলের কথা উল্লেখ না করলেও আবারও নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানান।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ