শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনরাস্তায় পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারের সংস্পর্শে দুই বছরে মারা গেছেন...

রাস্তায় পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারের সংস্পর্শে দুই বছরে মারা গেছেন ৫ জন

নগরীতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে রাস্তায় পড়ে বিদ্যুতায়িত মানুষ মারা যাচ্ছে। বিদ্যুতের তার এবং ট্রান্সফরমারগুলো প্রায় ২০ বছরের জরাজীর্ণ হওয়ায় লোড নিতে না পেরে এবং সামান্য বাতাসেই ছিঁড়ে রাস্তায় পড়ে থাকছে আর সেই তারে তড়িতাহত হয়ে মারা যাচ্ছে মানুষ। অথচ বিদ্যুৎ লাইন সংস্কার জন্য একটি প্রকল্প অর্থের জন্য ঝুলে আছে।

রাস্তায় পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারের সংস্পর্শে এসে গত দুই বছরে  মারা গেছেন ৫ জন । চলতি বছরের ৬ মে অক্সিজেনের বালুচড়া এলাকায় ছিঁড়ে পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারের সংস্পর্শে এসে ইন্দ্রা দাশ বকুল চৌধুরী নামের ভাই বোনের করুণ মৃত্যু ঘটে। ৫ এপ্রিল আগ্রাবাদ এলাকায় নালা পরিষ্কার করতে গিয়ে সেখানে পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে তড়িতাহত হয়ে মারা যান মতিউর রহমান নামে এক ব্যক্তি। ১৮ এপ্রিল পূর্ব বাকলিয়া এলকায় বিদ্যুতের সরবরাহ লাইন সংস্কার করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান হাফিজুর রহমান নামের এক বিদ্যুৎকর্মী।

একই ধারাবাহিকতায় গত বছর ৬ জুন পুরোনো বাংলাদেশ ভবন এলাকায় বিদ্যুতের ছিঁড়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি অটোরিক্সার ওপরে পড়লে অটোরিক্সাটির চালক  সোহরাব হাসানের মৃত্যু হয়। একই মাসে ঝাউতলা এলাকায় ছিঁড়ে পড়ে থাকা  বিদ্যুতের তারের সংস্পর্শে এসে মারা যান একরামুল হক নামের এক ব্যক্তি।

এছাড়া চলতি মাসে বৃষ্টিতে লালদীঘিপাড়ে এক সমাবেশের পাশে বিদ্যুৎ সরবরাহের মূল লাইন ছিঁড়ে নালায় পড়লে এক মাদ্রাসা শিক্ষক গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে  বেঁচে যান তিনি।

পিডিবি সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ বিতরণ লাইনের তারের বয়স প্রায় ২০ বছর এবং প্রায় ৪ হাজারের মতো ট্রান্সফরমারের বয়স ২৫ থকে ৩০ বছর। এসব পুরনো তার ও ট্রান্সফরমার দিয়ে নগরীতে বিদ্যুৎ বিতরণ করা হচ্ছে।

এদিকে প্রতি বছর প্রায় ৩০ শতাংশ হারে বিদ্যুতের লোড বাড়ছে। কিন্তু সে তুলনায় বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন ও ট্রান্সফরমারের কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় এত পুরনো   লাইনগুলো লোড নিতে পারছে না। ফলে ছিঁড়ে যাচ্ছে। এছাড়া সামান্য বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়াতেই বিদ্যুৎ লাইনগুলো ছিঁড়ে যাচ্ছে। গত কয়েক বছর যাবত কোনমতে জোড়াতালি দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখা হয়েছে বলে পিডিবি জানিয়েছে।

এদিকে পিডিবি কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় যেসমস্ত বৈদ্যুতিক সরবরাহ লাইনগুলো আছে সেগুলোর সংস্কার কাজ করা হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। আর ২০০০ সালে কিছু সংস্কার কাজ হয়েছিল। এরপর থেকে আর কোনো সংস্কার কাজ করা হয়নি।

বর্তমানে যেভাবে বিদ্যুতের লোড বাড়ছে। কিন্তু বিদ্যুৎ লাইনগুলো পুরাতন হওয়ায় লোড নিতে পারছে না। ফলে কোনো কোনো জায়গায় এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। আরবান এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ লাইন সংস্কারের জন্য প্রকল্প চালু থাকলেও মহানগর এলাকায় এখনো এরকম কোনো প্রকল্প চালু নেই। তবে কয়েক বছর আগে মহানগর এলাকায় বিতরণ লাইন সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে প্রকল্প অর্থের অভাবে ঝুলে আছে।

পিডিবি’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী চট্টগ্রাম মহানগর (পূর্ব)  মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, বেশিরভাগ বৈদ্যুতিক তারগুলো পুরাতন হওয়ায় এগুলো লোড সইতে না পেরে ছিঁড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে নগরীতে যে সমস্ত বিদ্যুৎ লাইনগুলো আছে সেগুলো ২০০০ সালের দিকে কিছু করে সংস্কার কাজ হয়েছিল। এরপর থেকে আর কোনো সংস্কার কাজ করা হয়নি। এখন সেগুলো মেরামত করে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। মেট্্েরা এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প অর্থের অভাবে ঝুলে আছে।

এ বিষয় নিয়ে চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী স্বপন কুমার সাহার সাথে গতকাল রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ