শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনঅভিযানের খবর আগেই ফাঁস, যানজটমুক্ত হল কর্ণফুলী সেতুর গোলচত্বর

অভিযানের খবর আগেই ফাঁস, যানজটমুক্ত হল কর্ণফুলী সেতুর গোলচত্বর

তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর গোল চত্বর মোড়ে অভিযান চালিয়ে ৫টি গাড়ি জব্দ, ২৭টি মামলা দায়ের ও সাড়ে ১৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসন, ট্রাফিক, র‌্যাব, পুলিশ ও বিআরটিএ’র যৌথ উদ্যোগে এ ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তবে অভিযানের খবর ফাঁস হয়ে যাওয়ায় অবৈধ যানবাহন চালকদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। গতকাল সকাল ১১ টা, হতে ১ টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারুক আহম্মদ ও অতিরিক্ত সহকারি পুলিশ কমিশনার (উত্তর) হাসানুজ্জামান মোল্লার নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার হাসানুজ্জামান বলেন, অভিযানে ফিটনেসবিহীন চারটি বাস ও একটি চাঁদের গাড়ি (জিপ) জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া ২৭টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা ও সাড়ে ১৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, অভিযানের খবর আগেভাগেই ফাঁস হয়ে গেছে। তাই গোলচত্বর এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা শত শত যানবাহন হঠাৎ করে একদিনেই বন্ধ হয়ে যায়। এতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় চলাচলরত যানবাহন সেতুর এপারে (নগরীর অংশ) চলাচল করেনি। বিশেষ করে ফিটনেসবিহীন বাস, অটোরিক্সা, জিপ গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। অবৈধ দখলে থাকা সড়ক ছিল যানজট মুক্ত।
পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের দৈনিক ও মাসিক চাঁদা দিয়ে এ চত্বর এলাকাকে অবৈধ বাসস্টেশনে পরিণত করা হয়েছে।  এ চত্বর থেকে প্রতি মাসে ২০ লক্ষাধিক টাকার অবৈধ চাঁদা উত্তোলন করা হয়। এ নিয়ে দৈনিক পূর্বকোণে সংবাদ ছাপা হলে গত সোমবার পুলিশ কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মাসিক সভায় তা উত্থাপন করা হয়। এতে বাকলিয়া থানা পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগের সংশ্লিষ্ট এলাকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভৎসনা করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গোল চত্বর এলাকায় অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়।
তবে এ সিদ্ধান্তের কথা আগেভাগেই ফাঁস হয়ে যায়। এতে সকাল থেকেই ওই স্থানে অবৈধ যানবাহন চলাচল ছিল না।   এই গোল চত্বরকে ঘিরে গড়ে উঠেছে সন্ত্রাসী বাহিনী। যানবাহনগুলো থেকে পুলিশ ও সন্ত্রাসী বাহিনী দৈনিক ও মাসিক এই দুই দফায় অবৈধ চাঁদা আদায় করে। সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ চক্র নিয়মিতভাবে এই চাঁদা আদায় করে বলে অভিযোগ রয়েছে। সন্ত্রাসীরা লাইন খরচ ও পুলিশ ও ট্রাফিকের নামে এ চাঁদা আদায় করে। নম্বরবিহীন সিএনজিচালিত অটো রিকশা, মাহিন্দ্র, মাইক্রোবাস (হাইচ), জিপ, ভ্যান- ছোট আকারের এসব যানবাহন থেকে নিয়মিত দুই দফায় চাঁদা আদায় করা হয়। নগরীতে চলাচলের অনুমতি না থাকায় পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের ম্যানেজ করে চাঁদা দিয়ে শহরে ঢুকে এসব যানবাহন। দৈনিক ও মাসিক দুই দফায় ২০ লক্ষাধিক টাকার চাঁদা তোলা হয়। ২০-৩০ জনের একটি গ্রুপ রাত-দিন বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে মেতে থাকে।
গোল চত্বর ঘিরে সড়কের চতুর্দিকে গড়ে উঠেছে শতাধিক অবৈধ দোকানপাট। এতে বিনষ্ট ও শ্রীহীন হয়ে পড়েছে গোল চত্বরের সৌন্দর্য। যানবাহনের চালকদের আটক করে ওই খুপড়ি দোকানে গিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে অবৈধ টাকা আদায় করতে দেখা যায়। ট্রাফিকের অতিরিক্ত সহকারি পুলিশ কমিশনার (উত্তর) হাসানুজ্জামান মোলা পূর্বকোণকে জানান, দীর্ঘদিন থেকে গোলচত্বর এলাকায় যানজট লেগে থাকে। তাই অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে। তা অব্যাহত থাকবে।  উল্লেখ্য, গত ৩০ মে দৈনিক পূর্বকোণে ‘কর্ণফুলী সেতুর গোলচত্বরে পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজি, নিত্য যানজট’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ