বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনচট্টগ্রামে প্রতিদ্বন্দ্বিসহ একজন প্রার্থীও জামানত রক্ষা করতে পারেননি

চট্টগ্রামে প্রতিদ্বন্দ্বিসহ একজন প্রার্থীও জামানত রক্ষা করতে পারেননি

চট্টগ্রাম অফিস (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

সদ্যসমাপ্ত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা আর লাঙ্গল প্রতীকের সঙ্গে লড়াই করে ঠাঁই পাননি চট্টগ্রামে বিভিন্ন ছোট দলের প্রার্থীরা। ভোটের মাঠে বিজয়ীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বিসহ একজন প্রার্থীও জামানত রক্ষা করতে পারেননি।

নির্বাচন কমিশনের পরিপত্র অনুযায়ী নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র জমাদানের সময় প্রত্যেক প্রার্থীকে ২০ হাজার টাকা করে জামানত হিসেবে জমা দিতে হয়েছে। মোট ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট পেতে কোন প্রার্থী ব্যর্থ হলে তার জামানত ফেরত দেয়া হয়না।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের কোন আসনে পরাজিত কোন প্রার্থী মোট ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট পাননি। জামানত রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ভোট পেতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন।

চট্টগ্রামের সহকারী রিটার্ণিং অফিসার মো.শফিকুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামে এবার নয়টি আসনে নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল আমরা প্রকাশ করেছি। ফলাফলে নির্বাচিত প্রার্থী ছাড়া আর কারও ভোট জামানত রক্ষা করার মত হয়নি।

তবে পরাজিত প্রার্থীরা বলেছেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা কারচুপির মাধ্যমে নিজেদের ভোট বাড়িয়ে নিয়েছে। এতে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের চেয়ে তাদের ব্যবধান বেশি হয়েছে।

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের বিএনএফ প্রার্থী জয়নাল আবেদিন কাদেরি বলেন, প্রশাসন সহযোগিতা না করলে এবং কারচুপি করতে না পারলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরও জামানত বাজেয়াপ্ত হত।

চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে সাতটি আসনে একক প্রার্থী থাকায় সেখানে ভোটগ্রহণ হয়নি। বাকি নয়টি আসনে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বেসরকারীভাবে প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে, নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা আওয়ামী লীগের ৭ জন ও তরিকত ফেডারেশনের একজন এবং আওয়ামী লীগের সমর্থনে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করা জাতীয় পার্টির একজন নির্বাচিত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে বাতিল এক হাজার ৯৩৫ জন সহ মোট ভোট পড়েছে এক লক্ষ ৪০ হাজার ৬৫৮। এ আসনে জামানত রক্ষার জন্য প্রয়োজন ১৭ হাজার ৫৮২ ভোট। কিন্তু বিজয়ী তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারির নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ড.মাহমুদ হাসান ভোট পেয়েছেন ১২ হাজার ৪৩৩। অপর প্রার্থী নাজিম উদ্দিন পেয়েছেন মাত্র ৭৩১ ভোট।

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে বাতিল ৫৪৪ সহ মোট ভোট পড়েছে এক লক্ষ ১২ হাজার ৬০৬। এ আসনে জামানত রক্ষার জন্য প্রয়োজন ১৪ হাজার ৭৫ ভোট। কিন্তু এ আসনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের মাহফুজুর রহমান মিতার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জাতীয় পার্টির এম এ সালাম পেয়েছেন ৩ হাজার ৪০৪ ভোট। জাসদের নূরুল আক্তার পেয়েছেন ৮৪০ ভোট।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বাতিল ১ হাজার ৬৮১ সহ মোট ভোট পড়েছে এক লক্ষ ৬২ হাজার ৯৪৯। এ আসনে জামানত রক্ষার জন্য প্রয়োজন ২০ হাজার ৩৬৮ ভোট। কিন্তু এ আসনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের দিদারুল আলমের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জাসদের আ ফ ম মফিজুর রহমান পেয়েছেন ৪ হাজার ৪২৬ ভোট। আরও দু’প্রতিদ্বন্দ্বি ওয়ার্কার্স পার্টির দিদারুল আলম চৌধুরী দু’হাজার ২১২ ভোট এবং জেপি’র (মঞ্জু) প্রার্থী অ আ ম হায়দার আলী পেয়েছেন ১ হাজার ২৫০ ভোট।

সীতাকুণ্ডে জামানত হারানো প্রার্থী অ আ ম হায়দার আলী চৌধুরী বলেন, সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন কেন্দ্রে আমার এজেণ্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। সেখানে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে। কিন্তু কারচুপি করে সেখানে ভোটের হার বেশি দেখানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম-৯ (কোতয়ালী-বাকলিয়া) আসনে বাতিল ১ হাজার ৩৭৪ সহ মোট ভোট পড়েছে ৮৮ হাজার ১৫৫। এ আসনে জামানত রক্ষার জন্য প্রয়োজন ১১ হাজার ১৯ ভোট। কিন্তু এ আসনে বিজয়ী জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ওয়ার্কার্স পার্টির অ্যাডভোকেট আবু হানিফ পেয়েছেন ৩ হাজার ৫৯৯ ভোট। আরও দু’প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনএফ’র আরিফ মঈনুদ্দিন পেয়েছেন এক হাজার ৭৬২ ভোট এবং ন্যাপের আলী আহমেদ নাজির পেয়েছেন ১ হাজার ৬৪১ ভোট।

ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবু হানিফ  বলেন, বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসাররা সরাসরি লাঙ্গল মার্কায় সিল মারার জন্য ভোটারদের প্রভাবিত করেছেন। অনেক কেন্দ্রে আমার এজেণ্টদের ঢুকতেই দেয়া হয়নি। যারা ঢুকেছেন তাদের ১২টার পর বের করে দেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে বাতিল ৯৫১ সহ মোট ভোট পড়েছে ৬৭ হাজার ৫৩৯। এ আসনে জামানত রক্ষার জন্য প্রয়োজন ৮ হাজার ৪৪২ ভোট। কিন্তু এ আসনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের এম এ লতিফের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জাতীয় পার্টির কামাল উদ্দিন চৌধুরী পেয়েছেন ১ হাজার ৯৯০ ভোট। এছাড়া জাসদের প্রার্থী জসীম উদ্দিন বাবুল পেয়েছেন ৫৬০ ভোট।

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে বাতিল ১ হাজার ৮২৪ ভোটসহ মোট ভোট পড়েছে ১ লক্ষ ৪০ হাজার ২৩৫। এ আসনে জামানত রক্ষার জন্য প্রয়োজন ১৭ হাজার ৫২৯ ভোট। কিন্তু এ আসনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের সামশুল হক চৌধুরীর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জাতীয় পার্টির সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী পেয়েছেন ১০ হাজার ১৯৭ ভোট।

চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনে বাতিল ১ হাজার ৭৫৯ ভোটসহ মোট ভোট পড়েছে ১ লক্ষ ৮৮ হাজার ৭৬। এ আসনে জামানত রক্ষার জন্য প্রয়োজন ২৩ হাজার ৫০৯ ভোট। কিন্তু এ আসনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জাতীয় পার্টির তপন চক্রবর্তী পেয়েছেন ৫ হাজার ৪১৮ ভোট। বিএনএফ’র প্রার্থী নারায়ণ চক্রবর্তী পেয়েছেন এক হাজার ৯৫৪ ভোট।

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে বাতিল ১ হাজার ১৮৯ ভোটসহ মোট ভোট পড়েছে ১ লক্ষ ৬ হাজার ৭৬৭। এ আসনে জামানত রক্ষার জন্য প্রয়োজন ১৩ হাজার ৩৪৫ ভোট। কিন্তু এ আসনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের ড.আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভির নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনএফ’র জয়নাল আবেদিন কাদেরি পেয়েছেন ৪ হাজার ৪৪৮ ভোট।

জয়নাল আবেদিন কাদেরি  বলেন, সাতকানিয়া, লোাহাগাড়াই কোন হিন্দু ভোটকেন্দ্রে আসেনি। কোন কেন্দ্রে ৩০-৪০ ভোটের বেশি পড়েনি। আমি যেসব ভোট পেয়েছি সেখানে একটিও জাল ভোট নেই। আমাকে ভোট দিয়েছে এমন অনেক ব্যালট প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাক্স থেকে ফেলে দিয়েছে। এভাবে আমার নিশ্চিত জয় নদভির লোকেরা কেড়ে নিয়েছে।

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে বাতিল ১ হাজার ২৮৫ ভোটসহ মোট ভোট পড়েছে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ৯৮৮। এ আসনে জামানত রক্ষার জন্য প্রয়োজন ১৯ হাজার ৪৯৮ ভোট। কিন্তু এ আসনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের মোস্তাফিজুর রহমানের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জেপির (মঞ্জু) অ আ ম হায়দার আলী পেয়েছেন ৬ হাজার ৮৪৮ ভোট।

হায়দার আলী বলেন, বাঁশখালীতে ব্যালট বাক্স উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে আনার পর কারচুপি হয়েছে। সেখানে নৌকা মার্কার ব্যালটে সিল মারা হয়েছে। বাঁশখালীতে কোন কেন্দ্রে দুপুর ১টা পর্যন্ত ৩-৪টি’র বেশি ভোট পড়েনি। অথচ সেখানে ৫৪ শতাংশ ভোট পড়েছে দেখানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ