চীনের কেন্দ্রীয় শহর উচান সম্প্রতি একটি খসড়া অধ্যাদেশ প্রকাশ করেছে। এ খসড়া অধ্যাদেশে প্রায় ১৭ হাজার ইয়েনের উপরে আয় করা অবিবাহিত মাকে বিবাহবহির্ভূত সন্তান থাকার কারণে মোটা অংকের জরিমানা করা হয়েছে।
চীনে সম্প্রতি সন্তানধারণের পর অবৈধ গর্ভপাত এবং সন্তান জন্মদানের পর সদ্যোজাত সন্তানকে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে।
এই নিয়মটি চীনের দীর্ঘমেয়াদী পরিবার পরিকল্পনা নীতির সহায়ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীনে এক সন্তান নীতি চালু রয়েছে। তবে উচানের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম খসড়া অধ্যাদেশটিতে অন্তুর্ভুক্ত জরিমানা সিঙ্গেল মায়েদের বিরুদ্ধে সুবিচার বলে উল্লেখ করে। বিবাহবহির্ভূত সন্তান সংক্রান্ত মামলাগুলো অনেক জটিল হয় এবং সুবিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।
তবে রাষ্ট্র পরিচালিত ‘গ্লোবাল টাইমস নিউজপেপার’ এর সম্পাদকীয়তে বলা হয়, এই খসড়া অধ্যাদেশটিতে শুধু মায়েদের জরিমানা করা হচ্ছে। অথচ যে পিতার জন্য বিষয়টি ঘটে তার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই আইনটি গরিবদের জন্য অনেক ক্ষতিকর হবে। ধনীদের ওপর এই আইনের কোনো প্রভাব পড়বে না। এই খসড়াটি সামাজিক ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার প্রতি অপমানজনক।
শুক্রবার প্রকাশিত ওই খসড়া অধ্যাদেশের ২৬ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়, যেসব অবিবাহিত মায়েরা সন্তানের ব্যাপারে তার পার্টনারের লাইসেন্স দেখাতে না পারবে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে অন্য দম্পতির সন্তান বহন করবে তাকে সামাজিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে জরিমানা দিতে হবে।
বেকারত্ব প্রবণ উচান এলাকায় বার্ষিক গড় আয় ১৭ হাজারের ইয়েনের উপরে যেসব মহিলাদে ছয়বার পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে। চীনের অন্যান্য প্রদেশেও এই ধরনের আইন গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বেইজিং ও গুয়াঙডং অন্যতম।
গত সপ্তাহে উপকূলবর্তী জিজিয়াং প্রদেশে পাইপের ভেতর থেকে সদ্যোজাত এক শিশুকে উদ্ধারের পর অবিবাহিত মায়েদের সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি আলোচনায় চলে আসে। উদ্ধারকৃত ওই বাচ্চার ২২ বছর বয়সী মা পুলিশকে শিশুটির দুর্দশার বিষয়ে অবহিত করেন। তিনি নিজেকে শিশুটির বহনকারী বলে দাবি করেন। পুলিশ হত্যা চেষ্টা হিসেবে ওই শিশুর পক্ষে মামলা করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত পুলিশ এটাকে দুর্ঘটনা বলে উল্লেখ করেছে। শিশুটি বর্তমানে ওই মা ও দাদা-দাদীর সাথে আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকে আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে, মন থেকে নয়।
উল্লেখ্য, চীনের সমাজে অবিবাহিত মায়েদের ঘৃণার চোখে দেখা হয়। চীনে প্রচলিত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি অবিবাহিত মায়েদের অস্বস্তিকর ও অসহায় অবস্থায় ফেলে দেয় বলে অভিযোগ করেছে বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।