উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ইসি। তবে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো দলীয়ভাবে প্রার্থী না দেওয়ায় ভোটের আমেজ সেভাবে নেই। বুধবার (৮ মে) সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলবে।
গত ২১ মার্চ ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলায় ভোট হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে নোয়াখালীর হাতিয়া, মুন্সীগঞ্জ সদর, বাগেরহাট সদর, ফেনীর পরশুরাম ও মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার সব পদের প্রার্থীরা বিনাভোটে বিজয়ী হয়েছেন। অর্থাৎ, এই পাঁচ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোটের প্রয়োজন পড়ছে না। অন্যদিকে, উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ, মৃত্যুজনিত, প্রশাসনিক ও ধাপ পরিবর্তনের কারণে আটটি উপজেলার ভোট স্থগিত করেছে ইসি। শেষ পর্যন্ত প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে।
এ ছাড়া বিশেষ এলাকায় (পার্বত্য ও দুর্গম এলাকা) সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ বা ২১ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া উপজেলার আয়তন, ভোটার সংখ্যা ও ভোটকেন্দ্রের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রতি উপজেলায় দুই থেকে চার প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করবেন। উপকূলীয় এলাকার দ্বীপাঞ্চলে কোস্টগার্ড মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। ভোটকেন্দ্রে আনসার ব্যাটালিয়ন মোবাইল অথবা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোটগ্রহণের আগের দুদিন, ভোটগ্রহণের দিন ও ভোটগ্রহণের পরের দুদিন মোট পাঁচ দিন নিয়োজিত থাকবে।
এ নির্বাচনে তিনটি পদে এক হাজার ৬৬৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫৭০, ভাইস চেয়ারম্যান ৬২৫ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৪০ জন প্রার্থী রয়েছেন। তবে ভোটের আগেই এই ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৮, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ করে অর্থাৎ মোট ২৮ জন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। প্রথম ধাপে ২২টিতে ইভিএম এবং বাকিগুলোতে ব্যালটে ভোট হবে। প্রথম ধাপে উপজেলার আওতাভুক্ত ৯১ পৌরসভা, ১২২৩ ইউপি রয়েছে। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১০ হাজার ৪৯১, ভোটকক্ষ ৭৪ হাজার ২৬৩, অস্থায়ী ভোটকক্ষ সাত হাজার ৮৬৪টি। মোট ভোটার সংখ্যা দুই কোটি ৮৫ লাখ আট হাজার ৯৪০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ এক কোটি ৪৩ লাখ ৮৫ হাজার ২৬১, নারী এক কোটি ৪০ লাখ ২৩ হাজার ৪৯৮জন। ১৭০ জন হিজড়া ভোটার রয়েছেন।
ভোটকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে আজ রাত ১২টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকায় ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, পিকআপ, ট্রাক, লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত বোটসহ (নির্দিষ্ট রুটে চলাচলকারী ব্যতীত) অন্যান্য যানবাহন চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া ইতোমধ্যে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। এদিকে, ভোটগ্রহণের সাত দিন আগে ও ভোটগ্রহণের পরবর্তী সাত দিন পর্যন্ত লাইসেন্সধারীরা অস্ত্রসহ চলাচল না করতে কিংবা বহন ও প্রদর্শন না করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে নির্দেশনা জারি করেছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটগ্রহণের তিন দিন পূর্ব পর্যন্ত আচরণবিধি প্রতিপালন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রতিরোধে প্রতি উপজেলায় একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট এবং ভোটগ্রহণের তিন দিন পূর্ব থেকে ভোটগ্রহণের পরের দিন পর্যন্ত প্রতি তিন ইউনিয়নের জন্য একজন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া ভোটগ্রহণের দুদিন পূর্ব থেকে ভোটগ্রহণের দুদিন পর পর্যন্ত প্রতি উপজেলায় একজন করে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন।
এদিকে বিএনপি-জামায়াত ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। ফলে অনেকটাই নির্দলীয় ভোট হচ্ছে। বিশেষ করে বেশিরভাগ উপজেলায় আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের লড়াই হচ্ছে। কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে।