মঙ্গলবার, অক্টোবর ১৫, ২০২৪
প্রচ্ছদটপডিসিসি নির্বাচন নিয়ে ফের অনিশ্চয়তা

ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে ফের অনিশ্চয়তা

ccccccccccccশুরুটা ২০০৭ সালের মে মাসে। এ মাসেই অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচনের মেয়াদ শেষ হয়। ফখরুদ্দিন-মইন উদ্দিনের অসাংবিধানিক তত্বাবধায়ক সরকারের ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামানোর এতোটুকু সময় ছিলো না। ঢাকাবাসীর হতাশার শুরু এখান থেকেই।

ফখরুদ্দিন-মইন উদ্দিনের সরকার ক্ষমতায় ছিলো দুইবছর। ২০০৭ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালীন এই অনির্বাচিত সরকার গায়ে পড়ে অনেক কাজ করলেও ডিসিসি নির্বাচনের ব্যাপারে এক ধরনের নিরবতা পালন করে। ফলে ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে ঢাকাবাসীকে অপেক্ষায় থাকতে হয়।

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট সরকার শপথ নেয়। ফখরুদ্দিন-মইন উদ্দিনের অনির্বাচিত সরকারের দুই বছরের শাসনামলের অবসান হয়। মহাজোট সরকারের শপথগ্রহণের মধ্য দিয়ে ঢাকাবাসীর স্বপ্ন দেখা শুরু হয়। তারা ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে আশার আলো দেখতে শুরু করেন।  সিটি মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ব্যর্থতা, নগরবাসীর সীমাহীন দুর্ভোগ, নগরজুড়ে যানজট, জলাবদ্ধতা ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি-অনিয়ম এসবই ঢাকাবাসীকে একটি নির্বাচনের জন্য অস্থির করে তোলে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর নগরবাসী আশা করেছিল, হয়তো অচিরেই তাদের অপেক্ষার পালা শেষ হবে। কিন্তু একদিন দুইদিন করে (৬-১-২০০৯ থেকে ২৯-১১-২০১১) প্রায় তিন বছর কেটে গেলেও ডিসিসি নির্বাচন না হওয়ায় আবারো হতাশ হয়ে পড়ে ঢাকাবাসী। এরই মধ্যে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হওয়ায় ২০০২ সালে নির্বাচিত হওয়া মেয়র ও কাউন্সিলররা অতিরিক্ত প্রায় চার বছর দায়িত্ব পালন করেন।  নগরবাসীর সেবা বাড়ানোর কথা বলে ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর ঢাকাকে দুই ভাগে ভাগ করে মহাজোট সরকার। ৩৬টি ওয়ার্ড নিয়ে ঢাকা সিটি উত্তর ও ৫৬টি ওয়ার্ড নিয়ে ঢাকা সিটি দক্ষিণ দুই ভাগে ভাগ হয় ডিসিসি। সরকারের এ সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। পাশাপাশি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন মহল থেকে সরকারে এ উদ্যোগের সমালোচনা করা হয়।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডিসিসি নির্বাচন না দেয়ার কৌশল হিসেবে সরকার ঢাকাকে বিভক্ত করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকাবাসীর হতাশা বেড়ে যায়। বিভক্ত দুই ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে দুইজন প্রশাসককে দায়িত্ব দেয় সরকার। অনির্বাচিত ব্যক্তিদের কাছে দায়িত্ব দেয়ায় নগরবাসীর ক্ষোভ বাড়ে। জনপ্রতিনিধিত্বহীন বিভক্ত নগরবাসীর  হতাশা বহুগুণ বেড়ে যায়।  এভাবেই কেটে যায় আরো এক বছর। ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল মাসে অনেকটা আড়মোড়া ভেঙে বিভক্ত ডিসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে আবারো আশায় বুক বাধে নগরবাসী।  ঢাকাবাসীর আশার প্রদীপ নিভে যেতে বেশি দিন লাগেনি। ২০১২ সালের ১৬ এপ্রিল এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ডিসিসি নির্বাচন স্থগিত করেন।

 তফসিল ঘোষণার পরও ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও সীমানা পুনর্নির্ধারণ না করার অভিযোগে হাইকোর্টে রিট আবেদনের মাধ্যমে স্থগিত হয়ে যায় ঢাকাবাসীর বহু কাঙ্খিত নির্বাচন। এবার ঢাকাবাসী হতাশ না হয়ে ডিসিসি নির্বাচনের আশাই ছেড়ে দেয়।

 ২০১৩ সালের ১৩ মে ডিসিসি উত্তর ও দক্ষিণের নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হাইকোর্টের আদেশ প্রত্যাহার হলে ঢাকাবাসী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে থাকে। অনেক প্রার্থীই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। এর মাত্র কয়েকদিন পর আবারো নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। শুরু হয় সুলতানগঞ্জ নামে নতুন নাটক। হাইকোর্ট থেকে আদেশ প্রত্যাহার সত্ত্বেও সুলতানগঞ্জকে ওয়ার্ডে অন্তর্ভূক্তিকরণ আইনি জটিলতা থাকার কারণে আবারো আটকে যায় ডিসিসি নির্বাচন।

 চলতি বছরের ১৩ মে হাইকোর্ট থেকে ডিসিসি নির্বাচন সংক্রান্ত সব সমস্যা সমাধান করে দেয়ার পর ২২ মে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০১২ সালের ২ জানুয়ারি সুলতানগঞ্জ ইউনিয়নের চরওয়াশাপুর এলাকা ছাড়া বাকি সব এলাকা ডিসিসি দক্ষিণের অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। কিন্তু এলাকাটি ডিসিসি দক্ষিণের কোন ওয়ার্ডে ফেলা হয়েছে তা বলা হয়নি। তাই সুলতানগঞ্জকে ওয়ার্ডে অন্তর্ভুক্তিকরণ জটিলতা সমাধান না হলে ডিসিসি নির্বাচন করা যাচ্ছে না।’ এরপর ২ জুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রবিকউদ্দীন আহমদ ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে আশার বাণী শোনান।

 তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুলতানগঞ্জ নিয়ে আইনি জটিলতা দূর হয়েছে। সুলতানগঞ্জকে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে অন্তর্ভুক্তিকরণ গেজেট নির্বাচন কমিশনে এসে পৌঁছেছে। এ সপ্তাহের মধ্যেই ডিসিসি নির্বাচনের তফসিলের সিদ্ধান্ত হবে।’  কিন্তু সকাল হতে না হতেই ঢাকাবাসী ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে সিইসির কাছ থেকে আবারে হতাশার বাণী শোনেন।

 কাজী রকিবউদ্দীন বলেন, ‘সুলতানগঞ্জকে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে অন্তর্ভুক্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় যে গেজেট প্রকাশ করেছে সেটিকে তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করতে সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯ এর ৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী আরেকটি গেজেট প্রকাশ করতে হবে। গেজেটটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে আমরা পাইনি তাই নির্বাচন কমিশন ডিসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।’

 এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মাদ আবদুল মোবারক  বলেন, ‘স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে গেজেটটি সংশোধনের জন্য আবার পাঠানো হয়েছে। সংশোধিত হয়ে এলে কমিশন সভায় তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত হবে।’

 বার বার ঢাকা সিটির নির্বাচন পেছানোর ব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বার বার নির্বাচন পেছানো সরকারের একটি কৌশল। সরকার একের পর এক জটিলতা সৃষ্টি করে ডিসিসি নির্বাচনকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে।’

 তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে জনসমর্থন হারিয়ে সরকার নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছে। নির্বাচন না দিয়ে সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। নগরবাসীর মৌলিক অধিকার হরণ করেছে।’

 সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে একের পর এক নাটক মঞ্চস্থ হওয়ায় ঢাকাবাসীর মনে এখন একটাই প্রশ্ন, ডিসিসি নির্বাচন আদৌ কী হবে?

 ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে অবস্থিত আজিমপুরের বাসিন্দা মোক্তার হোসেন  বলেন, ‘আপনারা আর কখনো ঢাকা সিটি নির্বাচনের ব্যাপারে কথা বলতে আসবেন না। আমরা নির্বাচনের আশা ছেড়ে দিয়েছি।’

আরও পড়ুন

সর্বশেষ