মঙ্গলবার, অক্টোবর ১৫, ২০২৪
প্রচ্ছদবিনোদন সময়ফুরফুরে যৌবনের জয়গান

ফুরফুরে যৌবনের জয়গান

image_46019_2ওয়েক আপ সিড-এর পর বেশ কিছু দিনের হাইবারনেশন পিরিয়ড। বলিউডের অধুনা কনিষ্ঠতম পরিচালক অয়ন মুখার্জির দ্বিতীয় ছবির প্রোমোর রং-ঢঙেও বেশ জানান দিয়েছিল যে, আর যাই হোক নবীন ব্রিগেড এই ছবি দেখবে। রিলিজের ডেটটা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য গুগল-ও অন্তত এক সপ্তাহ ধরে জেরবার অবস্থায় ছিল। গত হপ্তায় এ ছবিই ছিল বেস্ট হিট অন দ্য নেট।

আরও একটা ব্যাপার জানানো ভাল। এ ছবির রিভিউ লেখা হয়ে উঠতই না। কলকাতার কোনও হলে টিকিট মেলাই ছিল দুস্কর। যদিও বা ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো-তে কিছু সিট ছিল, কাউন্টারে জানা গেল ছবি শুরু হওয়ার পনের মিনিট বাদেও না কি টিকিট বিক্রি হয়েছে! অগত্যা একদিন দেরিই হল। কলকাতা শহরে রণবীরের ফ্যানের সংখ্যা উত্তরোত্তর ঊর্ধ্বগামী। বিশেষত অনুরাগ বসুর বরফির পর থেকে রণবীর তো দার্জিলিং-এর, মানে, এ বঙ্গেরই অঙ্গ। ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি-র এমন সাড়া-জাগানো চিত্র তাই কিছু বিচিত্র নয়।
ফুরফুরে যৌবনের জয়গান। হাসি ঠাট্টা আনন্দ মজার মোড়কে যে গল্পটা পর্দায় দেখালেন অয়ন, সেটার মূল আরও গভীরে। চার বন্ধুর গল্প। পড়াশোনার জীবন থেকে আট বছর বাদে বাস্তব জীবনের মুখোমুখি। বানি অর্থাত্‍ রণবীর কপূরের চরিত্রটি প্রাণবন্ত উচ্ছ্বল এক যুবকের। বাবা ফারুখ শেখ আর সত্‍ মা তনভি আজমি যার জন্য উদ্বিগ্ন। দীপিকা পাড়ুকোন পড়ুয়া মেজাজের। মানালিতে বেড়াতে গিয়েও বই নিয়ে বসে থাকে। অভি, মানে আদিত্য রায় কপূর ও কল্কি কোচলিনও বানির দুই অভিন্নহৃদয় বন্ধু। প্রথমার্ধ মানালির বরফঘেরা অপূর্ব চিত্রাবলির মধ্যেই কেটে যায়। মন ভরিয়ে দেয় প্রত্যেকের উচ্ছল অভিনয়, টানটান স্ক্রিপ্টের বাঁধন আর ক্যামেরার কিছু মনে রাখার মত শট, যেগুলো শুধুই প্রকৃতির সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য তোলা হয়নি। চার চরিত্রের আবেগের উত্থানপতনের সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে তোলা হয়েছে। স্ক্রিন স্পেসেও অন্যতম চরিত্র হয়ে উঠেছে মানালি।
বন্ধুতা নিয়ে বলিউডের ছবির সংখ্যা কিছু কম নয়। এবং প্রায় নব্বই শতাংশই বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবসাই শুধু দেয়নি, দর্শকমনে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে। থ্রি ইডিয়টস থেকে জিন্দগি না মিলেগি দোবারা। কাই পো চে কেও ফেলা যাবে এই ঘরানায়। শুধু তারকার আকর্ষণই নয়, সুসংবদ্ধ গল্পও এক অন্যতম কারণ। বারণ-না-মানা, বাধা-না-মানা, জীবন সম্পর্কে অত্যুচ্চ ধারণা, ভবিষ্যত্‍ না ভেবে বর্তমানের প্রতি মুহূর্ত নিয়ে বেঁচে থাকা। এই সব মিলিয়েই একটা অন্যরকম জীবনদর্শন দেখিয়েছেন অয়ন। ওয়েক আপ সিড-এও ছিল একটি ছেলের কথা, যে শুয়ে-বসে ঘরের ছেলে হওয়ার মতো কঠিন কাজটা বেছে নিয়েছিল। স্ক্রিপ্ট অসম্ভব জোরালো। এ ছবি জন্মও দিয়েছিল এক তারকা অভিনেতার- রণবীর কপূর। আর ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানির রণবীরকে আরও বেশি পরিণত মনে হল। সঙ্গে অনুভূত হল পরিচালক ও অভিনেতার কেমিস্ট্রিও।
আশিকি-টু বক্স অফিসে একশো কোটির ল্যান্ডমার্ক ছাড়িয়েছে। এই ছবিও আদিত্য রায় কপূরের ফিল্মোগ্রাফিতে পাকা জায়গা করে নিতে চলেছে। দীপিকা পাডুকোনও বেশ প্রাণবন্ত। কল্কি কোচলিনের ফ্রেশ ফ্লেভারটা এখানেও পাওয়া যাচ্ছে, এতগুলো ছবি হয়ে যাওয়ার পরেও। আর সবশেষে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য, মাধুরী দীক্ষিতের একটি নাচ। যাকে আইটেম বললে কিছুই বলা হয় না। বহুদিন পরে স্ক্রিনে আবার মাধুরী ম্যাজিক। তাঁর উধাও হয়ে যাওয়াটা যে বলিউডে শূন্যস্থানই সৃষ্টি করেছিল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এবার আসি ছবির গানে। বদতমিজ দিল এখনই বাজারে সুপারহিট। কিন্তু ব্যক্তিগত মতানুসারে, তেমন মনে দাগ কাটার মতো নয়। কিছুটা খামতি আছেই সঙ্গীত পরিচালকের। তেমন কোনও নতুন ইঙ্গিতবাহী কিছু দিতে পারেননি। কালের স্রোতেই ভেসেছেন বলা চলে।
ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি একান্তই দলে দলে দেখার ছবি। ছুটির মরসুমে সপরিবারেও দেখতে পারেন সময়টা দারুণ কাটবে। বক্স অফিস এখন আশায় বুক বাঁধছে। একশো কোটি ক্লাব মেম্বার হতে খুব বেশি দেরি নেই বলেই মনে হচ্ছে।
আরও পড়ুন

সর্বশেষ