রবিবার, মে ৫, ২০২৪
প্রচ্ছদআরো খবর......ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন ২ সেপ্টেম্বর, শেষ হচ্ছে অপেক্ষার পালা

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন ২ সেপ্টেম্বর, শেষ হচ্ছে অপেক্ষার পালা

দুদিন পরই খুলছে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। বাধাহীন যাত্রার নতুন পথ পাচ্ছেন রাজধানীবাসী। আগামী শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিমানবন্দর প্রান্তে উদ্বোধনের পর ফার্মগেট পর্যন্ত এগারো কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে বক্তব্য রাখবেন আগারগাঁওয়ে আয়োজিত সুধী সমাবেশে। পরদিন ১৩টি পয়েন্ট দিয়ে চলাচল করতে পারবেন সর্বসাধারণ।

দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রস্তুত পুরোপরি। এখন চলছে সাজসজ্জার কাজ। বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বাহারি রংয়ের পতাকাই জানান দিচ্ছে চলে আসছে উদযাপনের ক্ষণ। এদিকে, টোল প্লাজার প্রান্তে চলছে ট্রায়াল। নিজস্ব পরিবহনগুলো বারবার আসা-যাওয়া করিয়ে ঝালিয়ে নিচ্ছে সব ঠিকঠাক আছে কিনা!

শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) টোল দিয়ে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ফলক উন্মোচন করে পাড়ি দেবেন বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট – এগারো কিলোমিটারের এ পথ। সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফলক উন্মোচন করবেন; এরপর টোল দিয়ে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে আসবেন, যেখানে সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে বক্তব্য রাখবেন তিনি।

পরদিন সকাল ৬টা থেকে এ পথ খোলা হবে সাধারণের জন্য। বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট যেতে কাওলা, কুড়িল আর গলফ ক্লাবে থাকবে উঠার ব্যবস্থা। একদিকে নামা যাবে বনানী, মহাখালী আর ফার্মগেটে। অন্যদিকে, তেজগাঁও থেকে বিমানবন্দর যেতে বিজয় সরণি ওভারপাসের দুই প্রান্ত আর বনানী থেকে থাকবে উঠার ব্যবস্থা। নামা যাবে মহাখালী, বনানী, কুড়িল ও বিমানবন্দর এলাকা থেকে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম সাখাওয়াত আকতার বলেন, কাওলা পয়েন্টে একটা টোল প্লাজা আছে। পরবর্তীতে কুড়িল এবং মহাখালী, বনানী  এবং তেজগাঁওতে আছে টোল প্লাজা রাখা হয়েছে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলতে পারবে না দুই চাকা আর তিন চাকার কোনো বাহন। বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত পুরো প্রকল্প ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। বর্তমান প্রকল্পে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণ কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত।

 এ অংশের মেইন লাইনের দৈর্ঘ্য ১১.৫ কি.মি. এবং র‍্যাম্পের দৈর্ঘ্য ১১.০ কি.মি.। র‍্যাম্পসহ মোট দৈর্ঘ্য ২২.৫ কি.মি.। এ অংশে উঠানামার জন্য মোট ১৫টি র‍্যাম্প (এয়ারপোর্ট-২, কুড়িল-৩, বনানী-৪, মহাখালী-৩, বিজয় সরণি-২ ও ফার্মগেট-১) রয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি র‍্যাম্প যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

১ আগস্ট সেতু বিভাগের উপ-সচিব আবুল হাসানের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল নির্ধারণ   করা হয়েছে। এতে সর্বনিম্ন টোল ৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চার শ্রেণির যানবাহনের মধ্যে কার, ট্যাক্সি, জিপ, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল, মাইক্রোবাস (১৬ সিটের কম) এবং হালকা ট্রাকের (৩ টনের কম) টোল ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ টাকা। সব ধরনের বাসের (১৬ সিট বা এর বেশি) ক্ষেত্রে ১৬০ টাকা টোল ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। মাঝারি ধরনের ট্রাকের (৬ চাকা পর্যন্ত) টোল ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২০ টাকা এবং বড় ট্রাকের (৬ চাকার বেশি) ক্ষেত্রে ৪০০ টাকা টোল ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এ টাকার মধ্যে টোল এবং ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত করা আছে।

প্রকল্পের নথি অনুসারে জানা যায়, রেল লাইন ধরে এ উড়াল সড়ক শুরু হয়ে বিমানবন্দর এলাকার কাওলা থেকে সরাসরি গিয়ে মিলবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে। মূল এলিভেটেড অংশের দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কি.মি.। প্রকল্পে উঠানামার জন্য মোট ২৭ কি.মি. দীর্ঘ ৩১টি র‍্যাম্প রয়েছে। র‍্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬.৭৩ কি.মি.। আপাতত লক্ষ্য বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত চালুর।  এ প্রকল্পের সর্বমোট কাজ শেষ হয়েছে ৬৫ শতাংশ। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পুরো প্রকল্প শেষ হলে রাজধানীকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের (কুতুবখালী) সঙ্গে যুক্ত করবে এক্সপ্রেসওয়েটি। প্রকল্পের ভৌত কাজের প্রথম ধাপে ১৪৮২টি পাইল, ৩২৬টি পাইল ক্যাপ, ৩২৫টি কলাম, ৩২৫টি ক্রস বিম, ৩ হাজার ৪৮টি আই গার্ডার নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া ৩ হাজার ৪৮টি আই গার্ডার এবং ৩২৮টি ব্রিজ স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এ ভৌত কাজের অগ্রগতি ৯৭.২৮ শতাংশ। প্রকল্পের ভৌত কাজের দ্বিতীয় ধাপে ১ হাজার ৬৩৩টি পাইল, ৩৩৫টি পাইল ক্যাপ, ৩২৩টি কলাম, ৩২০টি ক্রস বিম, ২ হাজার ৩০৫টি আই গার্ডার নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া ২ হাজার ৪৪টি আই গার্ডার এবং ২৩৩টি ব্রিজ স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এ ভৌত কাজের অগ্রগতি ৫৪.২২ শতাংশ।

সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে (পিপিপি) তিন ধাপে উড়াল সড়ক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম ধাপে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণ কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপে বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত। তৃতীয় ধাপে মগবাজার লেভেল ক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। এ উড়াল সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কিলোমিটার। ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রকল্পটির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখছে। এ প্রকল্পের নির্মাণকাল ধরা হয়েছে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।

জানা গেছে, এ উড়াল সড়কের রুট হচ্ছে কাওলা, কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। পুরো পথই রেললাইন ঘেঁষে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে দুই হাজার ৪১৩ কোটি টাকা।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করছেন ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড, চায়না শানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপের (সিএসআই) এবং সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ