সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
প্রচ্ছদইন্টারভিউআজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন

আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন

আদালত প্রতিনিধিঃ (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছয়টি বিষয়ে অভিযোগ গঠন করেছে আন্তর্জাতিক অবরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টায় বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ অভিযোগ গঠন করেন।

আজহারের বিরুদ্ধে ৬টি অভিযোগের মধ্যে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও গুরুতর জখম অভিযোগসহ সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটিও (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) রয়েছে। সব মিলিয়ে ১ হাজার ২২৫ জনকে গণহত্যা, ৪ জনকে হত্যা, ১ জনকে ধর্ষণ, ১৭ জনকে অপহরণ, ১৩ জনকে আটক ও নির্যাতন এবং শত শত বাড়িঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। অপরাধ সংঘটনের সময়সীমা একাত্তরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত।
প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ থেকে ২৭ মার্চের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাসানী (ন্যাপ) নেতা ও রংপুর শহরের বিশিষ্ট আয়কর আইনজীবী এওয়াই মাহফুজ আলীসহ ১১ জনকে অপহরণ, আটক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এরপর তাদের ৩ এপ্রিল রংপুর শহরের দখিগঞ্জ শ্মশানে নিয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামি একাত্তরের ১৬ এপ্রিল তার নিজ এলাকা রংপুরের বদরগঞ্জ থানার ধাপপাড়ায় ১৫ জন নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালিকে গুলি করে হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে।

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, এ আসামি একই বছরের ১৭ এপ্রিল নিজ এলাকা রংপুরের বদরগঞ্জের ঝাড়ুয়ারবিল এলাকায় এক হাজার ২০০-এর বেশি নিরীহ লোক ধরে নিয়ে হত্যা, গণহত্যা এবং লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে।

চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৭ এপ্রিল কারমাইকেল কলেজের চারজন অধ্যাপক ও একজন অধ্যাপক পতœীকে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে অপহরণ করে দমদম ব্রিজের কাছে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।

পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে রংপুর শহর ও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মহিলাদের ধরে এনে টাউন হলে আটকে রেখে ধর্ষণসহ শারীরিক নির্যাতন চালায়। একই সঙ্গে মহিলাসহ নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিদের অপহরণ, আটক, নির্যাতন, গুরুতর জখম, হত্যা ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এ আসামি।
ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রংপুর শহরের গুপ্তপাড়ায় একজনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। একই বছরের ১ ডিসেম্বর রংপুর শহরের বেতপট্টি থেকে একজনকে অপহরণ করে রংপুর কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাসে নিয়ে আটক রেখে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন ও গুরুতর জখম করেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, রংপুরের কারমাইকেল কলেজের একাদশ শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র থাকাকালে এটিএম আজহারুল ইসলাম জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের রংপুর শাখার সভাপতি ও ওই জেলার আলবদর বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র ও তা বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে জড়িত থেকে অপরাধ সংঘটন করেন তিনি। রংপুর ক্যান্টনমেন্টে যাতায়াতের মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। এ আসামি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের স্বজন, মুক্তিকামী বাঙালি এবং হিন্দু সম্প্র্রদায়ের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে দিতেন এবং তাদের হত্যা, গণহত্যা, আটক ও নির্যাতনে পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র করে তা বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকতেন।
এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা এসএম ইদ্রিস আলী গত বছরের ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু করে চলতি বছরের ৪ জুলাই পর্যন্ত মোট ১ বছর ৩ মাস ১১ দিনে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। তিনি ৪ ভলিউমে ৩০০ পৃষ্ঠার তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্তকালে ৬০ জনের বেশি লোকের জবানবন্দি গ্রহণ করা হলেও এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ২৭ জনকে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদেশে গত বছরের ২২ আগস্ট মগবাজারের নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় এটিএম আজহারুল ইসলামকে। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
আরও পড়ুন

সর্বশেষ