শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪
প্রচ্ছদঅর্থ ও বানিজ্য সময়চলতি বছর চালু হচ্ছে বন্ড ম্যানেজমেন্ট অটোমেশন

চলতি বছর চালু হচ্ছে বন্ড ম্যানেজমেন্ট অটোমেশন

বন্ড ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনতে ও অপব্যবহার রোধে রপ্তানিমুখী সকল বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘বন্ড ম্যানেজমেন্ট অটোমেশন’ প্রকল্প হাতে নেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরমধ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বরে অনলাইন বন্ড লাইসেন্স অ্যাপ্লিকেশন মডিউল উদ্বোধন করে এনবিআর। উদ্বোধনের পর থেকে বন্ড লাইসেন্সের অনুমোদন নেয়া হচ্ছে অনলাইনে। ফলে সেবাগ্রহীতাদের আর ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নথিপত্র নিয়ে ছুটতে হচ্ছে না। লাইসেন্স মডিউল ছাড়াও বাকি প্রায় ২৩টি কাজ প্রায় শেষের পথে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বন্ড ম্যানেজমেন্ট অটোমেশন’ প্রকল্পের মেয়াদ গত জুনের ৩০ তারিখ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য এনবিআরের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে (আইআরডি) প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। তবে এখনো অনুমোদন পাওয়া যায়নি। তবে সফটওয়্যারের কাজ চলমান রয়েছে। এ বছরের শেষের দিকে পুরোপুরি অটোমেশন চালু হবে আশা করা যাচ্ছে।

জানা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে সাড়ে ৬ হাজারের কাছাকাছি বন্ড লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই বিশাল সংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে অটোমেশনের আওতায় আনা সম্ভব হলে বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি ঠেকানো যাবে। এছাড়া পুরোপুরি অটোমেশন চালু হলে বন্ড কাস্টমসের কর্মকর্তারা বন্ডের রেজিস্টার মডিউলে কোন প্রতিষ্ঠানের গুদামে কি পরিমাণ পণ্য আছে সেটি দেখতে পারবেন। এছাড়া কি পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়েছে, সেটিও যাচাই করতে পারবেন।

চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কর্মকর্তারা বলছেন, বন্ড ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন চালু হয়ে গেলে কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি পাবে। প্রায় সময় বিভিন্ন বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের গুদাম পরিদর্শন করে অনিয়ম চিত্র দেখা যায়। দেখা যায়, বন্ড সুবিধায় আমদানি করা পণ্য গুদামে পাওয়া যায় না। প্রায় সময় প্রতিষ্ঠান মালিক পণ্য অন্যত্র সরিয়ে নেন কিংবা খোলা বাজারে বিক্রি করে দেন। ফলে সরকারও প্রচুর রাজস্ব হারায়। এছাড়া কাস্টমস বন্ড অফিসেও জনবলের সংকট রয়েছে। তাই নিয়ম করে সকল প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে বন্ড ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি অটোমেশন করা গেলে কম্পিউটারে বসেই কোন প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধায় কি পরিমাণ পণ্য আমদানি করেছে, মজুদ কত এবং তা রপ্তানি করেছে তা সহজেই নজরদারি করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস এঙেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এঙপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ বেলাল বলেন, বন্ড অফিসের কর্মকর্তারা প্রায় সময় ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ তুলেন। এটি কিন্তু ঠিক না। পোশাক কারখানা ও এঙেসরিজ কারখানার রেজিস্টার চেক করলে সহজে দেখা যায় পণ্য সরানো হয়েছে কিনা। আমরা বন্ড সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করি এবং পণ্য তৈরি করে রপ্তানি করি। তবে বন্ড সুবিধায় অপব্যবহারের সাথে কিছু ব্যবসায়ী জড়িত থাকতে পারে। আমরা এমনও শুনি, এসব ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে একশ্রেণীর কাস্টমস কর্মকর্তারা তাদের সহায়তা করেন। তাই অটোমেশন সিস্টেম যতদ্রুত সম্ভব চালু করা যাবে ততই ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধা হবে। এতে রাজস্ব আদায়ের প্রক্রিয়াটি অবশ্যই সহজ ও স্বচ্ছ হতে হবে।

বন্ড ম্যানেজমেন্ট অটোমেশন প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফাইজুর রহমান  বলেন, বন্ড অটোমেশন প্রকল্পের কাজ শেষ বলা যায়। আমাদের এখন বিভিন্ন বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের তথ্য উপাত্ত আর্কাইভ করার কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে লাইসেন্স মডিউল চালু হয়েছে। আমাদের প্রকল্পের মেয়াদ শেষে হয়েছে জুনে। আরো এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করি এ বছরই পূর্ণাঙ্গ বন্ড অটোমেশন চালু করতে পারবো।

উল্লেখ্য, এনিবআরের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে– বন্ড ম্যানেজমেন্ট অটোমেশন প্রজেক্টটি হাতে নেয়া ২০১৭ সালে। প্রথম দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। সেই মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত ২০২১ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য এনবিআর থেকে প্রস্তাবনা পাঠানো হলেও এখনো অনুমোদন পাওয়া যায়নি। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৩০১ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ