শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনদেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতেই দুর্ভোগ, তলিয়ে গেছে শহরের নিচু এলাকা

দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতেই দুর্ভোগ, তলিয়ে গেছে শহরের নিচু এলাকা

চলতি বর্ষা মৌসুমের তৃতীয় দিন গতকাল ভারী বর্ষণ হয়েছে নগরে। এতে তলিয়ে যায় শহরের নিচু এলাকা। সড়ক থেকে অলিগলি সবখানেই ছিল পানি আর পানি। সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। প্রধান সড়কে হাঁটু থেকে তার বেশি পানি হওয়ায় থমকে যায় যান চলাচল। পানি ঢুকে নষ্ট হয় সিএনজিসহ অনেক গাড়ি। এ সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে পথচারীদের পকেট কাটায় ব্যস্ত ছিলেন রিকশাচালকরা। এদিকে লালখান বাজার থেকে–বহদ্দারহাট পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন অংশ ডুবে যাওয়ায় দুর্ভোগ এড়াতে বিভিন্ন যানবাহন চালকরা বিকল্প হিসেবে ফ্লাইওভার বেছে নেন। কিন্তু বহদ্দারহাটে পানি থাকায় যানবাহনগুলো এগুতে পারেনি। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যাম লেগেছিল ফ্লাইওভারেও।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ভারী বর্ষণ শুরু হয় নগরে। প্রায় দেড় ঘণ্টা স্থায়ী ছিল এ বৃষ্টি। এরপরও বেলা ৩টা পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস এ তিন ঘণ্টায় ১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে।

এ দিকে প্রথম দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, ওয়াসা মোড়, কাতালগঞ্জ, কাপাসড়োলা, চকবাজার কঁচাবাজার, ফরিদারপাড়া, চান্দগাঁও আবাসিক, বারইপাড়া, বাকলিয়া ডিসি রোড, বাকলিয়া, রহমতগঞ্জ, আতুরার ডিপো, আগ্রাবাদ, জুবিলি রোড তিন পোলের মাথা, পতেঙ্গা, জিইসি মোড়, পশ্চিম খুলশী, অলংকার মোড়, আতুরার ডিপো ও মুহাম্মদপুর মাজার রোডসহ অনেক এলাকা তলিয়ে যায়। বৃষ্টি থামার পরও পানি আটকে ছিল সেখানে।

এদিকে গত রাত ৯টায় চকবাজার কাজী অফিস, ডিসি রোডে পানি জমেছিল বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল হামিদ। এর আগে বিকল ৪টার দিকেও চকবাজার আধুনিক চক সুপার মার্কেটের পূর্ব দিকে পানি জমেছিল।

দুপুরের সময় নগরের বিভিন্ন এলাকা পরির্দশন করে মানুষের দুর্ভোগের চিত্র দেখা যায়। মুরাদপুরে দেখা গেছে, সড়কের একপাশে (বহাদ্দারহাটমুখী অংশ) যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এসময় রিকশাচালকরা গন্তব্যে যেতে দাবি করে মনগড়া ভাড়া। সুমন নামে এক পথচারী আজাদীকে বলেন, রিকশাচালক ২০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা চান। বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়া দিয়েছি। তবে রিকশাচালক আলাউদ্দিন বলেন, হঠাৎ করে রাস্তায় পানি বেড়ে গেছে। রিকশা টানা যায় না। অনেক কষ্ট হচ্ছে। তাই ভাড়া একটু বেশি নিচ্ছি।

রবিন নামে অলংকার মোড়ের এক বাসিন্দা বলেন, বৃষ্টি শুরু হওয়ার ১০–১৫ মিনিটের মধ্যেই অলঙ্কার মোড়ে পানি জমে যায়। সব নালার ময়লা পানি। ময়লা পানির ভেতর হাঁটাও বিপদ। কাতালগঞ্জ এলাকায় পথচারী মনজু বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই কাতালগঞ্জ ডুবে যায়। শহরের অন্য কোথাও পানি না উঠলেও এখানে উঠবে। অথচ এই এলাকায় স্কুল, হাসপাতলের মত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। এত প্রকল্পের কাজ চলছে এরপরও আমাদের দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছে না।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কমিটির সভাপতি মোবারক আলী বলেন, প্রথম বৃষ্টি হওয়ায় খালগুলোর উজান থেকে ময়লা–আবর্জনা নিচের দিকে চলে এসেছে। এতে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মীরা খাল ও নালা–নর্দমা থেকে প্রতিবন্ধকতা অপসারণে কাজ করেছেন।

নগরে জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী আজাদীকে বলেন, শহড়জুড়ে বৃষ্টি হয়েছে। তাই পানি নামতে একটু সময় লেগেছে। এটা জলাবদ্ধতা না। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা প্রকল্পের যে ডিজাইন তাতে এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে পানি নেমে যাবে। ওই জায়গা থেকে আমাদের সন্তুষ্টির বিষয় হচ্ছে এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই পানি নেমে গেছে। দীর্ঘ সময় পানি আটকে ছিল এমন কোনো খবর আমাদের কাছে নেই।

বৃষ্টির সময় জোয়ার ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাক্তাই খালে রেগুলেটর এর কাজ এখনো শেষ হয়নি। ফলে জোয়ারের সময় পানি ঢুকে গেছে। তাই চকবাজার ও বহদ্দারহাটে পানি নামতে একটু সময় লাগে।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল বলেন, বিকেল ৩টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় পতেঙ্গায় ১৪ মিলিমিটার এবং আমবাগনে ৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আজকের পূর্বাভাস সম্পর্কে বলেন, আকাশ আংশিক মেমঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সে সাথে চট্টগ্রাম জেলার অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রহ বৃষ্টি হতে পারে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ