শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়কাল আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষনা দেবেন খালেদা জিয়া

কাল আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষনা দেবেন খালেদা জিয়া

ষ্টাফরিপোর্টার  (বিডিসময়২৪ডটকম)

নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে মরিয়া প্রধান বিরোধী দল। দাবি না মানলে আগামীকাল  আরো কঠোর কর্মসূচির দিকে এগুবে বলে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়ে রেখেছে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। এর অংশ হিসেবে আগামী সপ্তাহে ৫দিনের হরতাল আসছে। ১৮ দলের জোট নেত্রী খালেদা জিয়া ৭ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যোন থেকে এ হরতালের ঘোষনা দিবেন বলে জানা গেছে।

আন্দোলনের পথে হাঁটলেও সঙ্কট নিরসনে আলোচনাই চায় প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে দ্বিতীয়বারের মতো টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল পালন করছে দলটি। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় হরতালসহ হাইওয়ে, রেলপথ, স্থলপথ, জলপথ অবরোধ করে সারাদেশ অচল করে দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে দলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

বিরোধী দলের মতে, ফাইনাল রাউন্ডের খেলা শুরু হয়ে গেছে। এই খেলায় জয়ের কোনো বিকল্প নাই। এই খেলায় জয় না হলে অস্তিত্ব থাকবে না। ইতোমধ্যে বিএনপিসহ ১৮ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো আন্দোলন সংগ্রামের জন্য সব রকম প্রস্তুতি সমপন্ন করেছে। ১৮ দলীয় জোট চান, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হলেই তারা নির্বাচনে যাবে, অন্যথায় যাবে না। সে নির্বাচন প্রতিহত করবে বলে ঘোষনা দেয় তারা। তবে আন্দোলন কর্মসূচি নয়, সঙ্কট নিরসনে সংলাপের প্রয়োজনটাই বেশি বলে মনে করছেন দলের সিনিয়র নেতারা।

১৮ দলের নীতিনিধারনী নেতারা বলেন, ‘বার বার স্পষ্টভাবে বলেছি আমরা আলোচনা চাই। আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কটের নিরসন চাই। সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন। এজন্য দরকার একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। সেজন্যই আমরা আন্দোলন করছি। কিন্তু আমরা আন্দোলন চাই না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ঘোষণা দিলে তখন থেকেই আন্দোলন বন্ধ করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করবো।’

এমনকি দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও মঙ্গলবার রাতে ঢাকা সফররত মার্কিন কংগ্রেসম্যান স্টিভ শ্যাভেজের সঙ্গে বৈঠককালে বলেছেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া পেলেই বিএনপি সংলাপের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’

বৈঠকে খালেদা জিয়া শ্যাভেজকে আরও বলেছেন, ‘আমরা এবং বাংলাদেশের জনগণ চায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। যাতে সবাই অংশ নিতে পারে। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি। এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা করতে বিএনপি প্রস্তুত। যখনই সরকারের পক্ষ থেকে সংলাপের সাড়া পাওয়া যাবে তখনই বিএনপি সংলাপে বসতে রাজি আছে।’

সংলাপের বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা এখনো বলছি, আমরা আন্দোলনের পথে যেতে চাই না। আমরা আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় পৌঁছতে চাই। কিন্তু আন্দোলন করতে সরকার আমাদেরকে বাধ্য করছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রস্তাব সংসদে পেশ করেছি এবং আওয়ামী লীগকে চিঠিও দিয়েছি। বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়াও ফোনালাপে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, আমরা ২৯ তারিখের (২৯ অক্টোবর) পর যে কোনো স্থানে আলোচনায় বসতে রাজি। এখন সরকারকেই সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছি। কিন্তু সরকারপক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মাঝখানে সংলাপের নামে নাটক করে জনগণকে বিভ্রান্তি করার চেষ্টা করছে। শিগগিরই সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান না হলে, আরো কঠোর আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।’

তবে সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলেও উল্লেখ করে তিনি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘যতোদিন না আমাদের নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে ততোদিন আন্দোলন চালিয়ে যাবো। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চাইলে সারাদেশে গঠিত কেন্দ্রভিত্তিক সংগ্রাম কমিটি এবং জনগণ তা প্রতিহত করবে।’

এদিকে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রতিবেশী ও বন্ধু রাষ্ট্রগুলো। তারা প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে গঠনমূলক সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে। চলমান সঙ্কট নিরসনে দুই দলের মধ্যে সংলাপের মাধম্যে সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য আন্তর্জাতিক মহলের চাপও অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে সরকারি দলের উপরই এ চাপটা বেশি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান রাজনৈতিক সংকটে সংলাপ বা আলোচনার বিকল্প নেই। কিন্তু সরকার আন্তরিক নয়। আন্তরিক হলে নিদিষ্ট এজন্ডা নিয়ে আলোচনায় বসতেন। সরকার যদি সমঝোতা না করে তাহলে কঠোর আন্দোলনের বিকল্প নেই।’

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের শরিকরাও চায় আন্দোলন নয় সমঝোতার জন্য প্রয়োজন সংলাপ। তবে সরকারকে চাপে রাখতে আন্দোলনের মাধ্যমে মাটে থাকতে চায় তারা। এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আলোচনা না হলে সংঘাত বাড়বে। এর দায় কে নেবে? সংকট সৃষ্টি করেছে সরকার তাই এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। তাই সঙ্কট নিরসনে খুব শিগগিরই সরকার ও বিরোধী দলকে সমঝোতার উদ্যোগ নিতেই হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ