মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য, জাতীয় সংসদের পাট ও বস্ত্র বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ৪ নভেম্বর।
এ উপলক্ষে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও তাঁর অবদান স্মরণের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর পরিবারের উদ্যোগে মরহুমের নিজ গ্রাম আনোয়ারা উপজেলার হাইলধরে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচিতে রয়েছে কোরানখানি, মিলাদ মাহফিল, কবর জেয়ারত ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে স্মরণসভা। ১৯৫৪ সালের ৩ মে আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর গ্রামে জমিদার পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা অ্যাডভোকেট আলহাজ্ব মরহুম নুরুজ্জামান চৌধুরী ও মাতা মরহুমা খোরশোদ বেগম। ১৯৫৮ সালে পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকার নটরডেম কলেজে। উচ্চ শিক্ষার্থে এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। ভর্তি হন নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে। ১৯৬৩ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ (অ্যাসোসিয়েট) ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফেরেন। ১৯৬৪ সালে বড় ভাই বসিরুজ্জামানের সঙ্গে ব্যবসায় যোগ দেন। দেশে তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধিকার আন্দোলন চলছে। যোগ দেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭১
সালের ৭ মার্চের পর চট্টগ্রামে প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার ও সংগঠনে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কূটনৈতিক সমর্থন আদায়ে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য সফর করেন। তাঁর আবাসিক ভবন জুপিটার হাউজ ছিল মুক্তিযুদ্ধকালে নানা পরিকল্পনা, বৈঠকের কেন্দ্রস্থল। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে তাঁর ছোট ভাই বশরুজ্জামান চৌধুরী চট্টগ্রামে প্রথম শহিদ হন। নিজ নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গে তাঁর ছিল নিবিড় সম্পর্ক। তিনি হাইলধর ইউনিয়ন পরিষদ ও আনোয়ারা থানা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট খুনিরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করলে তিনি আওয়ামী লীগের হাল ধরেন এবং দলকে সংগঠিত করেন। ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ২০০৮ সালে তিনি আনোয়ারা–পশ্চিম পটিয়া আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামে নেতৃত্ব দেন ও কারারুদ্ধ হন। তিনি ১৯৭৮ সাল থেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘকাল নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১১ সালে প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন।
রাজনীতির পাশাপাশি আখতারুজ্জামান চৌধুরী দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের সংগঠনের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছেন। চট্টগ্রাম চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির দু’বারের সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই–এর সভাপতি, প্রশাসক, ওআইসিভুক্ত ইসলামী চেম্বারের সভাপতির দায়িত্বও সফলভাবে পালন করেন। আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু দেশের বেসরকারি খাত ব্যাংকিংয়ের অগ্রণী উদ্যোক্তাদের একজন। দেশের প্রাইভেট সেক্টরের দ্বিতীয় ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) এবং জনতা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড–এর তিনি প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ব্যবসায় ও শিল্পায়নে তাঁর দক্ষতায় গড়ে ওঠে আসিফ স্টিল, জাবেদ স্টিল, আসিফ সিনথেটিক, প্যানআম বনস্পতি, আফরোজা অয়েল মিল, বেঙ্গল সিনথেটিক প্রোডাক্ট, ভ্যানগার্ড স্টিল–এর সমন্বয়ে জামান গ্রুপ। খবর বিজ্ঞপ্তির।