মঙ্গলবার, মে ২৮, ২০২৪
প্রচ্ছদআরো খবর......পদবঞ্চিত চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগে ক্ষোভের বিস্ফোরণ : বেপরোয়া, গাড়ি ভাংচুর, আগুন

পদবঞ্চিত চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগে ক্ষোভের বিস্ফোরণ : বেপরোয়া, গাড়ি ভাংচুর, আগুন

চট্টগ্রাম অফিস (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

কমিটি ঘোষণার পর চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে। পদবঞ্চিত ছাত্রলীগ কর্মীরা নগরীর জিইসি মোড়সহ আশাপাশের এলাকায় মিছিল বের করে বেপরোয়াভাবে যানবাহন ভাংচুর করেছে। এসময় তিনটি মোটর সাইকেলে আগুন দেয়া হয়। বুধবার বিকেলে কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের নতুন কমিটির ২৪ সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়। এতে এইচ এম ইমরান হোসেন ইমুকে সভাপতি ও নুরুল আজিম রনিকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

নগর ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি হয়েছিল ২০০৩ সালের ৯ ডিসেম্বর। ওই কমিটিও ছিল সম্মেলন ছাড়া কেন্দ্র ঘোষিত। এবারও কমিটি হয়েছে কোন ধরনের সম্মেলন ছাড়াই। নতুন কমিটির বিষয়টি  নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ রাসেল।

এদিকে কমিটি ঘোষণার খবর চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন কলেজে পদবঞ্চিত নেতাকমীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর জিইসি মোড়সহ আশপাশের এলাকায় ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের বঞ্চিত নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল থেকে আকস্মিকভাবে গাড়ি ভাংচুর শুরু হয়।

ভাংচুরের শিকার একটি সিএনজি অটোরিক্সার (চট্টমেট্রো-দ-১১-০৯৫৬) চালক নূরুল আলম  বলেন, ‘আমি রাউজানের কদলপুর থেকে গাড়ির মালিক জাহেদ চৌধুরীকে নিয়ে সানমার মার্কেটে এসেছি। মালিক মার্কেটে ঢোকার পর আমি গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। কয়েকজন ছেলে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগান দিতে দিতে এসে আমার গাড়িতে হামলা করে। আগুন দিতে চেয়েছিল, আমি পায়ে ধরে ফেলায় আগুন দেয়নি।’

একইভাবে সানমারের অদূরে এম এম মার্কেটর ভেতরে ঢুকে মার্কেটের মালিক ফরহাদ খান রুবেলের প্রাইভেট কার ভাংচুর করা হয়। ওই মার্কেটের সামনে পার্কিং করে রাখা কাচালং গ্রুপ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মাইক্রোবাসে ভাংচুর চালায়। কাচালং গ্রুপের ফিন্যান্স ডিরেক্টর মিনহাজুল করিম  বলেন, ‘মিছিল বের করার পর আমি দ্রুত অফিস থেকে বের হয়ে নীচে আসি। ড্রাইভার গাড়ি ঢোকাচ্ছিল। কিন্তু কয়েকজন এসে পেছন থেকে ঢিল ছুঁড়ে গাড়ির সামনের কাঁচ ভেঙ্গে দেয়।

সানমারের পাশে দৈনিক পূর্বকোণ অফিসের পাশে নার্গিস ফার্ণিচার মার্ট নামে একটি দোকানের মালিক সিরাজুল ইসলামের একটি ও ওয়ালটনের শোরুমের সামনে বিক্রির জন্য রাখা একটিসহ দু’টি মোটর সাইকেলে আগুন দেয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। এছাড়া জিইসি মোড়ে জামান হোটেলের নিচে রাখা একটি মোটর সাইকেলেও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জিইসি মোড় থেকে ষোলশহর দু’নম্বর গেট এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মীরা মিছিল করে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫টি গাড়ি ভাংচুর করেছে। ভাংচুরের শিকার যানবাহনগুলোর অধিকাংশই সিএনজি অটোরিক্সা বলে তারা জানান। এছাড়া মিছিলের সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মুখোশ পরা ছিলেন বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

এদিকে সরকারী কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরাও বুধবার রাত ৮টার দিকে আগ্রাবাদ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এসময় তারা বাদামতল মোড়ে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। নগর পুলিশের ডবলমুরিং জোনের সহকারী কমিশনার উ খ্য সিং  বলেন, ‘কমার্স কলেজ থেকে ছাত্রলীগ মিছিল বের করেছিল। আমরা বুঝিয়ে তাদের সরিয়ে দিয়েছি। এখন পরিস্থিতি একদম শান্ত।’

এর আগে পদবঞ্চিতরা সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এমইএস কলেজের সামনে থেকে বিােভ মিছিল বের হয়ে জিইসি মোড়, দুই নম্বর গেট প্রদণি করে চশমা হিলে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয় তারা। পরে সেখান থেকে ফেরার পথে তারা ভাংচুরে লিপ্ত হন।

পরে তারা ও আর নিজাম রোডে এসে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় তারা অবৈধ কমিটি, মানিনা মানব না, টাকার বিনিময়ে কমিটি, মানিনা মানবনা বলে শ্লোগান দেন। আরিফ নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, ‘যারা পদ পেয়েছেন তারা সবাই চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই মামলার আসামী। টাকার বিনিময়ে তাদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বানানো হয়েছে। আমরা এ কমিটি মানব না। সংবাদ সম্মেলন করে তাদের মুখোশ উন্মোচন করব।’

মহানগর ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, ‘সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ প্রাথমিকভাবে ২৪ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ১০১ সদস্যের কমিটির অন্যদের নাম শিগগিরই ঘোষণা করা হবে কেন্দ্র থেকে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী জানান, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কেউই আগে নগর ছাত্রলীগের কোন পদে ছিলেন না। তারা কলেজের সহ-সম্পাদক পদে ছিলেন। অন্যান্য পদগুলোতে যাদের নাম এসেছে তাদের অধিকাংশও পরিচিত মুখ নন।

উল্লেখ্য সভাপতি ইমু চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজে মাস্টার্স ফাইনালে এবং সাধারণ সম্পাদক রনি বেসরকারি ওমরগণি এমইএস কলেজে ডিগ্রি (পাস) কোর্সে অধ্যয়নরত। তারা দু’জনই মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

নতুন কমিটিতে ৯ জনকে সহ সভাপতি করা হয়েছে। এরা হলেন, তালেব আলী, ইমতিয়াজ বাবলা, মিঠুন মল্লিক, ফারুক ইসলাম, নাজমুল হাসান রুমি, ইয়াসিন আরাফাত কচি, আব্দুল খালেক, নাজিম উদ্দিন রাসেল ও রাহুল বড়–য়া। পাঁচজনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এরা হলেন, জাকারিয়া দস্তগীর, রনি মির্জা, রিয়াজুল করিম বিলাস, লুৎফুল আহসান শাহ ও ওয়াহেদ রাসেল। সাংগঠনকি সম্পাদক করা হয়েছে ৬ জনকে। এরা হলেন, মঈন শাহরিয়ার, আয়াজ উদ্দিন, শওকত আলী রনি, খোরশেদ আলম মানিক, ইরফানুল আলম জিকু ও আমির হামজা। নতুন কমিটিতে প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে তপু বড়–য়াকে। দপ্তর সম্পাদক পদ পেয়েছেন আমিনুর রহমান সায়েল। এছাড়া আজিজুর রহমানকে উপ প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে। উপ শিক্ষা ও পাঠক্রম সম্পাদক করা হয়েছে ইলিয়াস উদ্দিনকে। এছাড়া জাহেদ বিন কাশেম, দেবাশীষ আচার্য্য ও মোরশেদুল আলম রাসেলকে নতুন কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ