রবিবার, মে ১৯, ২০২৪
প্রচ্ছদটপভূমি ব্যবস্থাপনার মান বাজার অর্থনীতির অন্যতম বিমূর্ত নির্দেশক

ভূমি ব্যবস্থাপনার মান বাজার অর্থনীতির অন্যতম বিমূর্ত নির্দেশক

রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবে রুপায়ন: বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১’-এ (প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১) অর্থনীতিতে ভূমি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব তুলে ধরে বলা হয়েছে, “দক্ষতার সাথে বাজার পরিচালনার জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে অনুসরণ করা হবে –  ‘কার্যকর ভূমি ব্যবস্থা ও প্রশাসন’, ‘২০১৩-এর সংশোধনী সহ শ্রম আইন ২০১০ এর কার্যকর বাস্তবায়ন’, ‘বুদ্ধিভিত্তিক সম্পদ সহ সম্পত্তিতে স্বত্বাধিকার রক্ষা’, এবং ‘প্রবেশের সকল বাধা অপসারণ করে উপযুক্ত নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য বজায় রেখে মুক্ত বাজার নীতির পরিচালনা নিশ্চিত করে বিপণন নিয়ন্ত্রণমূলক আইন’। ‘ভূমি ব্যবস্থাপনার মান’ হবে এর বিমূর্ত নির্দেশক।

উল্লেখ্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১-এ ‘ভূমি ব্যবস্থাপনার মান’ সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে। গত ১০ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ২০২০ তারিখে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবে রূপায়ন: বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১’ শীর্ষক জনঅবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বাংলাদেশের এই দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনাটি ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ এ অনুমোদিত হয়। পরিকল্পনায় আরও বলা হয়েছে, “দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য সম্পত্তিতে কার্যকর স্বত্বাধিকারসহ দক্ষ ভূমি বাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। জমি, ব্যবসায় ও বুদ্ধিভিত্তিক সম্পদের জন্য সর্বাধিক প্রাসঙ্গিক হলো সম্পত্তিতে স্বাধিকার”৷

প্রেক্ষিত পরিকল্পনাটিতে আরও বলা হয়, “সমাজের দ্রুত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সর্বদাই শক্তিশালী ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। এজন্য বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বের ওপর প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ এ জোর দেয়া হয়” । “সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে আমূল সংস্কারসাধন থেকে ব্যাপক সুফল মিলবে। বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষিত উন্নয়নের জন্য সুশাসনই হলো প্রেরণার মূল মঞ্চ । প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১-এর কৌশলগত অভিঘাত হবে প্রতিষ্ঠানসমূহের শক্তিবৃদ্ধির ওপর”- পরিকল্পনায় বলা আছে। এজন্য অন্যতম ‘সক্ষমতা বিনির্মাণ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে ‘ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতিষ্ঠান’-এর দক্ষতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১-এ।

এতে বলা হয়েছে, “প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ এর আয়ের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিদেশি বিনিয়োগসহ বেসরকারি ও বিরোধ নিষ্পত্তি-কল্পে বিচারিক ব্যবস্থার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখার প্রয়োজন হবে।” এজন্য ২০৪১ অভিমুখে এই অগ্রযাত্রার পথে ভূমি ও নগর প্রশাসনে ২০৩১ পর্যন্ত অগ্রাধিকার অব্যাহত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে পরিকল্পনায়।

আরও বলা হয়েছে, অন্যগুলির ক্ষেত্রে এই অগ্রাধিকার অব্যাহত থাকবে ২০৪১ ও তৎপরবর্তী কাল পর্যন্ত। এ প্রচেষ্টা শিথিল করার কোন সুযোগ নেই। প্রতিবেশের ভারসাম্যসহ সম্পদ ব্যবস্থাপনা, কৃষি, সেচ, পানি সংরক্ষণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য সংশ্লিষ্ট কৌশলসমূহের সাথে সাথে ভূমি ব্যবস্থাপনাকেও প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ মেয়াদে পরিবেশগত ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও দারিদ্র নিরসনের জন্য নীতি বিন্যাসের প্রধান উপাদান হিসেবে ধরা হয়েছে।

কৃষি ও পল্লী উন্নয়নে অন্যান্য অনেক বিষয়ের সাথে সাথে বেদখলকৃত সরকারি জমি, বিশেষ করে ইতোমধ্যে খাল ও নদীর পাড়ে মাটি ভরাট করে অবৈধ দখলসহ বেহাত হয়ে যাওয়া খাস জমি পুনরুদ্ধার কল্পে কর্মসূচি নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া কৃষিজমির অনুচিত ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে কঠোর আইন প্রবর্তন করা ও কৃষি জমির রেকর্ড রক্ষণাবেক্ষণে ডিজিটায়নের ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনার ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে, এটুআই সার্ভিসের মাধ্যমে নাগরিকদের জন্য ই-মিউটেশন সেবা শুরু করা হয়েছে, যাতে নাগরিকরা সহজে এবং ঝামেলা মুক্ত ভাবে ভূমি সেবা পেতে পারেন । তার সাথে আইসিটি ব্যবহার করে ভূমি অধিদপ্তরের কার্যক্রম উন্নত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সারা বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ নাগরিক এই সেবা পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন।

বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ এ আরও উল্লেখ করা হয়, “ই-পেনশন, ভূমি রেকর্ড ব্যবস্থাপনা প্রভৃতির মতো অত্যাবশ্যক ই-সরকারি সেবা একীভূত করার জন্য গঠিত হয় বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডিজিটাল আর্কিটেকচার (বিএনডিএ), যা ওয়ার্ল্ড সামিট অন দি ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস) পুরস্কার লাভ করে। “পরিচয়” নামক একটি সার্ভিস শুরু করা হয়েছে যার মাধ্যমে সকল নাগরিক তাঁদের জাতীয় পরিচয় পত্র যাচাই করতে পারেন। সরকার বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ (বিডিপি ২১০০) দ্বারা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যার দূরদর্শী উদ্দিষ্ট হলো কৌশল, নীতি, বিনিয়োগ কর্মসূচি এবং উপযুক্ত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, বাস্তুতন্ত্র, ভূমি ও পানির উন্নত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা ।

উলেখ্য, ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ এর অন্যতম অংশ ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা’কে কার্যকর ও শক্তিশালী করার মাধ্যমে দ্রুত সময়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সাংবিধানিক অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করা সম্ভব, যা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণের অন্যতম নিয়ামক।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ