মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৬, ২০২৪
প্রচ্ছদটপ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশে শুরু হয় নানা অরাজকতা

১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশে শুরু হয় নানা অরাজকতা

শোকাবহ আগস্টের চতুর্থ দিন আজ। ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশে শুরু হয় নানা অরাজকতা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত করে দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নেয়ার ধারাবাহিক অপচেষ্টা চলে। স্বাধীনতাবিরোধীরা উদার-গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল তথা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে পরিণত করতে উঠেপড়ে লাগে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, উদার-সংস্কৃতিমনাদের মতপ্রকাশের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল হয়ে পড়ে কোণঠাসা। দেশে ফিরে আসতে থাকে স্বাধীনতাবিরোধীরা। রাষ্ট্র ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয় পাকিস্তানের দোসরদের।

পঁচাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশ ঘোর অমাবস্যায় ডুবে থাকা এক জনপদের নাম। একটা সময় পর্যন্ত অবস্থা এমন ছিল যে, কোনো আশা নেই, ভালোবাসা নেই, আছে শুধু লোমহর্ষক হত্যা আর ষড়যন্ত্রের জাল বুননের নানা কাহিনী।

প্রতি মুহূর্তেই দৃশ্যপটের পরিবর্তন ঘটেছে আর মৃত্যু হতে থাকে বঙ্গবন্ধু তথা বাঙালির স্বপ্নগুলোর। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বপ্নগুলোকে হায়েনার দল ক্ষতবিক্ষত করে যেন প্রতিশোধের উন্মত্ততায় মেতে ওঠে। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর সংবিধানকেও কাটাছেঁড়া করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শগুলোকে বিদায় করতে চেয়েছিল দখলদার অপশক্তি। ধর্মনিরপেক্ষতার জায়গায় সুকৌশলে বসানো হয় রাষ্ট্রধর্ম শব্দটি। ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের জায়গা’ দখল করে নেয় ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’। দেশের রাজনীতিই আমূল পরিবর্তিত হতে থাকে। যেসবের মাধ্যমে পাকিস্তানি ভাবধারাকে ফিরিয়ে এনে স্থায়ী করার অপচেষ্টা হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান ‘জয় বাংলা’কে বিসর্জন দেয়া হয় সবার আগে।

‘জয় বাংলা’র পরিবর্তে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ অনুসরণ করে প্রচলন করা হয় ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগানের। একইভাবে ‘বাংলাদেশ বেতার’ নাম পাল্টে করা হয় ‘রেডিও বাংলাদেশ’। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ও পাক হানাদারদের দালালদের সুযোগ করে দেয়া হয় রাজনীতি করার। ১৯৭১ সালে রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর মানবতাবিরোধী ও দালালদের অপরাধের বিচারের জন্য বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি এক অধ্যাদেশ জারি করে। এ অধ্যাদেশ অনুযায়ী সারা দেশে ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এ আইনে ৩৭ হাজার ৪৭১ জনকে গ্রেফতার এবং অনেককে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিও দেয়া হয়। কিন্তু যেসব অপরাধে এ বিচার চলছিল, তাতে অনেক জায়গা থেকে অনেকের ব্যক্তিগত ইস্যুও এতে জড়ানো হচ্ছিল। এ রকম অনেক অভিযোগের ভিত্তিতে ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর এক আদেশে দালাল আইনে আটক ব্যক্তিদের মধ্যে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটে অভিযুক্তরা ছাড়া অন্যদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তি ও ক্ষমতালোভী চক্র সরকারে এসে ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর দালাল আইনই বাতিল করে দেয়।

সব যুদ্ধাপরাধীকে কারাগার ও অভিযোগ থেকে মুক্ত করে দেয়া হয়। শহীদদের রক্তস্নাত বাংলাদেশে বুক ফুলিয়ে চলতে শুরু করে রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সদস্যরা। ৩ মে ১৯৭৬ এক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সংবিধানের ৩৮নং অনুচ্ছেদ বাতিল করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় তৎকালীন সরকার। ১৯৭৭ সালের ২২ এপ্রিল সংবিধানের ৯ম সংশোধনীর মাধ্যমে তা আইনে পরিণত করা হয়।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য বঙ্গবন্ধুর সরকার দালালদের বিচারের জন্য ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি এক অধ্যাদেশ জারি করে। অধ্যাদেশ অনুযায়ী সারা দেশে ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এ আইনে ৩৭ হাজার ৪৭১ জনকে গ্রেফতার এবং অনেককে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিও দেয়া হয়। কিন্তু যেসব অপরাধে এ বিচার চলছিল, তাতে অনেক জায়গা থেকে অনেকের ব্যক্তিগত ইস্যুও এতে জড়ানো হচ্ছিল। এ রকম অনেক অভিযোগের ভিত্তিতে ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর এক আদেশে দালাল আইনে আটক ব্যক্তিদের মধ্যে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযুক্তরা ছাড়া অন্যদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তি এবং ক্ষমতালোভী চক্র সরকারে এসে ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর দালাল আইন বাতিল করে দেয়।

সব যুদ্ধাপরাধীকে কারাগার এবং অভিযোগ থেকে মুক্ত করে দেয়া হয়। শহীদদের রক্তস্নাত বাংলাদেশে বুক ফুলিয়ে চলতে শুরু করে রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সদস্যরা। ৩ মে ১৯৭৬ এক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সংবিধানের ৩৮নং অনুচ্ছেদ বাতিল করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় তৎকালীন সরকার।

১৯৭৭ সালের ২২ এপ্রিল সংবিধানের ৯ম সংশোধনীর মাধ্যমে তা আইনে পরিণত করা হয়। এর ফলে মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, পিডিপি, নেজামে ইসলামসহ অপরাপর ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো আবার তাদের তৎপরতা শুরু করে। রাষ্ট্র-সমাজ আর রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয় যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সদস্যরা।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সুপরিকল্পিতভাবে এ দেশে জাতীয়তা ও নাগরিকতার ধারণাকে নিয়ে একটি তালগোল পাকিয়ে ফেলার আয়োজন করা হয়। যা ছিল মূলত ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে জাতিকে নিয়ে যাওয়ার নেপথ্য পরিকল্পনা। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পঠন-পাঠনের উদ্যোগ স্কুল পর্যায়ে প্রায় শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা হয়। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ হেরে যায়নি। দুই দশকের বেশি সময় পর রাষ্ট্রক্ষমতায় ফেরে বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগ। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পর ফিরে আসে সেই অবিনাশী স্লোগান ‘জয় বাংলা’। দেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতা পুরোপুরি দূর না হলেও প্রগতিশীলতার চর্চায় বাধা নেই। শিক্ষাঙ্গনে পড়ানো হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ