রবিবার, মে ১৯, ২০২৪
প্রচ্ছদটপলাগাম নেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও টিউশন ফি

লাগাম নেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও টিউশন ফি

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (এনএসইউ) একজন শিক্ষার্থী ফার্মাসি বিভাগে স্নাতক করতে গেলে তাকে খরচ করতে হবে ১২ লাখ ২৯ হাজার টাকা। এই টাকার মধ্যে ভর্তি ফি ২৫ হাজার, সতর্কীকরণ ফি ১০ হাজার, পার ক্রেডিট ফি ছয় হাজার টাকা- এভাবে ১৯৯ ক্রেডিটে ফার্মেসির স্নাতক কোর্স শেষ হয়। হিসাব করে দেখা গেছে, এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন শিক্ষার্থীকে স্নাতক শেষ করতে মোট ১২ লাখ ২৯ হাজার টাকা ব্যয় করতে হবে। এই হিসাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসা অনুষদের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ থেকে কেউ স্নাতক করতে চাইলে তাকে খরচ করতে হবে সাড়ে সাত লাখ টাকা। এভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য বিষয়ে ভর্তি হতে সাত থেকে ১২ লাখ টাকা লাগে। একইভাবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ ভর্তি হতে চাইলে তাকেও মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হবে। প্রতি সাবজেক্টে গড়ে সাত/আট লাখ টাকা খরচ করতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকপক্ষ কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া এই ভর্তি ও টিউশন ফি আদায় চলছেই। একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু এগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় কোনো নীতিমালা আজ পর্যন্ত তৈরি হয়নি। নীতিমালা না থাকায় ইচ্ছেমতো ফি আদায় করে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রস্তাবিত নীতিমালা গত পাঁচ বছরেও চূড়ান্ত হয়নি।

ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি, টিউশন ফি এবং শিক্ষকদের বেতনভাতাসহ অন্য বিষয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। এ ছাড়া ট্রান্সক্রিপ্ট, সার্টিফিকেট ও প্রশংসাপত্র ইত্যাদি সরবরাহ করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উচ্চহারে ফি নেয়ায় হাজার হাজার অভিযোগ আসে। কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া প্রতি বছরই সব ফি বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।

এসব অভিযোগের পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি-সংক্রান্ত একটি নীতিমালা জরুরি উল্লেখ করে ২০১৩ সালের অক্টোবরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি সুপারিশ পাঠানো হয়। কিন্তু তা আজ পর্যন্ত চূড়ান্ত করা হয়নি। এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হয়েছে গত ২৩ আগস্ট। ইতোমধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ নিময়তান্ত্রিক হলেও নিয়মনীতি নেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, সেমিস্টারসহ আনুষঙ্গিক সব ফি আদায়ে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মনগড়া ফি ধার্য করছে।

ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণেই নীতিমালাটি ফাইলবন্দি। একটি শিক্ষাবান্ধব নীতিমালা করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের খরচের হিসাবে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে থাকা বিষয়গুলোয় পড়াশোনার খরচ মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের নাগালের বাইরে। এই বছর এ খরচ আরও বাড়তে পারে। এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এ ভর্তি ফি সহনীয় পর্যায়ে রাখার কথা উল্লেখ আছে। তার পরও একটি পৃথক নীতিমালার কাজ চলছে। তবে কখন শেষ হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার মান ভিন্ন, খরচও ভিন্ন। এ ক্ষেত্রে নীতিমালার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটা কষ্টসাধ্য। দুই দশক ধরে বিভিন্ন সরকারের আমলে ধারাবাহিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিচ্ছে। কিন্তু এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার জন্য ফি নির্ধারণে কোনো নীতিমালা করতে পারেনি সরকার। এ কারণে ইচ্ছামতো ফি আদায় করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়। ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘কমিশনে তার যোগদানের আগে একটি নীতিমালা নিয়ে কাজ করা হয়েছিল। সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। সবার সহযোগিতা না থাকলে এমন নীতিমালা করাও অসম্ভব।

বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় চার লাখের মতো শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। দেশে ১৯৯২ সাল থেকে এ যাবৎ ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী মোট শিক্ষার্থীর একটি বড় অংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ