ঈদের আগাম টিকেট নিতে লোকজনের ভিড় উপচে পড়েছে কমলাপুরে। মঙ্গলবার সকালে কমলাপুরে গিয়ে দেখা যায়, ২২ জুনের টিকেট নিতে কাউন্টারের সামনে থেকে লাইন স্টেশনের প্রবেশপথ ছাড়িয়ে গেছে; আগের দিন বিকেল থেকেই অপেক্ষা করছেন অনেক টিকেটপ্রত্যাশী। এদিন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন রুট ও খুলনার ট্রেনের টিকেটের প্রত্যাশীদের ভিড় বেশি; চট্টগ্রামসহ পূর্বাঞ্চলের টিকেটের চাহিদা কম। অনেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (অনেকে এসি) বগির টিকেটের আশায় থাকলেও কাউন্টার খোলার পরপরই বিক্রি শেষ হয়ে যায় বলে অভিযোগ শোনা যায়। সকাল ৮টায় টিকেট বিক্রি শুরু হওয়ার পর ১০টার মধ্যে রাজশাহী রুটের সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট ফুরিয়ে যায় বলে কাউন্টার থেকে জানানো হয়। রাজশাহীর টিকেটের জন্য অফিস শেষে সোমবার বিকেলে সোজা স্টেশনে এসেছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা নাজমুল আলম। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় টিকেট পেয়েছেন। এখান থেকেই আবার অফিসে যাবেন তিনি। টিকেটের জন্য অনেক কষ্ট করেছি। হাতে পেয়ে অনেক ভালো লাগছে। কিছু অব্যবস্থাপনা ছিল বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “অনেকে পরে এসেও লাইনের আগে চলে গেছে। আগের রাত ৮টা থেকে লাইনে দাঁড়ানো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলামের অভিযোগ, এসি কামরার টিকেট দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, “রাজশাহীতে প্রতিদিন চারটি করে ট্রেন, প্রতিটি ট্রেনে দুটি করে ৮টি এসি বগি। ৯২টি করে হিসাব করলে ৭৩৬টি আসন থাকে। কিন্তু আমার আগে ২৫ জন টিকেট নিয়েছেন। তারা সবাই ৪টা করে এসি টিকেট কিনলেও তো সব টিকেট শেষ হওয়ার কথা নয়। এসি টিকেটগুলো গেল কই? নাটোর যাওয়ার জন্য লালমনি এক্সপ্রেসের এসি টিকেট না পাওয়ার অভিযোগ করলেন মো. রইস উদ্দিন নামে আরেকজন। তিনি বলেন, “আমার সিরিয়াল ৯৭। আমাদের এই কাউন্টারে টিকেট বিক্রি শুরু হওয়ার পর ৪ জন এসি টিকেট কিনেছে। এরপরই বলছে, টিকেট নাই- এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? একটা ট্রেনে কি এত কম টিকেট থাকে।”
এবিষয়ে ১০ নম্বর কাউন্টারের বিক্রেতার বলেন, “চারটা কাউন্টার থেকে টিকেট দেওয়া হয়। এ কারণে টিকেট শেষ। সকাল থেকে কয়টি টিকেট বিক্রি করেছেন জানতে চাইলে কোনো কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। রাজশাহীর পদ্মা ও সিল্কসিটি ট্রেনের সব টিকেট বিক্রি সকাল ১০টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। এরপর শুধু ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকেট দেওয়া হয় যাত্রীদের। চট্টগ্রাম রুটের ট্রেনের টিকেটের ভিড় থাকলেও তা অন্য রুটের তুলনায় কম। কিশোরগঞ্জের টিকেটের জন্য এসেছেন তিন বন্ধু আশরাফুল হাই, নূরে আলম শেখ এবং জয় রায়। ঢাকার একটি মেসে থেকে ভর্তি কোচিং করছেন তারা। সেহরির পর কমলাপুরে এসেছেন তারা; জানান, টিকেট পেয়েছেন। কোচিং শেষ হওয়ার পর যেতে হবে। এজন্য ট্রেনের টিকেট কিনলাম। সবাই একসঙ্গে মজা করে যাব।
ইউনিয়ন ব্যাংকের কর্মকর্তা আজগর আলী চট্টগ্রামের টিকেটের জন্য মঙ্গলবার ভোরে এসেছেন। সকাল ১০টার দিকে টিকেট পেয়েছেন তিনি। টিকেট দিতে দেরির অভিযোগ করেন তিনি।তূর্ণা নিশিথার টিকেট চেয়েছিলাম। কিন্তু দিয়েছে সুবর্ণ এক্সপ্রেসের ট্রেন। প্রত্যাশিত টিকেট পেয়েছি। কিন্তু আমাদের এই কাউন্টারে টিকেট দিতে দেরি করেছে। তবে স্টেশনের ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তুষ্টিও জানিয়েছেন যাত্রীদের কেউ কেউ। রংপুরের টিকেটের জন্য ভোরে কাউন্টারে এসেছেন আদমজী ইপিজেড হেলথ সেন্টারের জেষ্ঠ্য নার্স রহিমা। লালমনি এক্সপ্রেসের কাঙ্ক্ষিত টিকেট পেয়েছেন তিনি। এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো ছিল। এছাড়া কেউ সিরিয়াল ভেঙে টিকেট কিনতে পারেনি। শৃঙ্খলা মোটামুটি ভালো ছিল।