রবিবার, মে ১৯, ২০২৪
প্রচ্ছদটপনির্বাচন বয়কট করার সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী মনে করছেন বিএনপি

নির্বাচন বয়কট করার সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী মনে করছেন বিএনপি

সরকারের কাছ থেকে বিন্দুমাত্র ছাড় না পাওয়ার সব আলামত দৃশ্যমান হওয়ার পরও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপি। দলের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে জানা গেছে, নির্বাচন বয়কট বা প্রতিহত করার অতীত সিদ্ধান্তকে তারা ‘আত্মঘাতী’ বলে মনে করছেন। একই ধরনের সিদ্ধান্তে দলটি আর যাবে না বলেই সিদ্ধান্ত তাদের। ঘটনা যাই ঘটুক কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে নির্বাচনের আগ মুহূ্র্ত পযর্ন্ত নানা ইস্যুতে সরকারকে তটস্ত রাখবে বিএনপি। ০৬ ফেব্রুয়ারি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পর খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয় বলে সূত্র জানায়।

সূত্রমতে, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বর্তমান সংবিধানের আলোকে শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার ফাঁকফোকর খুঁজছিল বিএনপি। দাবি দাওয়ার কিছু অংশ পূরণ হলেই জোট শরিকদের নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে দলটি।

কারণ, বিএনপির তৃণমূল থেকে শীর্ষ পযায় পযর্ন্ত বেশিরভাগ নেতা মনে করেন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করে রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে গেছে দল। এ অবস্থায় ২০১৯ সালের নির্বাচন বয়কট করলে অস্তিত্ব সংকটে পড়তে হবে।

সুতরাং ক্ষমতায় যেতে না পারলেও ‘সম্মানজনক’ আসন নিয়ে জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে বিএনপিকে। এতে করে রাজনীতিতে টিকে থাকার সুযোগ পাবে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বিএনপি।

এসব বিষয় বিবেচনা করেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আড়াই মাস আগে গত ১৮ নভেম্বর স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে ১৩ দফা প্রস্তাব পেশ করেন খালেদা জিয়া। গত ১৮ ডিসেম্বর গণভবনে গিয়ে ১৩দফা প্রস্তাবের সার সংক্ষেপ রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে আসেন তিনি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার শুরুতেই হোঁচট খায় বিএনপি। কারণ, সার্চ কমিটি গঠনে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব আমলে না নেওয়া হয়নি। এর পরও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় শেষ ‘সুযোগ’ হিসেবে সার্চ কমিটিতে নাম প্রস্তাব করে বিএনপি।

সূত্রমতে, বিএনপি জোটের দেওয়া অন্তত ২৬টি নামের মধ্যে চূড়ান্ত পযায়ে কেবল মাহবুব তালুকদার-ই কমিশনার হিসেবে নির্বাচন কমিশনে ঠাঁই পেয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অপর চারজনকে নিয়ে ঘোর আপত্তি আছে বিএনপির।

বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ‘বাধ্যতামূলক’ অবসরে পাঠানো মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা কে এম নুরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) করায় চিন্তিত বিএনপি। এই কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে কি না?- তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে।

সূত্র জানায়, দলের বৃহত্তর স্বার্থে সব রকম প্রতিকূল পরিস্থিতি মেনে নিয়েই আগামী নির্বাচনে যাওয়ার কথা চিন্তা করছে বিএনপি। দলের হাইকমান্ড মনে করেন, গত ১০ বছরে একাধিকবার বিএনপি ভাঙার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সে চেষ্টা সফল হয়নি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির একজন নেতাও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যান নি।

কিন্তু ২০১৯ সালের নির্বাচনে অংশ না নিলে ভাঙনের মুখে পড়বে বিএনপি। সুতরাং দলের ভাঙন ঠেকানো, অস্তিত্ব রক্ষা, রাষ্ট্রপরিচালনায় নিজেদের অংশিদারিত্ব প্রতিষ্ঠা, নেতা-কর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফেরানো ও কাজের ক্ষেত্রে প্রস্তুত করার জন্য হলেও আগামী নির্বাচনে যাবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

কিন্তু দলের ভেতর থেকে একটি অংশ নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে তাকে  চাপ দিচ্ছেন বলেও জানা গেছে। সরকারের কাছ থেকে সুবিধাভোগী ওই অংশটির যুক্তি হলো-বর্তমান সংবিধানের আলোকে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে গিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই। খামোখা নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকারের বৈধতা দেওয়া ঠিক হবে না।  তবে শেষ পযর্ন্ত বিএনপির এ অংশটির স্বপ্নপূরণ হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম বলে জানা গেছে। দলের অস্তিত্ব রক্ষায় এবং তৃণমূল ও মাঠ পযায়ের কর্মীদের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে আগামী নির্বাচনের সদলবলে অংশগ্রহণের পক্ষে অবস্থান নিতে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা বলেন, আপ্রাণ চেষ্টা করছি বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে। কিন্তু দলের ভেতর থেকে একটি অংশ অনবরত চেয়ারপারসনকে নির্বাচনে না যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ