মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৪
প্রচ্ছদঅর্থ ও বানিজ্য সময়পাইকারি ও খুচরা পণ্য বেচাকেনায় চট্টগ্রাম জেলার মানুষের আগ্রহ বেশি

পাইকারি ও খুচরা পণ্য বেচাকেনায় চট্টগ্রাম জেলার মানুষের আগ্রহ বেশি

পাইকারি ও খুচরা পণ্য বেচাকেনায় চট্টগ্রাম জেলার মানুষের আগ্রহ বেশি। এর সঙ্গে আছে গাড়ি মেরামতের ব্যবসা। উৎপাদন খাতে এখনো চট্টগ্রাম জেলায় মানুষের অংশগ্রহণ কম। উৎপাদন খাতে আবার আধিপত্য কুটিরশিল্পের। চট্টগ্রাম জেলার অর্থনৈতিক শুমারি–২০১৩–এ এই তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে এ শুমারি প্রকাশ করা হয়। শুমারিতে ২০১৩ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত চিত্র উঠে এসেছে। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩ লাখ ৮০ হাজার ৫৫০টি। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান রয়েছে ১৯ লাখ ৬৮ হাজার ৮৬২ জনের। এর আগে সর্বশেষ ২০০১ ও ২০০৩ সালের শুমারিতে এ জেলায় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৯৪ হাজার ৯২২টি। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন ৭ লাখ ৪ হাজার ৩৫১ জন। অর্থাৎ ১০ বছরে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ৯৫ দশমিক ২৩ শতাংশ, কর্মসংস্থান বেড়েছে ১৭৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ। দুই শুমারির ব্যবধানে শহরের তুলনায় গ্রামে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে।

শুমারির তথ্য বলছে, জেলার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সব খাতের মধ্যে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা এবং গাড়ি মেরামতের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই বেশি, ১ লাখ ৯৬ হাজার ৯৮৪টি। এই হার মোট প্রতিষ্ঠানের ৫১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসার পরে আছে উৎপাদনমুখী খাত। এ সংখ্যা ৫৮ হাজার ৬২০টি (১৫ দশমিক ৪০ শতাংশ)। এর পরই আছে হোটেল ও রেস্তোরাঁ, সংখ্যায় ৩৫ হাজার ৭৪৪টি (৯ দশমিক ৩৯ টি)। পরিবহন ও সংরক্ষণাগার খাতে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার (৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ)। চট্টগ্রাম বন্দরের সুবিধা ব্যবহার করে এ জেলায় শিল্পকারখানার সংখ্যা বেশি হওয়ার কথা ছিল। কারণ, এ জেলা থেকে বন্দর দিয়ে কাঁচামাল আমদানি করে তা রপ্তানি করা যায় সহজেই। পোশাকশিল্পেরও সূচনা হয়েছিল চট্টগ্রাম থেকে। এরপরও এখানে অন্যান্য খাতের তুলনায় উৎপাদনমুখী খাতের হার বেশি বাড়েনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রামে ২০০৯ সাল থেকে গ্যাস–সংকট শুরু হয়। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের পাশাপাশি চট্টগ্রামে জমির দামও বেশি। বন্দর থাকলেও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধার অপ্রতুলতার কারণে সেই সময় থেকে চট্টগ্রামের উদ্যোক্তারা ঢাকা অঞ্চলমুখী হয়েছেন। আবার বন্দরের কারণে এখানে ভোগ্যপণ্যসহ অনেক পণ্যের পাইকারি ব্যবসা বেশি। অর্থনৈতিক শুমারিতে উৎপাদনমুখী খাতের তথ্য অনুযায়ী, উৎপাদনমুখী খাতের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আবার ৭৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের অবস্থান গ্রামে। শহরে (সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা সদর) এ খাতের প্রতিষ্ঠানের হার ২৭ শতাংশ। উৎপাদনমুখী খাতের ৮৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানই কুটিরশিল্প, যেগুলোর স্থায়ী সম্পদ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত। চট্টগ্রামে বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪৭৪টি।

শুমারি অনুযায়ী, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। ২০০১ ও ২০০৩ সালের শুমারি অনুযায়ী, মোট কর্মসংস্থানে নারীদের হার ছিল ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। ২০১৩ সালের শুমারিতে তা বেড়ে হয়েছে ২৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবেও নারীদের অংশীদারি বেড়েছে। ১০ বছরের ব্যবধানে বাড়ার হার ৭ শতাংশ। গতকাল জেলার অর্থনৈতিক শুমারি প্রকাশনা অনুষ্ঠানে মূল সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের উপপরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ। বিভাগীয় পরিসংখ্যান কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক মো. এমদাদুল হকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় কমিশনার মো. রুহুল আমীন, জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল কাদির মিয়া।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন বলেন, পুরুষের পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর সম্পৃক্ততা বাড়ার তথ্য প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এটি ইতিবাচক। তবে প্রতিবেদনের কাজ শেষ হওয়ার পর গত তিন বছরে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। এ জন্য এই শুমারি হালনাগাদ করা প্রয়োজন। চট্টগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। শুমারিতে ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোকপাত করতে পারলে আরও ভালো হতো।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ