শনিবার, মে ১৮, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়ক্রসফায়ারের মধ্য দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে

ক্রসফায়ারের মধ্য দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে

ক্রসফায়ার জঙ্গি সমস্যার সমাধান নয় বলে মন্তব্য করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ক্রসফায়ারের মধ্য দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নিজেদের দুর্বলতা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। ২১ জুন সকালে জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন তিনি।

রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘প্রতিদিনই দেখছি ক্রসফায়ারে জঙ্গি নিহত হচ্ছে। ক্রসফায়ার জঙ্গি সমস্যার সমাধান নয় বরঞ্চ আমরা লক্ষ্য করি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এর মধ্য দিয়ে তাদের দুর্বলতা ও ব্যর্থতার পরিচয়ও দিচ্ছে’। জঙ্গিবাদের উত্থান সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, আমাদের মূল অর্থনীতির মধ্যে মৌলবাদী অর্থনীতির সরব উপস্থিতি। অর্থনীতি সমিতি পরিসংখ্যান অনুসারে বাংলাদেশে মৌলবাদী অর্থনীতির নিট মুনফা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। দেশের মূল অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হলেও মৌলবাদী অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৯ থেকে ১০ শতাংশ। আর এই অর্থের দ্বারাই তারা ধর্মের নামে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের জন্য পূর্ণ স্বাধীন রাজনৈতিক কর্মী টেনে তুলছে। আধুনিক অস্ত্রাগার গড়ে তুলছে।

তিনি বলেন, আমি নবম সংসদেই সমস্ত জঙ্গিবাদী অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও তাদের নিষিদ্ধ করার দাবি করেছিলাম। এই সংসদে সেটা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছিল কিন্তু কোন মন্ত্রণালয় সেটা বাস্তবায়ন করবে এই অজুহাতে সেটা হিমাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মৌলবাদী-জঙ্গিবাদী তৎপরতা কত বাস্তব সেটা আজকে সবাই অনুধাবন করছি। মন্ত্রী বলেন, দেশি-বিদেশি অস্ত্রের সাহায্যে এই জঙ্গি গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এই জঙ্গি গ্রুপগুলো বর্তমানে গুপ্তহত্যায় মেতে উঠছে। এরই অজুহাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ তারা আমাদের ওপর ‘অ্যাডভাইজরি’ (উপদেশ) চাপিয়ে দিচ্ছে। বিদেশ থেকে মানুষ যাতে এ দেশে ভ্রমণে না আসে, কেবল তাই না বিনিয়োগ না করার  জন্য তারা আহ্বান করছে। কিন্তু আজ লক্ষ্য করছি, তারা যে আইএস-এর  উপস্থিতির কথা বলে আমাদের ঘারের উপর চেপে বসতে চাইছে সেই আইএস এখন তাদের ওখানে উপস্থিত। যদিও বারাক ওবামা বলছেন তাদের দেশে আইএস-এর উপস্থিতি নেই।

মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে আইএস নেই তবে তাদের অনুগামী রয়েছে। এই জঙ্গি গোষ্ঠী গত কয় মাস ধরে গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে। তাদের হত্যার শিকার হয়েছে পুরোহিত, যাজক, ভিক্ষু, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোক, হল গবেষক, শিক্ষক, সমাজের সংখ্যালঘু দুর্বল  শ্রেণির মানুষ। জঙ্গিবাদ নিয়ে বিএনপিসহ অন্যদের বিভিন্ন উক্তির সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপিসহ কেউ দাবি করছে গণতন্ত্র অনুপস্থিতির কারণে এই জঙ্গিবাদের সৃষ্টি। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই এদেশে হুজির জন্ম হয়েছিল বিএনপি সংসদের আমলে। নিজামী-মুজাহিদ সাহেবরা সেদিন বাংলাভাই এর পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। এখনো বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এই গুপ্তহত্যার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করছেন। এর অর্থ তারা জঙ্গি থেকে দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নিতে চান। তাদের পুরনো রাজনীতি একইভাবে কাজ করছে।

প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, অর্থমন্ত্রী মুক্ত বাজার অর্থনীতির নব্য উদারবাদী দর্শন থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। সমতার কথা বলেছেন কিন্তু সেটা আমি খুঁজে পাইনি। অর্থনৈতিক সমিতির সমীক্ষা অনুসারে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি ৫৫ লাখ। এত সংখ্যক দরিদ্র মানুষ রেখে সমতাভিত্তিক সমাজ কিভাবে প্রতিষ্ঠা করা হবে? মন্ত্রী বলেন, প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির সাথে সাথে আয় বৈষম্য বাড়ছে। প্রবৃদ্ধির সাথে বৈষম্য বাড়ছে। বৈষম্য দূরীকরণে কৌশলের কথা বলেছেন সামাজিক নিরাপত্তা বিস্তৃর্ণ করা কথা বলেছেন। কিন্তু রাজস্ব আদায়ের হিসাবে দেখলাম সাধারণ মানুষ ছাড় পায়নি। প্রত্যক্ষ করের চেয়ে পরোক্ষ করের পরিমাণ বেশি। ৩৬ ভাগ প্রত্যক্ষ কর বাকি অংশ পরোক্ষ কর, এর পরিপূর্ণই সাধারণ মানুষের ওপর এসে বর্তাবে। বোস্টন কনসার্নটিং গ্রুপের হিসাব অনুযায়ী এদেশের সোয়া কোটি মানুষের বাৎসরিক আয় ৪ লাখ কিন্তু ট্যাক্স দেন মাত্র ১২ লাখ লোক। ১২ লাখের মধ্যে আড়াই লাখের উপর সাধারণ মানুষ রয়েছে, তারাই বৃহৎ অংশ। ফলে বোঝা যাচ্ছে করের পরিধি বৃদ্ধি না করে যারা কর দিচ্ছে তাদের উপরই কর চাপানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিগত ৪০ বছরে মাত্র কিছু লোকের হাতে সম্পদ পুঞ্জিভূত হয়েছে। অর্থনৈতিক সমিতির ভাষ্য অনুযায়ী ধনীদের মধ্যে একদল সুপার ধনী সৃষ্টি হয়েছে যারা নিজেরা ধন উৎপাদন করে না, যারা লুটপাট করে জবর-দখল করে সম্পদ আহরণ করছে। এর ফলে অর্থনীতিতে ভারস‍াম্য সৃষ্টি হয়েছে। বাজেট আলোচনায় আরও অংশ নেন মাদারীপুর-৩ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, জাসদের মঈনুদ্দিন খান বাদল, ড. হাছান মাহমুদ প্রমুখ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ