রবিবার, জুন ২, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনরুম্মানের অপেক্ষায় সাগর পাড়ে পরিবারের সদস্যরা

রুম্মানের অপেক্ষায় সাগর পাড়ে পরিবারের সদস্যরা

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিখোঁজ বিমানবাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহমিদ রুম্মানের ফেরার অপেক্ষায় আছেন তার স্বজনরা। উদ্বেগাকূল স্বজনরা ঢাকা থেকে এসে জড়ো হয়েছেন চট্টগ্রামের পতেঙ্গায়। কখন ফিরবে প্রিয় রুম্মান, পথ চেয়ে বসে আছেন তারা। বিমানবাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটির স্কোয়াড্রন লিডার জোয়ার্দার সিরাজুল হক জানান, বাবা-মা, ভাইসহ রুম্মানের পরিবারের কয়েকজন সদস্য মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামে এসে পৌঁছান। তাদের জহুরুল হক ঘাঁটিতে রাখা হয়েছে। তবে পরিবারের সদস্যদের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে নেয়া হয়নি। কয়েকজন নিকটাত্মীয় পতেঙ্গায় গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

স্কোয়াড্রন লিডার জোয়ার্দার সিরাজুল হক বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের মানসিক অবস্থা কি সেটা তো নিশ্চয় বুঝতে পারছেন। তাদের আমাদের কাছে রেখেছি। পাইলটের খোঁজে আমাদের তল্লাশি অব্যাহত আছে। সকালে সমুদ্র সৈকতে এবং কাছাকাছি জহুরুল হক ঘাঁটির কাছে গিয়ে রুম্মানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হলেও তাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি। পরিবারের সদস্যরাও কথা বলতে আগ্রহী ছিলেন না। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠা জনপদ আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর ইউনিয়নে রুম্মানদের বাড়ি। ওই গ্রামের আব্দুল কাদের চৌধুরী মানিকের ছেলে রুম্মান। বেসরকারী ইউসিবিএল ব্যাংকে চাকরি করতেন রুম্মানের বাবা। থাকতেন নগরীর মাদারবাড়ি এলাকায়। সেখানেই রুম্মানসহ চার ভাইবোনের জন্ম এবং বেড়ে উঠা।

রুম্মানদের শৈশবের প্রতিবেশি সংস্কৃতিকর্মীর রাশেদ হাসান বলেন, ‘রুম্মানরা প্রত্যেক ভাই-বোন ছোটবেলা থেকেই খুবই সহজ-সাধাসিধে জীবনযাপন করতেন। লেখাপড়ার জন্য চট্টগ্রামের বাইরে গেলেও এমনকি বিমানবাহিনীতে যোগ দেয়ার পরও রুম্মানের মধ্যে কোন ধরনের গাম্ভীর্য দেখিনি।

রাশেদ হাসান জানান, রুম্মানের বাবা ইউসিবিএল ব্যাংকে চট্টগ্রাম থেকে বদলি হবার পর ঢাকায় চলে যান তাদের পরিবার। তার আরেক ভাই আদনান সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছে। সালমান মালয়েশিয়ায় উচ্চ শিক্ষা শেষ করে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। ছোট বোন অন্তরা এসএসসি পাস করেছেন। এদিকে সাগর উত্তাল থাকায় নিখোঁজ বৈমানিক তাহমিদ রুম্মানের খোঁজে বেগ পেতে হচ্ছে অনুসন্ধানকারী দলকে। তবে ব্যাঘাত ঘটলেও বঙ্গোপসাগরে তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও কোস্টগার্ড। তল্লাশি অব্যাহত থাকলেও বঙ্গোপসাগরে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিখোঁজের প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরও তাহমিদের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।

কোস্টগার্ডের পূর্ব জোনের অতিরিক্ত কমান্ডার এম দূরুল হুদা বলেন, সাগর প্রচন্ড উত্তাল। আমাদের কাজে খুব ব্যাঘাত হচ্ছে। সীমিতভাবে তল্লাশি চালাচ্ছি। এ পর্যন্ত নতুন কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। ২৯ জুন সকাল ১১টার দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বিমান বাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে অভ্যন্তরীণ নিয়মিত উড্ডয়নের অংশ হিসেবে এফ-৭ যুদ্ধবিমানটি উড়াল দেয়।

১১টা ১৪ মিনিটের দিকে বিমানবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সাড়ে এগারোটার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গরের ব্রাভো অ্যাংকারেজে বঙ্গোপসাগরে প্লেনটি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। বঙ্গোপসাগরে থাকা বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি আলেকজান্ডারের ওয়াচম্যান মো.বাবুল জানান, সাড়ে ১১টার দিকে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে সাগরে পড়তে তিনি দেখেছেন। এরপর তিনি আরেক জাহাজে কর্মরত তার ভাই হায়দার আলীকে ফোন করে বিষয়টি জানান। হায়দার আলী বিষয়টি কোস্টগার্ডকে জানান। বিমানবটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় পাইলট হাত নাড়েন বলেও দাবি হায়দারের।

দুর্ঘটনার পরপর কোস্টগার্ড, নৌবাহিনীর তল্লাশি দল ঘটনাস্থলে যায়। নৌবাহিনী তিনটি জাহাজ দিয়ে পুরো দুর্ঘটনাস্থল কর্ডন করে তল্লাশি শুরু করে। কোস্টগার্ডের সিজিএস তৌফিক এবং তিনটি মেটাল শার্কও তল্লাশিতে অংশ নেয়। প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশ ঘিরে চক্কর দিতে থাকে বিমানবাহিনীর তিনটি হেলিকপ্টার। সোমবার বিকেল তিনটার দিকে বঙ্গোপসাগরে ভাসমান অবস্থায় বিধস্ত বিমানের পাখার তিনটি অংশের সন্ধান মেলে।

  • বিষয়:
  • top
আরও পড়ুন

সর্বশেষ