রবিবার, মে ১৯, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় পুলিশ কমিশনার রমজানে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, যানজট ছিনতাই...

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় পুলিশ কমিশনার রমজানে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, যানজট ছিনতাই ও চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা

ন্যাশনাল ডেস্কঃ (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

রমজানে নিত্যপণ্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, যানজট, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নগর পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম। একই সঙ্গে তিনি ট্রাফিক বিভাগে দুর্নীতিবাজ কেউ থাকলে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
তিনি বলেছেন, ‘রমজানে ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও মজুদদারি বন্ধে মনিটরিং এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে নগর পুলিশের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী মাঠে থাকবে। যেখানেই সমস্যা আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা সমাধান দেব। আমাদের ওপর আস্থা রাখলে ব্যবসায়ী ও নগরবাসীর সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।’
ব্যবসায়ীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘সবাই ট্রাফিক আইন অমান্য করতে চায়, মাঝখানে দু-একজন ট্রাফিক পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। সবাই আগে যেতে চায় কিন্তু কেউই যেতে পারে না। অন্যদিকে দু-একজন অসৎ লোকের জন্য আমাদের বাহিনীর অসম্মান হতে দেওয়া যায় না। ট্রাফিক বিভাগকে তাদের চিহ্নিত করে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।’
চট্টগ্রাম নগর পুলিশ (সিএমপি) সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে রমজান উপলক্ষে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সভাপতির বক্তব্যে কমিশনার এ ঘোষণা দেন।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম শহিদুর রহমান, বনজ কুমার মজুমদার, উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ-উল-হাসান, কুসুম দেওয়ান, মো. মনিরুজ্জামান, মো. সুজায়েত ইসলাম, মো. সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার উত্তম কুমার পাল, মোস্তাক আহমেদ, এস এম তানভীর আরাফাত, অনিন্দিতা বড়ুয়া, মো. তারেক আহম্মেদ, মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, মো. আরেফিন জুয়েল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ভেজাল খাদ্য বিক্রেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, ‘বিভিন্ন বাজারে মুরগি, মাছ, মাংসসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য বিক্রির সময় ওজনে কারচুপি করা হয়। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হলে কেউ দ্বিতীয়বার সাহস পাবে না। পাইকারি বাজারে যে দামে পণ্য বিক্রি করা হয় খুচরা বাজারে তার চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি করা হয়। এ বিষয়টা মনিটর করলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।’
কাজীর দেউড়ি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘নগরের ৩টি বাজারে মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগে ফরমালিন শনাক্তের মেশিন দেওয়ায় আমরা খুশি। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বাজারেও এ ধরনের মেশিন দেয়া উচিত।’
মেট্রোপলিটন শপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আবুল কাশেম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়লে দেশের বাজারে দ্রুত দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে সেখানে দাম কমলে এখানে কমানোর কোনো লক্ষণই দেখা যায় না। রমজানে ভোজ্যতেলের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত এবং মূল্য স্বাভাবিক রাখার জন্য পুলিশ কমিশনার হস্তক্ষেপ করতে পারেন।’
চট্টগ্রাম ডাল মিল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আহমদ রশিদ আমু বলেন, ‘এবার ছোলা, খেসারি, মটর এসব পণ্যের দাম বাড়বে না। এক্ষেত্রে ছোলা-মটরের ট্রাকগুলো যাতে অবাধে চলাচল করতে পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। মাঝিরঘাট ও পোর্ট কানেকটিং সড়ক থেকে এসব ট্রাক খাতুনগঞ্জে আসতে দিতে হবে। যদি যানজট হয় তবে গাড়িভাড়া বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দামও বেড়ে যায়।’
তিনি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘মাঝিরঘাট থেকে খাতুনগঞ্জের ট্রাক ভাড়া ৩ হাজার ৪০০ টাকা, অন্য দিকে পোর্ট কানেকটিং থেকে খাতুনগঞ্জের ট্রাক ভাড়া ৩ হাজার ২০০ টাকা। কম দূরত্বের হয়েও কেন মাঝিরঘাট থেকে ভাড়া বেশি হবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।’
অন্যান্যের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন চিটাগাং চেম্বারের পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ছালামত আলী, বিপণিবিতান মার্চেন্ট ওয়েলফেয়ার কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ খুরশীদ আলম, মিমি সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ওবায়দুল করিম প্রমুখ।
সমাপনী বক্তব্যে পুলিশ কমিশনার রমজান উপলক্ষে যানজট নিরসনে বড় বড় মার্কেটসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার, বখাটে ছেলেদের চিহ্নিত করার ব্যবস্থা, ছিনতাইপ্রবণ এলাকায় অভিযান, বড় বড় মার্কেটে র্যাবের টহল ব্যবস্থা, জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা, রাস্তার ফুটপাত হকারমুক্ত রাখা, মলম ও অজ্ঞান পার্টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ সব ধরনের পুলিশি সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, ‘স্বর্ণের দোকান আছে এমন মার্কেটে ২-১ মাস আগে যদি কোনো নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ দিয়ে থাকেন তবে ছবিসহ নিকটস্থ থানায় জীবনবৃত্তান্ত জমা দিন। আমরা তার গ্রামের ঠিকানায় ভেরিফাই করব। কারণ এ ধরনের লোকজন সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্য হয়ে থাকে। পরে ঈদের ছুটির সময় দেখা যায় ডাকাতি হয়ে গেছে।’
পুলিশ কমিশনার বড় বড় শপিং মলে সিসি টিভির ব্যবস্থা, ব্যবসায়ী ও কেনাকাটা করতে আসা নারী ও শিশুর নিরাপত্তার জন্য নারী স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেওয়া, নিজস্ব কর্মী দিয়ে ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতা, মার্কেটে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, বখাটেদের ও সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান, নিরাপত্তা লাইট সঠিক রাখা, মাইক ও বাঁশির ব্যবস্থা রাখার জন্য মার্কেট মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ