মঙ্গলবার, মে ৭, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনবাবু মিয়ার শেষ ইচ্ছায় এক হলেন মাসুদ-জাবেদ

বাবু মিয়ার শেষ ইচ্ছায় এক হলেন মাসুদ-জাবেদ

javed-s.alam

বিশেষ প্রতিনিধিঃ (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও দেশের অন্যতম শিল্পপতি আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু মারা যাওয়ার পর তাঁর বড় ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও বড় বোনের ছেলে সাইফুল আলম মাসুদ এক হয়েছেন! অথচ গত কয়েক বছর ধরে এই দুই ভাইয়ের এমনকি ভাই-বোনের পরিবারের মধ্যে ছিল যোজন যোজন দূরত্ব। একে অপরের ছায়াও মাড়াতেন না।
সাইফুল আলম মাসুদ হলেন দেশের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান, দেশের অন্যতম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকেরও চেয়ারম্যান তিনি। সাইফুজ্জামান চৌধুরী দেশের অন্যতম খ্যাতনামা শিল্পপ্রতিষ্ঠান আরামিট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সম্প্রতি তিনি বাণিজ্যিক ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবিএল) নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার আগে বাবার শুন্য আসন আনোয়ারা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন জাবেদ। সম্পর্কে তারা দুইজন মামাতো-ফুফাতো ভাই।
গত বছরের ৪ নভেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালে মারা যান আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। চট্টগ্রামে তিনি বাবু মিয়া নামেই বেশি পরিচিত। মারা যাওয়ার আগে হসপিটালের বেডেই এই দুই পরিবারের বহুল আলোচিত বিবাদ মিটিয়ে দেন তিনি। ভাগ্নে মাসুদের হাতে তুলে দেন নিজের বড় ছেলে জাবেদকে। আর বলে যান, তোমরা সবাই মিলেমিশে থাকিও। মামা-ভাগ্নের কান্না পুরো হাসপাতালের পরিবেশকে ভারি করে তোলে, তৈরি হয় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের।
এ প্রসঙ্গে সাইফুল আলম মাসুদ বলেন, ‘আমরা এখন সবাই ঐক্যবদ্ধ আছি। নিয়মিত যাতায়াত চলছে দুই পরিবারের মধ্যে। পুরনো কথা ভুলে গেছি।’
একই প্রসঙ্গে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার আগে আমাদেরকে মিলেমিশে থাকার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। আমাদের দুই পরিবারের সম্পর্ক এখন চমৎকার।’
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আখতারুজ্জামান বাবুকে বলা হতো ‘ড্যাশিং পলেটিশিয়ান’। রাজনীতিতে টাকা খরচের যে চর্চা সেটিও প্রথম শুরু করেছিলেন এই বাবু। আশির দশকে দুটি বিলাসবহুল দামি পাজেরো জিপ আমদানি করেছিলেন তিনি। একটি উপহার দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে, আর একটি ব্যবহার করতেন নিজে। দুটি গাড়িরই রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল চট্টগ্রামে এবং এ দুটি গাড়ির নম্বর ছিল ক্রমানুসারে। প্রথমটি নম্বরটি পাঠানো হয়েছিল শেখ হাসিনার জন্য পরেরটি নিজের।
মামা আখতারুজ্জামান বাবুর হাত ধরেই ভাগ্নে সাইফুল আলম মাসুদের ব্যবসা শুরু। সে কথা অকপটে স্বীকারও করেন জনাব মাসুদ। আবার এমন আলোচনাও রয়েছে ক্ষেত্রবিশেষে মাসুদের ব্যবসার পরিধি মামার পরিবারকেও ছাড়িয়ে যায়। চিকিৎসা থেকে শুরু করে লাশ দেশে আনা, সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে মামার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর ক্ষেত্রে সামান্যতম কাপর্ণ্য দেখাননি ভাগ্নে, কয়েক কোটি টাকা খরচ করেন।
জনাব মাসুদ বয়সে বড় হলেও জাবেদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বের। ইউসিবিএল ব্যাংকের পরিচালক হুমায়ুন জহির হত্যা মামলার পর অজানা এক কাহিনী থেকে মামা-ভাগ্নের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। কয়েক বছর তাদের পারিবারিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন ছিল।
গত শুক্রবার চট্টগ্রামের সার্সন রোডের বাসায় গিয়ে ফুল দিয়ে জাবেদকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মাসুদ। সঙ্গে ছিলেন মাসুদের মা ও জাবেদের ফুফু চেমন আরা বেগম ও মাসুদের স্ত্রী ফারজানা পারভীন পপি। ফুল দেওয়ার ওই মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন জাবেদের মা নুরনাহার জামান। বছর খানেক আগেও দুই পরিবারের এমন হৃদ্যতাপূর্ণ ও ঘনিষ্ঠ ছবি ছিল কল্পনারও বাইরে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ