বুধবার, মে ৮, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনফারুকীর হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ হরতাল চলছে

ফারুকীর হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ হরতাল চলছে

ctg_hartal_Farukiইসলামী ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা নুরুল ‌ইসলাম ফারুকীর হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে চট্টগ্রামে ছাত্রসেনার আহবানে শান্তিপূর্ণভাবে অর্ধদিবস হরতাল চলছে। রোববার সকাল থেকে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। গ্রেপ্তার হয়নি কোনো পিকেটারও। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায় দুই হাজার অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।সকাল থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ভারি যানবাহন কম চলতে দেখা গেছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে। সকালে থেকে নগরী থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে না গেলেও ট্রেন ও বিমানের সকল ফ্লাইট ছেড়ে গেছে যথানিয়মে।

ইসলামী ছাত্রসেনা ও ইসলামী ফ্রন্টের নেতাকর্মীরা সকাল থেকে নগরীর মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, জিইসি মোড়, চকবাজার, দেওয়ানহাট এলাকায় অবস্থান নিয়ে গাড়ি চলাচলে বাধা দেয়। সড়কে রোড ডিভাইডার ছড়িয়ে দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। মুরাদপুর এলাকায় সবধরণের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। নগরীর মুরাদপুর মোড়ে  সমাবেশে ইসলামী ফ্রন্ট ও ইসলামী ছাত্রসেনার নেতারা বক্তব্য দেন। এছাড়া জেলার হাটহাজারী, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, পটিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলার কয়েকটি পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে হরতাল পালন করছে ইসলামী ছাত্রসেনার কর্মীরা।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন রব্বানী বলেন, ‘ইসলামী ছাত্রসেনার কর্মীরা নগরীর অন্তত ৩০টি পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করছে। সেখানে তারা মিলাদ কেয়াম ও সমাবেশ করছে। ছাত্রসেনা একটি আদর্শিক সংগঠন। জ্বালাও-পোড়াও-ভাংচুরে আমরা বিশ্বাসী না।’ ‘মাওলানা ফারুকী ছিলেন সুন্নী জনতার হৃদয়ের স্পন্দন। ফলে দেশের আশেকে রসুলগণ এই হরতালে স্বতস্ফূর্তভাবে সাড়া দিয়েছে’, বলেন তিনি।

এদিকে ইসলামী ছাত্রসেনার ডাকা হরতালে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায় দুই হাজার অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ছাত্রসেনার হরতালের আড়ালে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী যাতে কোন ধরনের নাশকতা করতে না পারে সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে নগর পুলিশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীর অর্ধশতাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্পটে ভোর ৫টা থেকে মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। থানা থেকে ফুট পেট্রল টিম এবং মোবাইল টিম নগরীতে টহল দিচ্ছে। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন প্রবেশপথে চেকপোস্টগুলোতে সতর্ক প্রহরা রয়েছে।

নগর পুলিশের উপ কমিশনার (সদর) মাসুদ-উল-হাসান বলেন, নাশকতা এড়াতে আমাদের কিছু নিজস্ব স্ট্র্যাটেজি আছে। সেগুলো আমরা প্রয়োগ করছি। পুলিশ লাইন থেকে দুই হাজার অতিরিক্ত ফোর্স আনা হয়েছে। ছাত্রসেনার নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ যেন নাশকতা করার সুযোগ না পায় সেদিকে লক্ষ্য রয়েছে। এদিকে নাশকতা ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে নগরজুড়ে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো.হাসান বলেন, আমাদের কয়েকটি টিম মাঠে আছে। বড় কোন নাশকতার আশংকা আমরা করছিনা। এরপরও আমরা সতর্ক আছি। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (পশ্চিম) এস এম তানভির আরাফাত বলেন, সকাল থেকে কোন ধরণের অপ্রীতিকর খবর পাওয়া যায়নি। গাড়ি ভাংচুর, চলাচলে বাধা দেয়া, মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে মাঠ পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এদিকে হরতালে নাশকতা মোকাবেলায় র‌্যাবের টহল টিম পুরো নগরজুড়ে টহল দিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রসেনার সাংগঠনিক অবস্থান মজবুত এমন উপজেলাগুলোতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এর বাইরে সব থানাকে সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, রাজধানীতে নিজের বাসায় খুন হয়েছেন ইসলামী ফ্রন্টের এক নেতা, যিনি টেলিভিশনে ইসলামী অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করতেন। গত বুধবার রাতে পূর্ব রাজাবাজারে বাড়ির সবাইকে বেঁধে মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে গলা কেটে হত্যা করা হয় বলে পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছে। নুরুল ইসলাম ইসলামী ফ্রন্টের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। সেইসঙ্গে সুন্নিভিত্তিক সংগঠন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতেরও নেতা ছিলেন। তিনি হাই কোর্ট মাজার মসজিদের খতিবও ছিলেন। নুরুল ইসলাম ফারুকীর হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রোববার দেশব্যাপী অর্ধদিবস হরতালের ডাক দিয়েছে ইসলামী ছাত্রসেনা।
আরও পড়ুন

সর্বশেষ