বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কেনো শুধু আওয়ামী লীগই স্মরণ করবে? কেনোই বা কেবলমাত্র তাকে আওয়ামী লীগই শ্রদ্ধা জানাবে? এ জাতির প্রত্যেকেরই উচিত তাকে শ্রদ্ধা আর সম্মান জানানো বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, বাঙ্গালি জাতি বড় অকৃতজ্ঞ জাতি। এ জাতিই পারে তার জাতির পিতারকে অশ্রদ্ধা করতে। আর তাই তো দেশের কতিপয় মানুষ তাকে অশ্রদ্ধা করেন। তারা জাতির জনকের শাহাদাত বার্ষিকীতে কেক কেটে বিকৃত উল্লাসে মেতে ওঠেন। তাই এমন জাতি কোথায় পাবেন! বুধবার রাজধানীর শেরে বাংলানগর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি যাকে দেখলেই শ্রদ্ধা চলে আসে। যার মুখ দেখেই মনে হয় ধর্মভীরু মানুষ। শুরু থেকে তাকে দেখেই মনে হতো তিনিই পারেন এ জাতিকে মুক্তি দিতে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছিলো আসাধারণ স্মরণ শক্তি। কাউকে একবার দেখলে, একবার কথা বললে ১০ বছর পরেও তার নাম ধরে ডাকতে পারতেন। তিনি বলেন, ইতিহাসের দিকে যদি তাকাই, তবে প্রতিটি পরতে পরতে তার উপস্থিতি আমরা লক্ষ্য করি। বঙ্গবন্ধুর অপরাজেয় নেতৃত্বের কারণেই এ দেশ স্বাধীন হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, মানুষের ভিন্ন আদর্শ থাকতে পারে। কিন্তু তার জন্য একটি জাতির পিতাকে অশ্রদ্ধা জানাতে হবে? আসলেই বাঙ্গালি জাতি বড় অকৃজ্ঞ জাতি। তাই বঙ্গবন্ধুর প্রতি অশ্রদ্ধা বাঙ্গালি জাতিই করতে পারে।
তিনি বলেন, চীনের মাও সে তুং, ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ন, ভারতের মহাত্মা গান্ধি, তুরস্কের কামাল আতার্তুকসহ পৃথিবীর এমন কোনো দেশে নেই, যেখানে তাদের জাতির পিতাকে অশ্রদ্ধা জানানো হয়, অসম্মান করা হয়। তিনি বলেন, কেবল বাংলাদেশেই কতিপয় মানুষ তা করেন। এ দেশে জাতির পিতার শাহাদাত বার্ষিকীতে নকল জন্মদিনের কেক কাটা হয়। কিন্তু আমরা যে এই দিনে মহান নায়ককে হারিয়েছি এ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই তাদের!
এ সময় তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, যার জন্য এ দেশ স্বাধীন হলো তাকে কেনো সেই স্বাধীন দেশে অশ্রদ্ধা জানানো হবে? কেনো কেক কেটে বিকৃত আনন্দ উল্লাস করতে হবে। আওয়ামী লীগ নয় বরং দেশের সব মানুষের উচিত বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানো।
আওয়ামী লীগ সরকারকে নিয়ে বিভিন্ন সময় করা বিএনপির সমালোচনার জবাবে মন্ত্রী বলেন, সংবিধানে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। কয় শতাংশ ভোট কাস্ট হতে হবে তা বলা নেই। আমরা নির্বাচন করেই সংসদে গিয়েছি। সরকার গঠন করেছি।তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ওই নির্বাচনে অংশ নিলেন না। এতে তিনি বড় ভুল করেছেন। এখন পাঁচ বছরের জন্য আমরা ক্ষমতায় এসেছি। সরকারের পূর্ণ মেয়াদ শেষে ২০১৯ সালের নির্বাচন হবে। সে নির্বাচনেও জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগই আবার ক্ষমতায় আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন নাসিম। এ সময় মন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর খুনিদের যারা সহযোগিতা করেছেন তাদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। এ আলোচনায় মূল আলোচক হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক হারুনুর রশীদ বলেন, ৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭ মার্চের ভাষণ পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলনেই বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালির স্বাধীনতার কথা বলেছেন।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এবং জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল আয়োজিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক জলিল আহমেদ।
এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএমএর সাবেক মহাসচিব শারফুদ্দীন আহম্মেদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক অধ্যাপক দীন মোহাম্মদ নুরুল হক, স্বাচিপ ও বিএমএর মহাসচিব অধ্যাপক এম ইকবাল হক, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী প্রমুখ।