শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনকর্ণফুলীতে টানেল নির্মাণে চীনের সঙ্গে সমঝোতা সই

কর্ণফুলীতে টানেল নির্মাণে চীনের সঙ্গে সমঝোতা সই

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা সই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের চতুর্থদিনে গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টায় এ সমঝোতা সই হয়। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহ্‌ রিয়ার আলম বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের পক্ষে এ সমঝোতা সই করেন সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং চীনের পক্ষে সই করেন সে দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী গাও সুচিং।

প্রস্তাবিত টানেলের দৈর্ঘ্য হবে তিন কিলোমিটার। এতে ব্যয় হবে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। এছাড়া দুই লাইন বিশিষ্ট এ টানেলের উভয় পাশে আরো দেড় কিলোমিটার করে সংযোগ সড়ক থাকবে। টানেল দিয়ে চলাচলকারী যানের গতি হবে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার।এর আগে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ে পাঁচটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের গ্রেট হলে গতকাল দু’দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে দু’দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্বাক্ষর করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং নিজ নিজ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। খবর বাসস, বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।

স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো হলো বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনীতি ও কারিগরি সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি এবং পটুয়াখালীতে কয়লাচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন চুক্তি। সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে চট্টগ্রামে চীনা ইকোনোমিক এন্ড ইনভেস্টমেন্ট জোন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ জোন কর্তৃপক্ষ (বেপজা) এবং চীনের হারবার এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি এই সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে। বন্যা নিয়ন্ত্রণে গবেষণা এবং দুর্যোগে উদ্ধার কার্যক্রমের সরঞ্জাম সহযোগিতার বিষয়ে দুটি বিনিময়পত্রও সই হয়েছে।

শীর্ষ বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পাঁচটি প্রকল্পের কথা তুলেছেন, যাতে আগামীতে চীনের সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। বৈঠকেই চীনা প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন এই প্রকল্পগুলো কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা নিরূপন করতে। প্রস্তাবিত প্রকল্পসমূহ হলো বাংলাদেশ সরকারের জন্য ন্যাশনাল আইসিটি ইনফ্রানেটওয়ার্ক (ফেস), রাজশাহী ওয়াসা সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণ, কালুরঘাট পয়েন্টে কর্ণফুলি নদীর ওপর দ্বিতীয় রেলওয়েকামসড়ক সেতু নির্মাণ, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন ডুয়েল গেজ রেল লাইন স্থাপন (যা রামু পর্যন্ত যাবে এবং রামু থেকে বাংলাদেশমিয়ানমার সীমান্ত ঘুনধুম পর্যন্ত আরেকটি লাইন যাবে), ইস্টার্ন রিফাইনারী ইউনিট২ এবং সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রজেক্ট প্রতিষ্ঠা।

সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে শহীদুল হক বলেন, ‘এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা নিয়ে দু’পক্ষ আলোচনা চালিয়ে যাবে বলে সম্মত হয়েছে।’ শীর্ষ বৈঠকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ আরো বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। বৈঠকের আগে গ্রেট হল অফ পিপলএ গার্ড অফ অনার দেয়া হয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি গার্ড পরিদর্শন করেন এবং সামরিক অভিবাদন গ্রহণ করেন। শেখ হাসিনা গ্রেট হল অফ চায়নায় পৌছালে চীনের প্রধানমন্ত্রী তাকে স্বাগত জানান। এরপর দুই সরকার প্রধান তাদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একে অন্যকে পরিচয় করিয়ে দেন। পরিচয় পর্ব শেষে শেখ হাসিনা ও লি কেকিয়াং অভিবাদন মঞ্চে গিয়ে দাঁড়ালে চীনের সামরিক বাহিনীর বাদক দল দু’দেশের জাতীয় সংগীত বাজায়। বৈঠকের শুরুতেই লি কেকিয়াং বলেন, শেখ হাসিনার উদ্যোগে বেইজিংয়ের সঙ্গে ঢাকার যে মজবুত সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তা আরো জোরদার হচ্ছে।

চীনকে বাংলাদেশের ‘বিশ্বস্ত বন্ধু’ অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার বেইজিংয়ের সঙ্গে এই সম্পর্ককে সবসময় গুরুত্ব দেয়। লি কেকিয়াং এর নেতৃত্বে চীন বিশ্ব অর্থনীতিতে শীর্ষস্থানে উঠে আসার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। চীনের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশচীনভারতমিয়ারমার (বিসিআইএম) করিডোরের কথা উল্লেখ করেন বলে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, বিসিআইএম দ্রুত বাস্তবায়নে চীন বাংলাদেশের সহযোগিতাও চেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভাব্য সব কিছু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আগামী সেপ্টেম্বরে কক্সবাজারে বিসিআইএমএর দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ