শনিবার, মে ১৮, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়পাঁচ বছরে কীভাবে শত কোটি টাকা সম্পদের মালিক হলেন হাওলাদার: মাঠে নামছে...

পাঁচ বছরে কীভাবে শত কোটি টাকা সম্পদের মালিক হলেন হাওলাদার: মাঠে নামছে দুদক

ষ্টাফ  রিপোর্টার  (বিডিসময়২৪ডটকম)

পাঁচ বছরে কীভাবে শত কোটি টাকা সম্পদের মালিক হলেন রুহুল আমিন হাওলাদার? এসব সম্পদের উৎসই বা কি? মহাজোটের অংশীদার হয়ে ক্ষমতায় থেকে যে টাকা আয় করেছেন তা এখন কোথায়? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শিগগিরই মাঠে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব পদ থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া এ-নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, অবৈধ উৎসের মাধ্যমে তিনি যে অর্থ আয় করেছেন তার একটি অংশ দেশের বাইরে পাচার করেছেন।  যুক্তরাজ্যের ব্যাংকে তার একটি যৌথ অ্যাকাউন্ট থাকার অভিযোগ এসেছে সংস্থাটিতে। অর্থের পরিমাণ জানতে এবং তা ফেরত আনতে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে সমঝোতামূলক আইনি সহায়তার আবেদন  (মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স রিকোয়েস্ট-এমএলএআর) করবে দুদক।

অনুসন্ধানের স্বার্থে দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্র ব্যাংকটির নাম জানায় নি। এছাড়া বিদেশের আর কোন কোন ব্যাংকে তিনি অর্থ পাচার করেছেন তা-ও খতিয়ে দেখবে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। দুদক জানায়, পাঁচ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে প্রায় আটগুণ। আয় বেড়েছে ১৩ গুণের বেশি।

দুদকের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানায়, শিগগিরই এ-সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে কয়েকটি ব্যাংকের কাছে তার অ্যাকাউন্টের তথ্য নেওয়া হবে। এছাড়া তার সম্পদের হিসাব চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, রাজউক, ঢাকা ও পটুয়াখালী জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে চিঠি দেওয়া হবে।

হলফনামায় সম্পদ গোপন!

জাতীয় পার্টির এ-নেতার বিরুদ্ধে সম্পদ গোপনের অভিযোগও রয়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিলকৃত হলফনামায় অনেক সম্পদের তথ্যই নেই হাওলাদারের। দুদকের কাছে তথ্য রয়েছে, তার মালিকানাধীন কে আর ফ্যাশনের নামে কুয়াকাটায় রয়েছে প্রায় শত একর জমি। এসব সম্পদের উল্লেখ নেই তার হলফনামায়। কুয়াকাটায় কোটি টাকা মূল্যের সরকারি জমি দখলে রয়েছে রুহুল আমিন হাওলাদারের এই প্রতিষ্ঠানটির।

কুয়াকাটা পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন সরকারি জমি, কুয়াকাটা প্রেসক্লাব রোড়, তুলাতলিসহ কুয়াকাটায় রয়েছে শত কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ। কুয়াকাটার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে কে আর ফ্যাশনের সাইন বোর্ড। এগুলোর গায়ে লেখা রয়েছে ‘ক্রয় সূত্রে এ জমির মালিক কে আর ফ্যাশন’। আর স্বত্বাধিকারী হিসাবে লেখা আছে ‘আলহাজ্ব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার’। কুয়াকাটায় সমুদ্র সৈকতের বাঁধ ঘেঁষেই তৈরি হচ্ছে রুহুল আমিনের বিলাসবহুল হোটেল। হলফনামায় এই হোটেলের বিপরীতে সাত কোটি টাকা ঋণের কথা উল্লেখ রয়েছে।

২০১৩ সালে দেওয়া হলফনামার তথ্যানুযায়ী পাঁচ বছরে রুহুল আমিন হাওলাদারের সম্পদ বেড়েছে প্রায় আটগুণ। আয় বেড়েছে ১৩ গুণের বেশি। সঙ্গে ৩০ কাঠার একটি প্লটের মালিকও হয়েছেন। অন্যদিকে স্ত্রীর সম্পদও বেড়েছে সাতগুণের বেশি।

নবম সংসদ নির্বাচনের আগে রুহুল আমিন হাওলাদারের টাকা ছিল ১৭ লাখ ৬৮ হাজারের কিছু বেশি। পাঁচ বছর পর এসে এখন তার নিজের নগদ টাকাই আছে ৬ কোটি ৬৬ লাখের বেশি। গতবার তার কোনো শেয়ার বা বন্ড ছিল না। এবার স্বামী-স্ত্রীর ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার, দুটি ল্যান্ডক্রুজার গাড়ি, প্লটসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পদ বেড়েছে।

নির্বাচন কমিশনে রুহুল আমিন হাওলাদারের জমা দেয়া হলফনামা অনুযায়ী তার বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট বা দোকানভাড়া থেকে আয় হয়েছে ১ কোটি ৬২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। গতবার এ-খাত থেকে আয় হয়েছিল ১৩ লাখ আট হাজার ৯৩৮ টাকা। সংসদ সদস্যের পারিতোষিক হিসেবে তার বার্ষিক আয় ১৩ লাখ ৮৯ হাজার ৬২৫ টাকা।

গত পাঁচ বছরে রুহুল আমিন হাওলাদার ৬৭ লাখ ৯৪ হাজার পাঁচশ’ ৩০ টাকা দামের একটি ও তার স্ত্রী ৫৯ লাখ ৪৪ হাজার পাঁচশ’ ৩০ টাকা দামের আরেকটি গাড়ির মালিক হয়েছেন। দুটো গাড়িই ল্যান্ডক্রুজার ব্র্যান্ডের। তার স্ত্রীর একশ’ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ অন্যান্য অলঙ্কার রয়েছে। হলফনামায় উল্লেখ আছে, তিনি ধার দিয়েছেন ১০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। স্ত্রীকেও অর্থ ধার দিয়েছেন তিনি।

রুহুল আমিন হাওলাদারের নামে গুলশানে ১২ দশমিক ৭ কাঠা জমি রয়েছে। স্ত্রীর নামে পূর্বাচলে সাড়ে ৭ কাঠা জমি রয়েছে। রুহুল আমিনের আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন আছে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৭৬ হাজার ১৩৮ টাকা মূল্যের। অথচ গতবারের মতো এবারো স্ত্রীর নামে ১০ লাখ টাকার দালান ও একটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ