বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনএবারে দ্বিগুণ হতে পারে চট্টগ্রামের মন্ত্রীর সংখ্যা, চলছে লবিং

এবারে দ্বিগুণ হতে পারে চট্টগ্রামের মন্ত্রীর সংখ্যা, চলছে লবিং

নব-নির্বাচিত সাংসদদের শপথ গ্রহণের পর চট্টগ্রামের ১৫ সংসদ সদস্যের অনেকেই ঢাকায় অবস্থান করছেন। আগামীকাল রোববার নতুন সরকারের মন্ত্রী পরিষদের শপথ অনুষ্ঠানের পর চট্টগ্রাম ফিরবেন বলে জানিয়েছেন কয়েকজন সাংসদ। চট্টগ্রাম থেকে এবার মন্ত্রিসভায় কারা স্থান পাচ্ছেন তা নিয়ে চলছে এখন নানা গুঞ্জন। মন্ত্রিসভায় স্থান, পেতে শুরু হয়েছে জোর লবিং ও নানা তদবির। বিষয়টি স্বীকার করেছেন চট্টগ্রামের একাধিক সাংসদ। তবে এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না। বিষয়টি দলীয় প্রধানের উল্লেখ করেই এড়িয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। নতুন মন্ত্রিসভায় ক্লিন ইমেজ, দক্ষ-উদ্যমী নবীন-প্রবীণ সাংসদদের দেখা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। চট্টগ্রাম থেকে গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ সংখ্যক সাংসদ এবারের মন্ত্রী সভায় স্থান পেতে পারেন, এই সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে বেশ জোরেশোরে।
শপথ অনুষ্ঠানের পর থেকে চট্টগ্রাম থেকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সম্ভাব্য তালিকায় কারা রয়েছেন, এ নিয়ে জনমনে চলছে নানা গুঞ্জন। অন্তহীন কৌতূহল জনগণের মধ্যে। রাজনৈতিক মহলেও চলছে জল্পনা-কল্পনা। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কারা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন একমাত্র সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই জানেন। অন্য কেউ এ নিয়ে বলতে পারেন না বলে কৌশলে এড়িয়ে যান তিনি।
মন্ত্রী পরিষদে যাঁরা স্থান পেতে পারেন বলে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে, তাঁরা হলেন : চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত ছয় বারের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রবীণনেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনীয়া-বোয়ালখালী একাংশ) সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদ ও নির্বাচনকালীন অন্তবর্তী সরকারের মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম বিএসসি। এছাড়াও রয়েছেন- জাতীয় পার্টির দুই সাংসদ, অন্তবর্তীকালীন সরকারের পানি সম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন আহমদ বাবলু। সাবেক মন্ত্রী ও সাম্যবাদী দলের সভাপতি দিলীপ বড়ুয়াকে এবারও মন্ত্রিসভায় দেখা যেতে পারে। তিনি টেকনোক্রেট কোটায় মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য বিভিন্ন লবিং রয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
এছাড়াও আওয়ামী লীগের নতুন মুখ সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদ ড. আবু রেজা মো. নেজামউদ্দিন নদভীকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে দেখা যেতে পারে। চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি, আনোয়ারা-পশ্চিম পটিয়া থেকে নির্বাচিত এমপি সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দেখা যেতে পারে। তাঁর পিতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু আওয়ামী লীগের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। বাবু একাধিকবার সাংসদ নির্বাচিত হলেও মন্ত্রী হতে পারেননি। সেই আক্ষেপ নিয়ে তিনি পরপারে চলে যান।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদে চট্টগ্রাম থেকে তিন জন মন্ত্রী পরিষদে স্থান পেয়েছিলেন। তাঁরা হলেন, আওয়ামী লীগের ডা. আফছারুল আমীন, ড. হাসান মাহমুদ ও সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া। নির্বাচনকালীন অন্তবর্তী সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায়ও চট্টগ্রাম থেকে তিন জন স্থান পেয়েছেন। তাঁরা হলেন, জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ও আওয়ামী লীগের ড. হাছান মাহমুদ।
তবে দশম জাতীয় সংসদে চট্টগ্রাম থেকে গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ সংখ্যক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী স্থান পাচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র জানায়। দশম সংসদে জাতীয় পার্টির সদস্যরা শপথ নিলেও তাদের দলীয় অবস্থান সরকারে ও বিরোধীদলে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের ‘৯৬ এর আদলে ‘জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ গঠনের দিকে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। কারণ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ধরে রাখতে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছেন চট্টগ্রামের দুই সাংসদ। এরশাদপন্থী বেগম রওশন এরশাদকে তাঁরা জাতীয় পার্টিকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে ছিলেন। জাপা দলীয় সেই দুই সাংসদ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এর পুরস্কার হিসেবে নির্বাচনীকালীন সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টার দায়িত্ব পান। দশম জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভায়ও তাঁদের মন্ত্রী পদে দেখা যেতে পারে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
প্রবীণ আওয়ামী লীগনেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি গণপূর্ত অথবা বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী, ড. হাছান মাহমুদ পরিবেশ ও বন মন্ত্রীর পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে দেখা যেতে পারে। চট্টগ্রাম-৯ আসনের সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম বিএসসি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মূল্যায়নের আশ্বাস দিয়ে আসনটি জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রতিশ্রুত মতে নুরুল ইসলাম বিএসসিকে মূল্যায়ন করবেন, নির্ভরযোগ্য সূত্র এমনটিই নিশ্চিত করছেন। তাঁকে টেকনোক্রেট কোটায় মন্ত্রিত্ব পদে দেখা যেতে পারে।
আওয়ামী লীগের জন্য চমক রয়েছে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে। এ আসনে জয় লাভ করেছেন ড. আবু রেজা মো. নেজামউদ্দিন নদভী। তিনি আওয়ামী লীগের নতুন মুখ। জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত এ আসনটিতে স্বাধীনতার পরবর্তীকালে এ প্রথম জয় পায় আওয়ামী লীগ। নদভীর সাথে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে ব্যক্তিগত সু-সম্পর্ক রয়েছে। এই কারণে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে দেখা যেতে পারে বলেও নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের ১৬টি আসন থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা জিতেছেন ১২টি আসনে। দুটিতে জাতীয় পার্টি, আর একটি করে জাসদ ও তরীকতে ফেডারেশন প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ