সোমবার, মে ২০, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়হিন্দুদের ওপর হামলার বিচার হয় না কেন?

হিন্দুদের ওপর হামলার বিচার হয় না কেন?

বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক বাড়িঘর এবং মন্দিরে হামলার হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় হিন্দুদের বাড়িঘর হামলার জন্য সরকারের দিক থেকে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে এসব ঘটনার সাথে সরকার দলীয় সমর্থকরাই জড়িত।
বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর বিভিন্ন সময় আক্রমনের ঘটনায় এরকম পাল্টা বক্তব্য দেখা গেলেও হামলাকারীদের শাস্তির নজির খুব একটা নেই। হিন্দুদের বাড়িঘর এবং মন্দিরে হামলা, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনাগুলো বিভিন্ন সময় দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়েছে।
পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরকে দায়ী করেছে। কিন্তু বিচার নেই। মানবাধিকার আইনজীবি জেড আই খান পান্না মনে করেন বিভিন্ন সময় হিন্দুদের উপর আক্রমনের ঘটনাগুলো রাজনীতির আবর্তে হারিয়ে গেছে।
জেড আই খান পান্না বলেন, হিন্দুদের উপর যে হামলা হয় তার প্রতিটির পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি কাজ করে। উদাহরনস্বরুপ পান্না বলেন, ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর এবং ২০০১ সালের নির্বাচনের পর হিন্দুদের উপর আক্রমনের ঘটনা ঘটে। এছাড়া ২০১৩ সাল এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পরে বিভিন্ন জায়গায় হিন্দুদের উপর আক্রমনের ঘটনা।
তিনি বলেন , রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে এসব হামলা হয় বলে এর কোনো বিচার নেই। নিন্দা জানানো এক বিষয় আর বিচার করা ভিন্ন বিষয়।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দুদের বাড়িঘর এবং মন্দিরে হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটে। মূলত ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে মানবতা বিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা হয়। এজন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দোষারোপ করেছে জামায়াতে ইসলামীকে। সাথে বিএনপিকেও। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপি পাল্টা বলেছে সরকার দলের নেতা-কর্মীরা হিন্দুদের বাড়িতে আক্রমণ করে বিরাধীদের উপর দোষ চাপাচ্ছে।
বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের একজন নেতা সুব্রত চৌধুরী বলেন, সংখ্যলঘুদের উপর আক্রমণের ঘটনা ঘটলে সেটা এখন রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের উপর দোষ চাপানোর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। হামলাকারীদের বিচারের আওতায় না আনার একটি সংস্কৃতি চালু হয়ে গেছে।
সুব্রত চৌধুরী বলেন, এখন যেমন বলা হচ্ছে জামায়াত-শিবির এটা করেছে। এটা একটা শ্লোগান হয়ে গেছে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সব জায়গায় জামায়াত-শিবির করেছে বিষয়টি এ রকম না। অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগের লোকজনও জড়িত হয়েছে সেটা আমরা দেখতে পেয়েছি।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, যদি জামায়াত-শিবিরই হামলা করে থাকে বা আর যেই করুক না কেন, সরকার কেন তাদের বিচার করছে না? সুব্রত চৌধুরী বলেন, হামলার ঘটনা বন্ধ করেতে প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা ব্যর্থ হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন সময় হিন্দুদের উপর হামলার বিচার না হলেও এবারে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর হামলাগুলোর বিচার হবে কিনা সেদিকে অনেকে নজর রাখছে।
ঢাকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনায় সরকার জিরো টলারেন্স বা কোন ছাড় না দেবার নীতি অনুসরণ করবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামালউদ্দিন আহমেদ জানান, হিন্দুদের উপর হামলাগুলোর বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য বিভিন্ন জেলার পুলিশকে এরই মধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কামালউদ্দিন আহমেদ জানান, প্রয়োজনে আইন অনুযায়ী দ্রুত বিচারের উদ্যোগ নেয়া হবে। কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিচ্ছেন প্রত্যেকটি হামলার ঘটনার আলাদা আলাদা মামলা হবে।
পাশাপাশি ২০০১ সালের নির্বাচনের পর এবং বিভিন্ন সময় হিন্দুদের উপর আক্রমণের ঘটনাগুলোর বিচারের জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যায় কিনা সেটিও সরকার খতিয়ে দেখছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
আরও পড়ুন

সর্বশেষ