রবিবার, মে ৫, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনদুই মাসের মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালু হবে : রেলমন্ত্রী

দুই মাসের মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালু হবে : রেলমন্ত্রী

আগামী দুই মাসের মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালু হবে (কমিউটার ট্রেন) বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম। পুরোনো কালুরঘাট সেতু মেরামত করা হচ্ছে, মার্চের মাঝামাঝিতে এ সেতুতে যান চলাচল শুরু হবে বলে জানান মন্ত্রী। নতুন কালুরঘাট সেতু প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী বলেন, কালুরঘাট রেল সেতুর সমীক্ষা শেষ। কোরিয়ান অর্থায়নে নির্মাণ হবে নতুন সেতুটি। নদীর ওপর রেল সেতু চালু হতে সময় লাগবে চার থেকে পাঁচ বছর। বুধবার দুপুরে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের রেস্ট হাউসে রেলওয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। মন্ত্রী হওয়ার পর গত মঙ্গলবার রাতে দুইদিনের সফরে প্রথম চট্টগ্রাম আসেন রেলপথ মন্ত্রী জিল্লুল হাকিম। গতকাল বুধবার সকালে প্রথমে পলোগ্রাউন্ড মাঠে বাংলাদেশ রেলওয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন শেষে রেলওয়ে ভিআইপি রেস্ট হাউসে রেলওয়ের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন রেলপথ মন্ত্রী।

এসময় সাংবাদিকরা কক্সবাজার রুটে চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন চালুর ব্যাপারে মন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে রেলমন্ত্রী বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার ট্রেন চালু হবে। সেটা আন্তঃনগর নাকি কমিউটার ট্রেন –সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী বলেন, চারটা সূচি করে রেখেছি। দুই মাসের মধ্যে আমরা একটা চালু করব, সেটা কমিউটার ট্রেন। এখন আমাদের ইঞ্জিন, কোচ এবং চালকের সংকট প্রকট। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে তেল পরিবহন হয় ট্রেনে করে, যত খাদ্যশস্য, পণ্যবাহী কনটেনার, সব চট্টগ্রাম থেকে সাপোর্ট দিচ্ছে। এখন যদি আন্ত:নগর ট্রেন চালু করতে হয়, কনটেনার ট্রেন বন্ধ করে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালু করতে হবে। খুব শিগগিরই চালু করব।

এসময় রেলমন্ত্রী বলেন, আমরা যেভাবে হোক শুরু করি। যেটা অ্যাভেইলেবল হয়, সেটা আমরা শুরু করব। কক্সবাজার রুটে আগামী দুই মাসের মধ্যে একটি কমিউটার ট্রেন চালু করা হবে জানিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো লোকোমাস্টার সমস্যা। লোকোমাস্টার নিয়োগ করে শিগগিরই নতুন ট্রেন চালু হবে।

কালুরঘাটে রেলসেতু কবে নির্মাণ হবে–সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী বলেন, নতুন কালুরঘট সেতুর সমীক্ষা শেষ হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার ইডিসিএফ–এর অর্থায়নে কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করা হবে। কালুরঘাটের মতো ব্রিজ একটা নির্মাণ করতে তো সময় লাগবে। চার–পাঁচ বছরের মধ্যে ইনশাআল্লাহ চালু হয়ে যাবে।

রেলের ইঞ্জিন সংকট নিয়ে মন্ত্রী বলেন, অনেক ইঞ্জিন আমদানি করা হয়েছে। সেগুলো পেয়েছি। আরো ইঞ্জিন আমদানি হচ্ছে, কোচও আমদানি হচ্ছে। রেলপথ আরো সমপ্রসারিত হবে। প্রায় প্রত্যেক জেলায় রেল যাবে। রেল এখন দক্ষ কর্মীর অভাবে ভুগছে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, এক সময় রেলপথ বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি হয়েছিল। গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দিয়ে, তারপর সব লাইনগুলো বন্ধ করে দেয়। যেমন : আমাদের এলাকায় ফরিদপুর লাইন বন্ধ করে দেয়, লাইন তুলে ফেলাও শুরু করেছিল। রাজবাড়ীতে একটা লোকোশেড ছিল, সেটাও বন্ধ করে দিয়েছিল।

ওইসময় যারা গোল্ডেন হ্যান্ডশেকে চলে গিয়েছিল, ওই দক্ষ লোকগুলো আমরা তো পাচ্ছি না। এর মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী রেলের অনেক শ্রীবৃদ্ধি ঘটিয়েছেন। নতুন নতুন লাইন সমপ্রসারণ করেছেন। রেলে নতুন লোক নিয়োগ ও তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে জানিয়ে রেলপথ মন্ত্রী বলেন, একজন অনভিজ্ঞ মানুষকে দিয়ে তো ইঞ্জিন চালাতে পারব না। ট্রেন পরিচালনার জন্য গার্ড দরকার। অন্যান্য যে টেকনিক্যাল লোকজন দরকার, সেগুলোও নাই। লোকবল সংকট সমাধানে কী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে কয়েকটা বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে, বিভিন্ন বিভাগে লোকবল নিয়োগের জন্য। এরমধ্যে ৫ হাজারের মত নতুন নিয়োগ হয়েছে। এখন প্রশিক্ষণ পর্যায়ে আছে। তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

আমি এখনো শিক্ষানবীশ সাংবাদিকদের রেলওয়ে সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি এখনো শিক্ষানবীশ, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নতুন। আমি নতুন হলেও চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। রেল নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে পরিকল্পনা সেটি আমি বাস্তবায়ন করবো। রেলের পঙ্গু অবস্থা থেকে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। সকলের সহযোগিতায় রেল ব্যবস্থাকে নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে চাই।

রেলের জমি অবৈধ দখলে রাখার বিষয়ে আরেক প্রশ্নে রেলমন্ত্রী বলেন, রেলের জায়গা যে সুযোগ পায় সেই দখল করে। আমরা চেষ্টা করছি জায়গাগুলো উদ্ধার করার। দেখবেন অনেক প্রভাবশালী লোকজন দখল করে আছে। যাদের প্রয়োজন নেই, তারা দখল করে আছে।

তাদের বলব, অন্যায় করে মানুষ স্বস্তিতে থাকতে পারে না। আপানারা অবৈধ দখল ছেড়ে দেন। না হলে রেল বাধ্য হবে দখলমুক্ত করতে। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান, রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ