রবিবার, মে ১৯, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনচট্টগ্রামের মৌলিক চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে ঘাটতি : নওফেল

চট্টগ্রামের মৌলিক চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে ঘাটতি : নওফেল

শিক্ষা উপমন্ত্রী এবং চট্টগ্রাম–৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, চট্টগ্রামের মৌলিক চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে ঘাটতি। এই সমন্বয়ের ওপর জোর দিতে হবে। সিটি গভর্নমেন্টের আদলে কিন্তু একটা লিগ্যাল স্ট্রাকচার তৈরি হয়েছে সিটি কর্পোরেশন আইনের মধ্যে। যেখানে অন্যান্য সেবা সংস্থার প্রতিনিধিত্ব সাধারণ সভার মাধ্যমে আনার একটা স্ট্রাকচার আছে। কিন্তু বাস্তবে কাজ করতে গিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় এবং নির্বাচিত মেয়ররাই বেশি সমালোচনার শিকার হন। কিন্তু মেয়রের সমন্বয়ের ক্ষেত্রে লিগ্যাল ক্যাপাসিটির ঘাটতি আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আমরা কিছুটা কাজ করেছি শিক্ষার ক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিকেন্দ্রীকরণ করতে পেরেছি। অন্যান্য ক্ষেত্রে কীভাবে বিকেন্দ্রীকরণ করা যায়, যাতে স্থানীয়ভাবে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়। চাকরির জন্য সবাই ঢাকামুখী না হয়। তিনি বলেন, আমাদের এবারকার সুপারিশকৃত স্লোগান হচ্ছে, উন্নয়ন হয়েছে দৃশ্যমান, এবার হবে কর্মসংস্থান।

মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম সিনিয়রস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। চাকরির ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা অনেক বড় ব্যাপার মন্তব্য করে নওফেল বলেন, আমি সরকারে থাকি বা না থাকি যেকোনো সরকারি চাকরিজীবীর ক্ষেত্রে শৃঙ্খলাজনিত প্রক্রিয়ার বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে। রাজনীতিবিদ–ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা যা খুশি লিখতে পারেন। এটিই বাক্‌স্বাধীনতা। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনও চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু সেটি একজন সরকারি দপ্তরের চাকরিজীবীর বিরুদ্ধে করতে গেলে অনেক কঠিন। এ বিষয়টি আমাদের তুলে দেওয়ার প্রয়োজন আছে। সরকারি একজন কর্মচারী–কর্মকর্তার আচার ব্যবহার ও দক্ষতার ওপর কিন্তু জনগণের সন্তুষ্টি নির্ভর করে।

তিনি বলেন, ডা. দীপু মনি শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জয়েন্ট সেক্রেটারি। কিন্তু তার পক্ষেও একজন শিক্ষক, দপ্তরি বা কাউকে শৃঙ্খলার আওতায় আনা কঠিন কাজ। সে বিষয়টি নিয়ে একটি নিয়মের মধ্যে না আসলে কেউ পারবে না। জেলা প্রশাসকও পারবেন না। একদিন দেখা যাবে জেলা প্রশাসকও বদলি হয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে আমরা গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাই। কেন একজন সরকারি চাকরিজীবী সব ধরনের জবাবদিহির ঊর্ধ্বে থাকবেন? কেন তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পারব না? আমাদের গড়ে ৪ থেকে ৫ বছর লাগে বিভাগীয় মামলা শেষ করতে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের ব্যারিয়ারটা তুলে দিতে হবে। তাদের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার জায়গাটা আরেকটু সহজ করতে হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সংঘাত প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ১০ বছরের বেশি আন্ডার গ্র্যাজুয়েটে থেকে গেছেন, তারা ছাত্র না। যেহেতু তারা ছাত্র না তাদের বের করে দিতে হবে। তারা শিক্ষার আশপাশে নেই। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থেকে তারা গ্রুপ তৈরি করে। নেতার নাম ব্যবহার করে। তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না আমি জানি না। আমি এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স। মৌখিকভাবে বলেছি, নির্বাচনের পরে লিখিতভাবে জানাব।

প্রাথমিক শিক্ষায় আমাদের যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, নিম্ন মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শুধু ৭০০ সরকারি বিদ্যালয় রয়েছে। বাকি ৩০ হাজার প্রতিষ্ঠান বেসরকারি। অর্থাৎ যেখানে বেতন দিয়ে পড়াশুনা করতে হয়। সেটি কিন্তু জাতির পিতার শিক্ষানীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমরা দেখছি, প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণে প্রাথমিকে প্রায় শতভাগ এনরোলমেন্ট হচ্ছে। কিন্তু ১০ থেকে ১১ বছর বয়সে প্রাথমিকের পর্যায় শেষ হয়ে যায়।

শিক্ষার্থীদের ভর্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্কুলে ভর্তির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, শিশুকালে যে বয়সে তাদের ভর্তির জন্য যুদ্ধে নামতে হয় ওই বয়সে অনেক শিশুর মস্তিষ্ক ভালোভাবে বিকাশ ঘটে না। তারপরে তাদের ভর্তিযুদ্ধ নামে একটা অমানবিক প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হতো। সেটি আমরা মোটামুটি নিরসন করতে পেরেছি।

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকের সংকট রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে। আমাকে একটি বিষয় ব্যক্তিগতভাবে পীড়া দেয়। আমি শতভাগ আত্মসমর্পণ না করলেও পরাজিতের মতো অনুভব আছে। পরাজিত কেন? বাংলাদেশ সরকারের একটা বিশাল বাজেট শিক্ষাখাতের ওপর খরচ হয়। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার ওপর বেশি জোর দিচ্ছেন। কিছু কাঠামোগত বিষয়ে আমাদের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আমাদের শৃঙ্খলাজনিত প্রক্রিয়া এমনই যে, মন্ত্রীর পর মন্ত্রী চলে যাবে কিন্তু আপনি একজন দপ্তরিকেও সরাতে পারবেন না।

চট্টগ্রামে প্রস্তাবিত মিনি সেক্রেটারিয়েট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের সাবেক এক জেলা প্রশাসক এমন একটি প্রস্তাব দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমার উপলব্ধি সেক্রেটারিয়েট যত কম হয় তত ভালো। ইতোমধ্যে লালফিতার দৌরাত্ম্যে আমরা পর্যুদস্ত। আরেকটা লালফিতার পরে যে ওই লালফিতার দৌরাত্ম্য কমবে সেটির নিশ্চয়তা নেই। আমি বলেছিলাম এই প্রস্তাবনাটা দিয়েন না। এক্ষেত্রে পাবলিক কনসালটেশন হোক। তার চেয়ে দপ্তরগুলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়া এবং ডিজিটাল মাধ্যমে ই–নথির যথাযথ ব্যবহার করা উচিত। সেক্রেটারিয়েট মানে আরেকটা অবকাঠামো। সেখানে প্রস্তাবনায় আরেকটা বড় প্রকল্প গ্রহণ ও জমি অধিগ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আদৌ সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা থাকে কিনা সেটি প্রস্তাবনায় দেওয়া হয়নি।

চট্টগ্রামে হাই কোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের প্রস্তাব করার কথা উল্লেখ করে নওফেল বলেন, এটা সংবিধানেও আছে। সেটা করলে আমাদের চট্টগ্রাম নয়, সারা বাংলাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে যারা বিচারপ্রার্থী রয়েছেন তাদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সহায়ক হবে। বর্তমান যে কাঠামো, সেখানে আমরা জানি কারো মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হলে, বিত্তশালী হলে ঢাকায় গিয়ে রিট করে প্রতিকার পায়। কিন্তু বিত্তশালী না হলে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। ন্যায়বিচার প্রাপ্তি সাংবিধানিক অধিকার, সেক্ষেত্রে অনেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ব্যাংক, বীমাসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক সরকারি সদর দপ্তর ঢাকায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা সার্কুলার রয়েছে, ব্যাংকের সদর দপ্তর ঢাকায় হতে হবে। এটা বেশ অন্যায্য। প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে দপ্তর স্থাপন করতে পারে। সেক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের পরিধিও বাড়বে।

নগরে খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত চত্বরের গুরুত্ব তুলে ধরে নওফেল বলেন, খেলার মাঠ কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি উন্মুক্ত সবুজ চত্বর রক্ষা করতে হবে। ডিসি হিলে নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতে হবে। সার্কিট হাউসের সামনের শিশুপার্ক উচ্ছেদ করা হয়েছে।

শহরের এমপিদের বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ৩০০ জন এমপির মধ্যে ২০ জন শহরের এমপি রয়েছেন, অর্থাৎ যারা সিটি কর্পোরেশন এলাকার। ২৮০ জন যেসব বরাদ্দ পান শহরের এমপিরা তা পান না। এটা খুবই অমানবিক এবং অন্যায্য। অন্যান্য এমপির মতো কিছু বরাদ্দ পেলে সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে হোক বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হোক উন্নয়ন প্রকল্প এগিয়ে নেওয়া যেত। এটি অবশ্য ইশতেহারের বিষয় নয়, আমি আলাদাভাবে বলেছি। আগামী ২৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ইশতেহার ঘোষণা করা হবে।

নগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান ও চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, দপ্তর সম্পাদক হাসান মাহমুদ শমসের, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক চন্দন ধর, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান, মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক জালালউদ্দিন ইকবাল, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আবু তাহের, চিটাগাং সিনিয়রস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ডা. সেলিম আখতার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ