বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪
প্রচ্ছদআরো খবর......৫ নভেম্বর ক্যান্সার হাসপাতাল উদ্বোধন করবেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী

৫ নভেম্বর ক্যান্সার হাসপাতাল উদ্বোধন করবেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের পাশে প্রায় ১শ ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে চালু করা হচ্ছে হাসপাতালটি

চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশার চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল (চমাশিহা) ক্যান্সার হাসপাতাল আগামী ৫ নভেম্বর চালু হচ্ছে। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের পাশে প্রায় ১শ ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে চালু করা হচ্ছে হাসপাতালটি। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বিশেষায়িত এই হাসপাতালে রেডিওথেরাপিসহ ক্যান্সারের সব ধরনের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হবে। ওইদিন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের হাসপাতালটি উদ্বোধন করার কথা। দেশে ক্যান্সারের বিস্তার ঘটছে। চট্টগ্রামেও প্রতিদিন বাড়ছে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। অথচ ক্যান্সারের পর্যাপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ কোনো চিকিৎসা চট্টগ্রামে নেই বললেই চলে। বৃহত্তর চট্টগ্রামে দুই কোটি মানুষের মধ্যে ৫ লাখের বেশি মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত। বছরে গড়ে পঞ্চাশ হাজারের বেশি নতুন রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ১৩৬ জন মানুষ নতুনভাবে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পরিস্থিতিতে আছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালে কিছু মানুষ চিকিৎসা নিতে এলেও অনেক মানুষ রয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসার বাইরে। অনেক রোগী ভারত, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরসহ নানা দেশে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কেমোথেরাপি দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও তা অপ্রতুল। মাসের পর মাস সিরিয়াল দিয়েও অপারেশন বা কেমোথেরাপি দেওয়ার সুযোগ পাওয়া যায় না। রেডিওথেরাপি তো দূর অস্ত। কেমোথেরাপিসহ ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য মানুষকে নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। প্রাইভেটেও কেমোথেরাপি দেওয়ার ব্যবস্থা অপ্রতুল। ফলে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছে। কেমোথেরাপির অবস্থা যেন–তেন হলেও রেডিওথেরাপির সুযোগ নেই বললেই চলে। চমেক হাসপাতালে রেডিওথেরাপির ব্যবস্থা থাকলেও বেসরকারি কোনো হাসপাতালে এই ব্যবস্থা নেই। চমেক হাসপাতালে মাসের পর মাস ঘুরেও রেডিওথেরাপির সিরিয়াল পাওয়া যায় না। ঢাকায়ও সিরিয়ালের জট। সাত–আট মাস অপেক্ষা করার পর রেডিওথেরাপির তারিখ পড়ে। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে রেডিওথেরাপির নির্দিষ্ট তারিখ আসার আগেই মৃত্যুর পরোয়ানা চলে আসে। বিদ্যমান অবস্থায় বিত্তবানেরা দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিলেও সাধারণ মানুষের অবস্থা শোচনীয়।

চট্টগ্রামে ক্যান্সার চিকিৎসার সার্বিক অবস্থা নাজুক বলে বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করেছেন। এই অবস্থায় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল বিশ্বমানের একটি হাসপাতাল গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। হাসপাতালের পাশে সরকার থেকে পাওয়া ১০ কাঠা জমিতে ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্যান্সারের পূর্ণাঙ্গ একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার এই উদ্যোগে অংশ নেয় চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ। দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেককে চেয়ারম্যান করে ১০১ সদস্যের ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি দেশে–বিদেশে মানুষের কাছ থেকে হাসপাতালের জন্য আর্থিক অনুদান সংগ্রহসহ নানাভাবে কাজ করে। দশ টাকা থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত দান করে মানুষ। মানুষের টাকায় মানুষের জন্য এই ক্যান্সার হাসপাতাল অবশেষে চালু হচ্ছে।

হাসপাতালের জন্য ৮০ হাজার বর্গফুটের ১০ তলা ভবন নির্মিত হয়েছে। মানুষের অনুদানের সাথে ব্যাংক ঋণ নিয়ে আমদানি করা হয়েছে ক্যান্সার চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি। ইতোমধ্যে রেডিওথেরাপিসহ ক্যান্সার চিকিৎসার বিভিন্ন যন্ত্রপাতির স্থাপন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সিমেন্স কোম্পানি থেকে হাসপাতালের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব মেশিনের অপারেটরদের ভারতে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে প্রশিক্ষিত লোকবল হাসপাতালের যন্ত্রপাতি পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন।

সবকিছু ঠিকভাবে গুছিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ৫ নভেম্বর সকাল ১০টায় ক্যান্সার হাসপাতাল উদ্বোধন করা হবে। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ হাসপাতাল প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করবেন।

ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির সেক্রেটারি রেজাউল করিম আজাদ হাসপাতাল বলেন, আমাদের প্রস্তুতি একেবারে শেষ পর্যায়ে। চট্টগ্রামে বেসরকারি উদ্যোগে সর্বপ্রথম ক্যান্সার চিকিৎসার পূর্ণাঙ্গ একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হলো। এই হাসপাতালে ক্যান্সারের বিশ্বমানের চিকিৎসা সুবিধা মিলবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ