বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনচট্টগ্রাম মেডিকেলে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘট চলছে

চট্টগ্রাম মেডিকেলে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘট চলছে

CTG STRIKEএক শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের উপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের টানা কর্মবিরতি চলছে।

এতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী ও রোগীর স্বজনদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ছাড়া সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়ায় এ দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও কর্মবিরতির কর্মসূচি আহবানকারীরা দাবি করছেন, কর্মবিরতির কারণে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে চমেক শাখা ছাত্রলীগ ও ছাত্র সংসদ এবং হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের সংগঠন ইন্টার্নি ডক্টরস এসোসিয়েশন (আইডিএ)

এদিকে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের পাঁচলাইশ জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আবদুর রউফ।

প্রসঙ্গত গত শনিবার সকালে নগরীর মেহেদীবাগের ন্যাশনাল হাসপাতালের দুর্বৃত্তরা সামনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক সোহেল পারভেজ সুমনকে কুপিয়ে আহত করে। চমেক শাখা ছাত্রলীগ ও ছাত্রসংসদ এবং আইডিএ এ হামলার ঘটনার জন্য ছাত্রশিবিরকে দায়ী করে।

সুমনের উপর হামলাকারী ছাত্রশিবিরের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শনিবার সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ছাড়া সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ও ছাত্রসংসদের নেতাকর্মীরা। এরপর শনিবার দুপুরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করে আইডিএ।

দুর্ভোগে রোগী তাদের স্বজনেরা:

শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী ও তাদের স্বজনেরা।

কয়েকটি ওয়ার্ডের রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলা জানা গেছে, কর্মবিরতির কারণে দু’দিন ধরে রোগীদের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে।

এদিকে একটি ছাড়া হাসপাতালের মূল ফটকসহ সবক’টি প্রবেশদ্বারে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে ভোগান্তির মাত্রা আরও বেড়েছে।

শনিবার সকালে হাসপাতালে মেয়েকে ভর্তি করান নগরীর শেরশাহ কলোনির বাসিন্দা গিয়াসউদ্দিন। রোববার সকালে  জানান, একটি ছাড়া হাসপাতালের প্রত্যেকটি ফটক তালাবদ্ধ। এতে আসা-যাওয়ায় কষ্ট হচ্ছে। মেয়ের জন্য ঔষধ-পথ্য আনতে অনেক দূর ঘুরে বাইরের ফার্মেসিতে যেতে হয়। এ কারণে সময়মত ঔষধ নিয়ে আসা সম্ভব হয়না।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, অন্যসব ফটক তালাবদ্ধ থাকায় রোগী ও তাদের স্বজনদেরকে বাধ্য হয়ে জরুরি বিভাগের ফটক ব্যবহার করতে হচ্ছে। স্বাভাবিকের তুলনায় ওই ফটকে এখন প্রচন্ড চাপ পড়ছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় এ ফটকে রোগী ও তাদের স্বজনদের অস্বাভাবিক ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে।

আবার হাসপাতালের রোগী ভর্তির প্রাথমিক কার্যক্রম এ বিভাগে সম্পন্ন হয়। অত্যাধিক ভিড়ের কারণে রোগী ভর্তির কার্যক্রম বিঘ্ন ঘটছে বলে জানান চমেক পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত এক সদস্য।

শিশুকন্যাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন  সাইয়েদ মাহুমদ। তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন,‘সবক’টি তালা ঝুলিয়ে দেয়ায় অনেক পথ ঘুরে ওয়ার্ডে যেতে হচ্ছে। আবার ওয়ার্ডে গিয়ে অনেক সময় ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’

হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল খন্দকার শহিদুল গণি  বলেন, ‘হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমের ‍সামান্যতম কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’

তবে তিনি বলেন, ‘রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের সহযোগিতা প্রয়োজন।তাদের সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা চলছে। আশা করি তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবে।’

হাসপাতালের পরিচালক জানান, হাসপাতালে বর্তমানে ২০৪৬ জন রোগী ভর্তি আছেন এবং তাদের জন্য প্রায় এক হাজার চিকিৎসক হাসপাতালে নিয়োজিত আছেন।

মানববন্ধন মিছিল:

এদিকে শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ও সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল পারভেজ সুমনের উপর হামলাকারী ছাত্রশিবিরের ক্যাডারদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রোববার সকালে মিছিল ও মানববন্ধন করেছে ছাত্রলীগ, ছাত্রসংসদ ও আইডিএ।

তাদের মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করেন বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।

বিএমএ সভাপতি মুজিবুল হক সাংবাদিকদের বলেন, সুমনের উপর হামলাকারী চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।

ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সভাপতি মেজবাহুল ইসলাম বলেন, ‘চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করছি।’

হাসপাতালের বিভিন্ন ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘আমরা প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে হাসপাতালের বিভিন্ন ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি। তবে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য জরুরি বিভাগের ফটক খোলা রেখেছি।’

আইডিএ’র ‍আহবায়ক রাশেদুর রেজা সানি জানান, হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত কর্মবিরতি কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তবে রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম যাতে বিঘ্নিত না হয় এজন্য একটি জরুরি টিম গঠন করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. শেখ সাহবুদ্দিন আহমেদ বলেন, চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটার মত কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। হাসপাতালের কার্যক্রম অন্যান্য দিনের মতই চলছে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ