মঙ্গলবার, মে ৭, ২০২৪
প্রচ্ছদআরো খবর......চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধ উপায়ে শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধ উপায়ে শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা

নাহিদ উল আলম, চবি প্রতিনিধিঃ (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত পদার্থ বিদ্যা, ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে কোরাম পূরন না করেই প্ল্যানিং কমিটির সভায় শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। প্ল্যানিং কমিটির ছয় সদস্যের মধ্যে একজন সদস্যের উপস্থিতিতে শিক্ষক নিয়োগের এই প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। করেছে। আর এতে আপত্তি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিষ্ট্রারের কাছে চিঠি দিয়েছে স্বয়ং প্ল্যানিং কমিটি বেশির ভাগ সদস্য।

১৯৭৩ এর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এ অধ্যাদেশ অনুযায়ী কোনো বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন হলে বিভাগের প্ল্যানিং কমিটিতে এ নিয়ে সভা আহ্বান করা হয়। এ অধ্যাদেশের ৯ ধারা অনুযায়ী প্ল্যানিং কমিটির সভার চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ। প্লানিং কমিটির সভার কোরাম পূরণ করতে কমিটির অর্ধেক সদস্যের অংশগ্রহন নিশ্চিত করার কথাও এ ধারাতে উল্লেখ রয়েছে। প্ল্যানিং কমিটির কোরাম পূর্ণ হলেই সভা পরিচালনা করে এজেন্ডা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। সে সিদ্ধান্ত আলোকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করবে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এসব নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে চবির ফলিত পদার্থবিদ্যা, ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন প্রসঙ্গে চবির ফলিত পদার্থ বিদ্যা, ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির কাছে মতামত চায়। গত ২৩ জুলাই বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির ১৮১ তম সভায় বিভাগে প্ল্যানিং কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বিভাগে পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকায় কোন শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়ে একটি সুপারিশ রেজিষ্ট্রার দফতরে পাঠানো হয়। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই বিভাগে একজন শিক্ষকের নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেয়। বিজ্ঞাপন অনুযায়ী গত ৩০ সেপ্টেম্বর আবেদনের সময়সীমা শেষ হয়ে যায়। প্রার্থীদের যোগ্যতা ও ফরম যাচাই বাছাই করতে বিভাগের সভাপতি ড. শংকর লাল সাহা ২ অক্টোবর প্ল্যানিং কমিটির সভা আহ্বান করেন। প্ল্যানিং কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের পরও শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করায় বিভাগের শিক্ষকরা প্ল্যানিং কমিটির সভা আহ্বান এর বিরোধীতা করেন। তাদের আপত্তির মুখে সভাপতি এ সভা বাতিল করেন। এরপর তিনি পুনরায় ৫ অক্টোবর প্ল্যানিং কমিটির সভা আহ্বান করেন। এ সভায় প্ল্যানিং কমিটির ছয় জন সদস্যের মধ্যে শুধুমাত্র উপস্থিত ছিলেন প্রভাষক প্রতিনিধি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী। এই একজন সদস্যকে নিয়েই বিভাগের সভাপতি প্ল্যানিং কমিটির ১৮২তম সভা পরিচালনা করেন।

সভা থেকে পরদিন ৬ অক্টোবর পুনরায় প্ল্যানিং কমিটির সভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশের ৯ ধারা অনুযায়ী নূন্যতম তিন দিন আগে এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের মতামত নিয়ে প্ল্যানিং কমিটির সভা আহ্বান করতে হয়। কিন্তু কমিটির ১৮২ তম সভার আগে এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের মতামত নেওয়া ছাড়াও কমিটির কোন সদস্যকে উপস্থিত থাকতে পূর্ব নোটিশও দেওয়া হয়নি। ফলে সভায় দেখা দেয় কোরাম সংকট। প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের অনুপস্থিতিতে মাত্র একজনকে সদস্যকে নিয়ে বিভাগের সভাপতি শিক্ষক নিয়োগের বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এবং এর কার্য বিববরণী ও সিদ্ধান্ত বিভাগ থেকে রেজিষ্ট্রার দফতরেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রেজিষ্ট্রার দফতর প্ল্যানিং কমিটির সভার কার্য বিবরণীর উপর ভিত্তি করে এ বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য আগামী ১০ অক্টোবর সিলেকশন বোর্ড আহ্বান করে। ছয়জন সদস্যের মধ্যে মাত্র একজন সদস্যের উপস্থিতিতে কোরাম পূর্ণ না করে প্ল্যানিং সভা করার বৈধতা নেই উল্লেখ করে এবং ১৮২ তম প্ল্যানিং সভাকে অবৈধ উল্লেখ করে রেজিষ্ট্রার দফতরে চিঠি দিয়েছে বিভাগের প্ল্যানিং সভার বাকি চার সদস্য। এ চার সদস্যরা হলেন অধ্যাপক ড. রেজাউল হক খান, ড. জামাল উদ্দীন আহমেদ, ফজলুল কাদের ও মোরশেদুল হক। চিঠিতে কোরাম সংকট থাকায় এ অবৈধ প্ল্যানিং কমিটির সভার সিদ্ধান্তগুলোর কার্যকারিতা বাতিলের অনুরোধ জানানো হয়। এ প্রসঙ্গে বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সদস্য ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ ও মোরশেদুল হক বলেন, প্ল্যানিং কমিটির সভায় ছয় সদস্যের মধ্যে মাত্র একজন সদস্যকে নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা অবৈধ। তাই আমরা প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের বাদ দিয়ে অনুষ্ঠিত এই অবৈধ সভার কার্য বিবরণী বাতিলের আবেদন জানিয়ে রেজিষ্ট্রারের কাছে চিঠি দিয়েছি।’ এ প্রসঙ্গে বিভাগের সভাপতি ড. শংকর লাল সাহা বলেন, ইচ্ছে করেই দল বেঁধে প্ল্যানিং কমিটির সদস্যরা সভায় অনুপস্থিত ছিল। বিভাগকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতেই তারা এমন করেছে। এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার সফিউল আলমের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ