বুধবার, মে ১, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়বিদেশী মহলে ধরনা দিয়ে বেড়াচ্ছে প্রধান বিএনপি, নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে আ'লীগে

বিদেশী মহলে ধরনা দিয়ে বেড়াচ্ছে প্রধান বিএনপি, নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে আ’লীগে

ষ্টাফরিপোর্টার  (বিডিসময়২৪ডটকম)

নির্বাচন অনিশ্চয়তা থাকলেও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। ইতমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে খসরা প্রার্থী তালিকা। এর বিপরীতে লেজে-গোবরে দল ও জোট নিয়ে আন্দোলনে সুবিধা করতে না পেরে বিদেশী মহলে ধরনা দিয়ে বেড়াচ্ছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে ঘন ঘন বৈঠক করে নানা বিষয়ে সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ জানাচ্ছেন দলটির সিনিয়র নেতারা।

বছর খানেক সময় হাতে রেখেই আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে দলকে গুছিয়ে নিতে মাঠ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময় করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। গত ২ মাসে দলের কেন্দ্রীয় নেতা, সাংসদ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক নানা ধরনের বৈঠক করেছেন শেখ হাসিনা। দলের প্রেসিডিয়াম ও জাতীয় কমিটির নেতাদের সাথেও বৈঠক করে চলেছেন দলীয় প্রধান।

এর পাশাপাশি সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব ঘোচানোর উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেন গুপ্তদের দলের নানা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পাশেও এখন নিয়মিত দেখা যাচ্ছে এসব নেতাদের।

দলের একজন নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন, এ সবই হচ্ছে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে। দলের এসব কর্মকান্ডকে আগামী নির্বাচনের ‘ওয়ার্মআপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন দলের শীর্ষ নেতারা। তার বলেছেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো পথে আমাদের ক্ষমতায় আসার সুযোগ নেই। তাই নির্বাচনকে সামনে দলকে শক্তিশালী করার কর্মসূচি চলছে। পাশাপাশি বিরোধি দলের আন্দোলন সংগ্রাম মোকাবেলায়ও দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে আন্দোলনে ‘ফ্লপ’ বিএনপির নির্বাচনের কোনা প্রস্তুতিই নেই। লংমার্চ, মহাসমাবেশ, হরতালের মতো কর্মসূচি দিয়েও সরকারের টনক নড়াতে পারেনি ৫ বছরে। দলীয় কোন্দল, কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের ব্যাপক মাত্রায় রাস্তায় নামাতে না পারা এবং পুলিশের মারমুখী আচরণের কারণে কোনো আন্দোলনই সফল করতে পারেনি প্রধান বিরোধী দল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিপরীতে ১৮ দলীয় জোট করেও পরিস্থিতির কোনো হেরফের হয়নি। নাম সর্বস্ব দল নিয়ে গড়া এ জোটকে বোঝা বলেই মনে করছেন বিএনপির অনেক নেতা। আন্দোলনে কর্মী-সমর্থকহীন এসব দলের ভূমিকা একবারেই গৌণ। সভা-সমাবেশে বক্তার সংখ্যাই বাড়ে শুধু। ফলে বিরোধী দলের মূল দাবি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও সরকারকে রাজি করাতে পারেনি এখনো।

এ অবস্থায় শেষ ভরসা হিসেবে বিদেশী মহলে ধরনা দেয়ার কৌশল বেছে নিয়েছে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার ইস্যুতে তারা বারবার ছুটে যাচ্ছেন ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশী কূটনীতিকদের কাছে। সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ জানাচ্ছেন। দাবি আদায়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির অনুরোধ জানাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার জন্য সমর্থন চাইছেন। গত ২ মাসে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক মিলিয়ে ঢাকার বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে এরকম ১০টিরও বেশি বৈঠক করেছেন বিএনপির নেতারা।
সম্প্রতি ভারতকে তোষামত করে জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্যও দিয়েছেন বিরোধি দলীয় নেত্রী। ভারতের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক ও দাতা সংস্থার প্রধানদের সাথে নিয়মিত বৈঠক করে চলেছেন বিরোধী দলীয় নেতা।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, বিগত বিএনপি-জামাত সরকারের আমলে ক্ষমতাসীন মহলের প্রশ্রয়ে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশের মাটি। এ নিয়ে ভারত সরকার তাদের ওপর চরম নাখোশ। আর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ভারতীয় চরমপন্থীদের এদেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। ফলে আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যগত মিত্র কংগ্রেস সরকার বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীর করতে আগ্রহী। বাংলাদেশের এই বৃহৎ প্রতিবেশীর মনোভাব বুঝতে পেরেই তাদের মন গলাতে দিল্লি ছুটে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। দিয়েছিলেন ভারতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতিটি। কিন্তু ভারত সরকারের তাতে মন গলেনি। এরপরই অন্যদেশের দিকে ধাবিত হয় বিএনপি।

তবে বিদেশী মহলে বিএনপির এই দৌড়ঝাঁপ কতোটা ফল দেবে তা নিয়ে যেমন সন্দিহান সচেতন মহল- তেমনি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রস্তুতির তোড়জোড় বিরোধী দলকে মনস্তাত্ত্বিক চাপে ফেলার কৌশল বলেও মনে করেন অনেকে। জানাগেছে, বিরোধী দলকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার পাশাপাশি নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত থাকবে আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ